ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

প্রিয়ভাষিণী: লাল টিপে উঁকি দেয় বাংলাদেশ

দীপংকর গৌতম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রিয়ভাষিণী: লাল টিপে উঁকি দেয় বাংলাদেশ

ছবি: বিপ্লব জাফর

|| দীপংকর গৌতম ||

মমতায় বুক জুড়িয়ে যায়। প্রথম দেখাতেই একজন মায়ের সাক্ষাৎ বলে মনে হয়। বড় লাল টিপে আবৃত ললাট। গলায় বহু বর্ণের মালা। কণ্ঠে সত্যের স্পষ্ট উচ্চারণ। মানুষটির নাম ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পৈশাচিক বর্বরতার শিকার হয়েছিলেন। সেই থেকে বাংলাদেশের নির্যাতিতা মা-বোনের উত্তরাধিকার বহন করে চলা তিনি এক সংশপ্তক। এই মহীয়সী লোকলজ্জা আর সামাজিক ভয় অগ্রাহ্য করে অকপটে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতার কথা জাতির সামনে তুলে ধরেছিলেন। এজন্য তাকে মূল্যও দিতে হয়েছে। অবহেলা, গঞ্জনা-বঞ্চনার চূড়ান্ত রূপ সহ্য করতে হয়েছে। তারপরও তিনি হার মানেননি। দেশের বহু মানুষের কাছে এ কারণে তিনি মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত ইতিহাস।

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর জীবন, শিল্প, সংগ্রামের অনন্য অধ্যায় বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম। তাঁর জন্ম খুলনায় । বিয়েও হয় সেখানে। স্বামী কোনো কাজ করতেন না। ইতিমধ্যে সন্তানের মা হয়েছেন প্রিয়ভাষিণী৷ পরিবারের খরচ, সন্তানের খরচ সেই সাথে স্বামীর পড়ার খরচ- সব মিলিয়ে তীব্র অর্থ কষ্ট দেখা দেয়। ধার-দেনা যতটুকু করা সম্ভব সবই হয়েছে৷ তখন আর কেউ ধার দিতে চাইতো না৷ তাই প্রিয়ভাষিণী চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেন৷ ১৯৬৩ সালে খুলনার আগা খান স্কুলে মাত্র ৬০ টাকা বেতনে চাকরি নেন। পরে স্কুলের চাকরি ছেড়ে মিলে টেলিফোন অপারেটরের কাজ নেন তিনি৷ কিন্তু এত কিছুর পরও স্বামীর সাথে সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে থাকে৷ স্বামীকে ছেড়ে হয়তো তখনই চলে আসতেন। কিন্তু ভাবলেন, সে তো তাঁর ওপর নির্ভরশীল। আশ্রিত ব্যক্তিকে ফেলে চলে যাওয়া যায় না। ফলে স্বামীর পড়ালেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে কষ্ট স্বীকার করে একসঙ্গে থাকতে হলো। এক সময় স্বামীকে তিনি ইঞ্জিনিয়ার বানালেন। যদিও জানতেন তার সাথে বসবাস করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না৷ এত অল্প বয়সেই এ রকম পরিণত বিবেক এবং বলিষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন প্রিয়ভাষিণী। এরপর ১৯৭১ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

একদিকে সংগ্রামী জীবন, অন্যদিকে শিল্পচর্চায় কেটেছে জীবনের অনেকটা পথ। সেই পথের শেষ প্রান্তে তিনি এখন। সংগ্রামে ক্লান্তিহীন সেই জীবনের দিনগুলো এখন প্রায় সময়ই কাটে হাসপাতালের বেডে। যে বাড়ি তিনি নিজ হাতে সাজিয়েছিলেন, সেখানে আজ সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর বাড়ির পরিবেশ দেখলে যে কারো মনে হবে, তিনি প্রকৃতির পরিব্রাজক। শিল্পমাধ্যম ভাস্কর্যের সুষমায় সাজিয়েছেন চোখের চতুষ্কোণ। মৃত্তিকাসংলগ্ন মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ এই শিল্পী তাঁর শিল্পকর্মের মধ্যেই বুঝিয়ে দেন দেশপ্রেম। তিনি শিল্পকর্মের প্রচ্ছন্ন অবয়বে বিভাষিত বিন্যাসের সন্ধান করেন। তারপর সেই অবয়বে বোধ আর শিল্পিত রূপকল্পের সম্মিলন ঘটিয়ে অমর্ত্য রূপ প্রদান করেন। সেই রূপে বেগ থাকে, আবেগ থাকে, প্রণয় থাকে, মায়া থাকে, বেদনা থাকে, আলোড়ন থাকে। এই সম্মিলনের একমাত্র কারণ তাঁর অভ্রান্ত অনুভূতি।

প্রিয়ভাষিণী নির্মাণশৈলীর মাধ্যম হিসেবে ভাস্কর্যকে আমাদের সামনে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব শিল্পরীতি কাটুম-কুটুমের এক সফল প্রবক্তা তিনি। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুকনো পাতা, গাছের টুকরো বা ডাল, বৃক্ষের মোটিভ নিয়ে শিল্পরীতির যে নব বিন্যাস করেন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী তাঁর শিল্পকর্মের মধ্যে সে বাস্তবতা নিয়ে কাজ করেছেন ও সফল হয়েছেন। তিনি নিজেই এক প্রতিষ্ঠান। এস এম সুলতানের হাতে তাঁর প্রথম স্বীকৃতি। সুলতান ছিলেন মাটির শিল্পী, মানুষের শিল্পী। তাঁর চোখেই ধরা পড়ে প্রিয়ভাষিণীর এই শিল্পগুণ। অতি তুচ্ছ বিষয়কে আশ্রয় করে তিনি যা সৃজন করেন তা শিল্পগুণে ও সৃজনধর্মীতায় হয়ে ওঠে অসামান্য। তিনি স্মৃতি ভেজা কণ্ঠে বলেন, বাসার সামনে দিয়ে সারাদিন সুর করে ডাকতে ডাকতে ফেরিওয়ালা চলে যেত৷ কি এক অমোঘ আকর্ষণে তিনি চলে যেতেন তাদের কাছে৷ আসতো বায়স্কোপওয়ালা, নানা রকম ছবি দেখাত৷ রানীর ছবি, তাজমহল, নায়িকাদের ছবি- আরো কত কি! পাঁচটা ছবির জন্য দিতে হতো পাঁচ পয়সা৷ ছোট্ট প্রিয়ভাষিণীর মন মানতে চাইতো না৷ সময় শেষ হলেও তিনি নড়তেন না বায়স্কোপের সামনে থেকে৷ তাঁর চোখ আটকে থাকতো ছবির উপর৷

ছোটবেলায় ছবির প্রতি আটকে থাকা সেই চোখ দিয়েই তিনি পরবর্তী সময়ে প্রকৃতির মাঝে খুঁজে পেয়েছেন এক শৈল্পিক রূপ৷ প্রকৃতির মগ্নতার মাঝেই তাঁর চিন্তার মূর্তরূপ ফুটিয়ে তুলেছেন। নিতান্তই তুচ্ছ গাছের ডাল, শেকড় আর পরিত্যক্ত কাঠের টুকরা, পোড়া কাঠ, শেওলা ধরা ভাঙা বাঁশের টুকরা, অযত্নে বেড়ে ওঠা কোনো গাছের মাঝে তিনি আবিষ্কার করেন নানা শৈল্পিক অবয়ব৷ তাঁর মায়াময় হৃদয়ের ছোঁয়ায় এই সব পরিত্যক্ত সামগ্রী হয়ে ওঠে স্নিগ্ধতায় ভরা এক একটি শিল্পকর্ম৷ শুধু তাঁর শিল্পকর্মই নয়, সংগ্রামী জীবন আর গভীর জীবন বোধের কারণেও তিনি সমাদৃত৷ তীব্র বঞ্চনাবোধ আর যুদ্ধময় জীবন৷ তিনি নিজেই বলেছেন শিল্পী হিসেবে তাঁর উত্থানপর্বের সময়ের কথা:

‘আমি ১৯৭৪ কিংবা ৭৫-এর  কথা বলছি। আমি বসে বসে দেখতাম চারপাশের দৃশ্য। আর ভাবতাম গৃহিণীদের মতো একটা জীবন কাটিয়ে দেব- এটা কেমন হয়? কিছু একটা করা দরকার। এসব ভাবতে ভাবতে একটা ঘটনা ঘটে। সিলেটে আমার ডাইনিং টেবিল থেকে চেরাপুঞ্জি পাহাড়টার রং বদলানোর দৃশ্যটা দেখা যেত। আলো যত বদলাতো পাহাড়ের রংটাও বদলাতো। কখনো ও-পারে আধা ঘণ্টা বেশি তো, এ-পারে আধা ঘন্টা কম। দেখতাম চেরাপুঞ্জি রং বদলাতে বদলাতে সোনালী একটা পারের মতো তৈরি হচ্ছে। সূর্যের আলো ঠিকরে পড়লে এটার রং রেখায়, দৃশ্যে নতুন রূপ তৈরি হতো। এরপর আমি কল্পনার মধ্যে কখনও নেভি-ব্লু কালারে একটা পাহাড় ভাবতাম। ভাবতে ভাবতে এখানে বসে খেতাম। আর দেখতাম আমার জীবনের দৃশ্যবদল।’

জীবনের তীব্র বঞ্চনাবোধ থেকেই বের হয়ে এসেছে প্রিয়ভাষিণীর শিল্প ধারা৷ ১৯৭৭ সালে তিনি নিজেকে আবার ফিরে পেলেন৷ উপলব্ধি করলেন, না একটা কিছু করতে হবে৷ কিন্তু হাজার মানুষের মাঝে তাঁর একাকীত্ব তাঁকে পেয়ে বসতো৷ প্রকৃতির মাঝে যে মৌনতা আছে, যে একাকীত্ব আছে তাই আবার বহুকাল পরে তাঁকে টেনে নিল৷ তাঁর বিষণ্নতা, মোহময়তা নানা ছবি গড়ে তুলতে শুরু করলো৷ তখনই তিনি ঝরা পাতা, মরা ডাল আর গাছের গুড়িতে অবয়ব খুঁজে পেলেন৷ বিষণ্নতা তাঁর খুব ভালো লাগে। প্রকৃতির মগ্নতার মাঝে তাই তিনি চিন্তার মূর্তরূপ খোঁজেন৷ স্বামীর চাকরির কারণে যখন গ্রামে থাকতেন, তখন চারপাশের প্রকৃতিতে যা কিছু পেতেন তাই দিয়ে সুন্দর করে ঘর সাজাতে চেষ্টা করতেন৷ তখন ফুলের টবে গাছ লাগাতেন সুন্দর করে৷ মূলত ঘর সাজানোর জন্য দামী জিনিসের পরিবর্তে সহজলভ্য জিনিস দিয়ে কীভাবে সাজানো যায় তার সন্ধান করা থেকেই তাঁর শিল্পচর্চার শুরু৷ প্রিয়ভাষিণী বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন সে কথা:

‘১৯৭৪ সাল থেকে- অবশ্য তখন বুঝতাম না খুব বেশি। তখনও শিল্পের ভেতরে বাইরে সুন্দরের প্রতি এই যে অদম্য নেশা- এটা দিয়ে বুঝতাম। বুঝতাম আমার কিছু করতে হবে। নতুন কিছু। চিন্তায় কাটতো সময়। পেপার কেটে কেটে বাঘ, ভালুক, সিংহ এগুলো করতাম, ওটা ভালো লাগতো, তারপর দেখি যে শুকনো পাতার সাথে একটু সবুজ পাতা রাখি, কেমন লাগে দেখি, ঘর সাজাতাম- গৃহশৈলী। তাতে প্রাণ ভরতো না। আরো কিছু করতে চাইতাম। তারপর শিল্পী এস এম সুলতান আমাকে আবিষ্কার করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন- এগুলো কী? আমি বলি এগুলো এইতো খেয়াল খুশীমতো এনে সাজিয়েছি। সুলতান ভাই বিস্মিত হলেন। তিনি এগুলোকে ভাস্কর্য অভিধা দিলেন। সময়টা সাতাত্তরের দিকে হবে। সুলতান ভাই আমার জীবনের সবচে বড় অনুপ্রেরণা। আমাকে নিয়ে  উনি একজন কন্যাদায়গ্রস্ত বাবার মত ঘুরতেন। অন্যদের বলতেন, এই মেয়েটিকে দেখো, একদিন অনেক বড় শিল্পী হবে। তোমরা বুঝতে পারছো না। একে একটু দেখো।

তখন কেউ দেখতো না আমাকে (হাসি)। তারপর আরো একটা বড় অনুপ্রেরণা হয়ে এসেছিলেন ফয়েজ ভাই। পোর্টফলিও তৈরি করে সব জায়গায় যেতাম- ‘আমার একটা এক্সিবিশন করে দেবেন?’ এভাবে বলতাম। ফয়েজ ভাই তখন প্রথম গ্যালারী করলেন শিল্পাঙ্গন। তখন সবাই বলল, আপনি ফয়েজ ভাইয়ের কাছে যান। অনেক ঘুরতাম একটু দেখা পাওয়ার জন্য। একদিন সন্ধ্যায় সময় দিলেন। আমার কাজ দেখে চা খাওয়ালেন। এক বসায় প্রায় তিন কাপ চা শেষ করলাম। লোকজন আসছে, চলে যাচ্ছে। তারপর উনি বললেন, একটা কথা বলবো, ইউ আর টু জুনিয়র; এক্সিবিশন করার জন্য।
শুনে আমার মনে হলো, আমি অনেক কাজ করবো তারপর নিজের যোগ্যতায় একটা জায়গায় পৌঁছুবো। এরপর আমি দাঁত চেপে কাজ শুরু করলাম। ১৯৭৫ থেকে আমার ছুরি কাঁচি থামেনি।’

বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই ভাস্করের জীবনের সাথে মিশে আছে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস। মিশে আছে বীরাঙ্গনাদের দুর্বিষহ জীবনকাহিনী। তিনিই প্রথম পাকসেনাদের নির্যাতন সম্পর্কে মুখ খোলেন। তিনি আশা করেছিলেন, তার দেখাদেখি হয়তো অনেকেই মুখ খুলবেন। কিন্তু তিনি তেমন কাউকে পাশে পাননি। বিদেশী টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রিয়ভাষিণী বলেন, ‘আমি তো সহসাই ঝড়ের মুখে পড়েছিলাম। মানুষ যেমন ঝড়ের কবলে পড়ে রাস্তা থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়, তার মধ্যে একা একজন পড়ে যায়। আমিও ঠিক যে কোনোভাবে একা হয়ে গিয়েছিলাম এবং আমি সেখানে; এই একা হয়ে যাওয়ার কারণেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত এবং এসব সেনা বাহিনীকে যারা সহায়তা করেছিল তাদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার বয়স তখন তেইশ বছর।  আমাকে ধরে নিয়ে গেল এবং ছুটল গাড়ি। আমি যেহেতু জায়গাগুলো চিনি। তো নওয়াপাড়ার কাছে এসে তখন আমি গ্যাং রেপ হলাম।’

পরের দুর্বিসহ জীবনের কথাও তিনি বলেছেন: ‘আমাকে সবাই বাঁকা চোখে দেখতে থাকল। কারো বাসায় গেলে কথা বলত না। বসতে দিত না। আমার পরিচিত মেয়েরা আমার সঙ্গে মিশত না এই ভেবে যে, তাদের চরিত্রে কলঙ্ক লাগতে পারে। তাদের বিয়ে ভেঙে যেতে পারে। আমার স্বামী আমার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। কোনো মানসিক সাপোর্ট আমি পাইনি। আমার মনের কষ্ট শেয়ার করার মতো কোনো মানুষ ছিল না আশপাশে। সবাই নষ্ট মেয়ে হিসেবে আমাকে ট্রিট করতে থাকল। কেউ আমাকে কাজে নেয় না। আমার বাচ্চাগুলোকে খাওয়াবে কে, আমি কোথা থেকে খাব? এসব চিন্তা যখন মাথায় আসত, আশপাশ অন্ধকার হয়ে যেত। আমার কোনো আইডেন্টিটি নেই। ওই সময়টায় বানি শান্তার একটি মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হলো খুলনায়। তার সঙ্গে কথা বলে ঠিক করলাম, আমি বানি শান্তায় যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করব। তাতে অন্তত আমার একটা পরিচয় থাকবে। আমি বেঁচে থাকার টাকা জোগাড় করতে পারব। আমার সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে পারব। আমি রওনা দিলাম নতুন জীবনের দিকে। রূপসা ঘাট পর্যন্ত গেলাম। এরপর যেন আমার পা আর চলছিল না। আমার ভেতরে কী যেন একটা বিষয় কাজ করল। আমি পতিতা হতে গিয়েও ফিরে আসি। নিজের সঙ্গে নিজের ফাইট চলতে থাকে। আমি ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজে বের করি। শুরু হয় আমার নতুন জীবনের যুদ্ধ।

এসব সংকট এক সময় কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করি। এবং পাকিস্তানি বর্বরতার চিত্রটি কীভাবে জনসম্মুখে ছড়িয়ে দিতে পারি তার চেষ্টা করি। বিষয়টি সর্বপ্রথমে আমি আমার বর্তমান স্বামীকে জানাই। তখন সে বলল, ‘কী দরকার। থাকুক না’। আমি তখন তাকে আমার সঙ্গে যুদ্ধের সময় যে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা লিখে এনে দেখাই। বলি, ‘তুমি বলো এখানে কোন ঘটনাগুলো মিথ্যা?’। সে বলল, সবই সত্য। আমি তখন আমার ছেলের সঙ্গে কথা বললাম। তাকে ঘটনাগুলো জানালাম। সে আমাকে বলল, মা এতদিন তো শুধু মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে এসেছি। আজ প্রকৃত রূপটা দেখলাম। তুমি আমার গর্ব মা। তুমি তোমার কষ্টের কথা মানুষকে জানাতে পারো। এতে আমি লজ্জা পাব না। বরং গর্ববোধ করব তোমার ছেলে হিসেবে।
কবি সুফিয়া কামাল আমার এ ঘটনা শুনে প্রথম আমাকে এপ্রিসিয়েট করেছিলেন। আরও অনেকেই সাহস জুগিয়েছেন। আমি সব সময় ভেবেছি, ঘটনাগুলো না জানালে তো সঠিক ইতিহাস রচনা হবে না। আমার মতো আরও এমন অনেকেরই গল্প মাটি চাপা পরে গেছে। আমি ইতিহাসের এই জ্বলন্ত বিষয়টিকে দাবানলের মত ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম।’
বাংলাদেশ সরকার এই মহীয়সী নারীকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসে হাসপাতালে শয্যাশায়ী। আমরা তাঁর দ্রুত রোগমুক্তি কামনা করি।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ ডিসেম্বর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়