ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের কান্না, ৭ মার্চের স্বীকৃতি ও মেয়েদের বিজয়

জাফর সোহেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২০, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোহিঙ্গাদের কান্না, ৭ মার্চের স্বীকৃতি ও মেয়েদের বিজয়

জাফর সোহেল: শেষ দিয়ে শুরু বলে একটা কথা আছে। খুব করে মন চাইছে সে উপায়টাই অবলম্বন করি। কারণ, বছরের শেষে এসে কিছু ঘটনা মনে যে দাগ কেটেছে, তাতে সুখের একটা অনুভূতি জায়গা পেয়েছে। সুখের কথাই আগে বলি। দুঃখের পাঁচালি যত পরে বলা যায়, তত ভালো। তবে বলে রাখি, লেখাটায় কেবল পেছনে যাব; পেছনের ঘটনাবলির দিকে ফিরে তাকানোই এর উদ্দেশ্য।

২০১৭ ইংরেজি বর্ষের একেবারে শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে বড় করে খবর হয়েছে ছোটদের একটা কীর্তি। কীর্তিমানেরা এত ছোট যে, এদের এখনো শিশুই বলা যায়। তবে কীর্তির দিক দিয়ে এই ছোটরাই লজ্জায় ফেলে দিয়েছে বড়দের। আবার শক্তি সামর্থ্যের দিক থেকেও এরা সামাজিক বিচারে অনেক সমবয়সীর চেয়ে পিছিয়ে। ফুটবল বিশ্বে বাংলাদেশের বড়রা, পুরুষ দল, যখন নামতে নামতে র‌্যাংকিংয়ের তলানীতে গিয়ে ঠেকার উপক্রম, সেখানে এদেশের মেয়েরা একটি আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৫ দক্ষিণ এশিয়া পর্যায়ের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে তারা হারিয়েছে আঞ্চলিক শক্তি ভারতকে। গোটা টুর্নামেন্টে এই মেয়েরা এত নিখুঁত ফুটবল খেলেছে যে, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ফাইনাল দেখতে হাজির হওয়া দর্শকের সংখ্যা হাল আমলের আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের চেয়েও বেশি হয়েছে। খেলা দেখতে যাওয়া প্রতিটি দর্শকের মন ভরে দিয়েছে মারিয়া মান্দা আর শামসুন্নাহাররা। সচেতন পাঠক এদের অনেককেই চিনবেন, এরা সেই কলসিন্দুরের মেয়ে, গোটা বাংলাদেশ যাদের দেখে অবাক বিস্ময়ে! দেশের সামগ্রিক ফুটবল আকাশে সম্ভাবনার নতুন সূর্য উঁকি দেয়ার মতোই তাদের অর্জন। অবশ্য ক্রিকেট মাঠেও এ বছর কিছু সাফল্য ঐতিহাসিক ছিল। যেমন, শ্রীলংকার মাটিতে তাদের হারিয়ে নিজেদের শততম টেস্টে জয়। অস্ট্রেলিয়ার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে টেস্টে হারানোর স্বাদও পেয়েছে টাইগাররা। আছে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলার মতো সাফল্য। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী সাফল্য এবছর ক্রিকেটে আসেনি। 

এ বছর সুখের ছোঁয়া দিয়ে যাওয়া আরো কিছু ঘটনা আছে। বাঙালি তার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন মহান স্বাধীনতার পেছনে যে মন্ত্রমুগ্ধ ঐতিহাসিক ভাষণ মূল স্পৃহা হিসেবে কাজ করেছে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য প্রেরণার উৎস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাত্তরের ৭ মার্চের এই ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্থান দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কো। কিছুদিন আগে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলার আরেক ঐতিহ্য শীতল পাটিকেও। খুশি বা স্বস্তি- যেভাবেই দেখি না কেন, বড় সাফল্যের ঠিকঠাক সূচনা হিসেবে এ বছর আমরা দেখেছি বাংলাদেশ সরকারের সাহসী চওড়া বুক হয়ে পদ্মার বুকে দাঁড়িয়ে গেছে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর প্রথম স্প্যান। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এখন লঞ্চযোগে কেবল বাড়িই ফেরে না, সঙ্গে বয়ে নিয়ে যায় চাঁদের মতো বাঁকানো পদ্মাসেতুর বাস্তব ছবিও! বিশ্ব ব্যাংককে একেবারে চপেটাঘাত করার মতো ঘটনা ঘটিয়ে, তাদের দেয়া ঋণ প্রত্যাখ্যান করে সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে সেতু নির্মাণের কাজ এগিয়ে নেয়ার সাহস এখনকার ইতিবাচক বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি।

এ বছর আমরা দেশের বহুবছরের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠা হরতাল খুব একটা দেখিনি। এই তথ্যই বলে দেয়, এ বছর রাজনীতির মাঠ বেশ শান্ত ছিল। আওয়ামী লীগের নিজেদের দ্বন্দ্বে কিছু প্রাণহানি হলেও, বিএনপি-আওয়ামী লীগ বা জামায়াত-আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। স্থিতিশীল এই রাজনৈতিক পরিবেশ আগামী বছরও বজায় থাকে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। যদিও মানুষ বলে, যায় দিন ভালো। আমরা চাইব আসে দিনও যেন ভালোই হয়। রাজনীতির মাঠে বছর শেষের বড় রকমের স্বস্তি উপহার দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারা রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শতভাগ সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করেছে। এমনকি বিরোধী দলের প্রধান মুখপাত্র মির্জা ফখরুলও এ নির্বাচনকে ভালো নির্বাচনের সার্টিফিকেট দিয়েছেন। নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন ঝন্টুকে পরাজিত করেছে। যদিও এখানে সরকারের সঙ্গে এরশাদের বা এরশাদের সঙ্গে সরকারের গোপন আঁতাতের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। তবু, রংপুর নগরীর প্রায় ৪ লাখ লোক যে তাদের ভোটাধিকার শান্তিপূর্ণভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছেন, এটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির দৃষ্টিতে বলা যায়, মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সাহস ফিরে পেয়েছে। আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য যা বেশ ইতিবাচক দলটির কাছে।

জঙ্গি তৎপরতার দিক থেকেও গত কয়েকবছরের তুলনায় এ বছর ভালো ছিল বাংলাদেশ। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতায় এই গোষ্ঠীর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। ফলে জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তাদের প্রধান নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে এ বছর। যদিও দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি আস্তানা খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে তারা বড় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে পারেনি। আতিয়া মহলের অভিযানে র‌্যাবের চৌকস অফিসার লে. ক. আজাদের মৃত্যু দুঃখ দিয়েছে জাতিকে। একই সঙ্গে এসব অভিযানের ক্ষেত্রে আরো সতর্কতা যে জরুরি, তাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। জঙ্গি গোষ্ঠীর সহায়ক শক্তি হিসেবে যাদের নাম আলোচিত হয়, এ বছর তাদের তৎপরতা খুব একটা দেখা যায়নি। সরকার এক্ষেত্রে বিশেষ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে।

অনেক ইতিবাচক ছবির বিপরীতে গুম আর অপহরণের ঘটনা সারাবছর মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে রেখেছে। পত্রিকার পাতায় এসেছে কারো না কারো গুম হওয়ার খবর। একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যা মোটেই কাম্য হতে পারে না। সুতরাং, এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতার বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই। যদিও বছর শেষে ঘরে ফিরেছে সাংবাদিক উৎপল দাস, শিক্ষক মোবাশ্বারসহ বেশ কয়েকজন। তবে তারা কেউ মুখ খুলছেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, তারা মুখ না খুললে আমরা কী করব? এই বক্তব্য হাস্যকর। গুমের পেছনে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ। তা তারা কীভাবে করবে সেই পথ তাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে। অপরাধ দমনে দেশে পুলিশের ভূমিকা এখনো প্রত্যাশিত জায়গায় যেতে পারেনি। কোথাও কোথাও গাফিলতিরও নজির আছে। এ বছর ধর্ষণ এবং শিশু হত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। নীতিনির্ধারকরা যতই বলুন না কেন, কারো বেডরুম পাহারা দিতে পারবে না পুলিশ- এই কথাগুলো আমরা তাদের মুখ থেকে আশা করি না। বনানীতে রেইন ট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে চায়নি। ঘটনাটি মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। পরবর্তী সময়ে মিডিয়া সরব হলে পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তার করে।  সবশেষ ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতেও ৪ নারী ধর্ষণের ঘটনায় একই আচরণ করেছে পুলিশ। সংবাদ সম্মেলন করে এই গাফিলতির কিছুটা দায় তারা স্বীকারও করেছে। এই বোধদয় আমাদের আশান্বিত করে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিক থেকে এবছর আইলা বা সিডরের মতো ভয়ংকর কিছু ঘটেনি। তবে, রাঙামাটির পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি একটা ট্র্যাজেডিই ছিল। দিনের পর দিন পাহাড় কাটা এবং পাহাড়ে অবৈধ উপায়ে বাসস্থান তৈরির প্রতিদান দিলো নিরীহ কতগুলো মানুষ। এই দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছিল গোটা রাঙামাটি। কিন্তু দঃখের বিষয়, এ ঘটনার পর যেসব সুপারিশ এসেছিল, তার একটিও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসও বন্ধ হয়নি। হাওরের বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বিপর্যয় এবং উত্তরের বন্যা বছরের মাঝামাঝি অন্তত এক কোটি মানুষকে বিপদে ফেলেছিল। যার ক্ষত এখনো শুকায়নি আক্রান্ত অঞ্চলে। হাওর বিপর্যয় যেন দ্বিতীয় বার না হয় সেজন্য যে কাজ শুরু হওয়ার কথা নভেম্বরে তা এখনো শুরু হয়নি। সরকারের উচিত হবে এ বিষয়ে নতুন বছরে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া এবং সংস্কার কাজে সর্বোচ্চ নজরদারি নিশ্চিত করা।

আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে গোটা বাংলাদেশ উদ্বেগ আর ব্যথাতুর মন নিয়ে ছুটেছে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে। যেখানে শতাব্দীর নৃশংসতম হত্যা আর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলার শ্যামল মাটিতে প্রাণ বাঁচাতে এসেছে অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা। এদেশের মানুষের আত্মার আত্মীয় না হওয়া সত্ত্বেও রক্ত আর অশ্রুর সাগর পাড়ি দিয়ে আসা এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশের আপামর জনতা। সারাবিশ্ব অবাক চোখে দেখেছে এক অনন্য, অসাধারণ মানবিক বাংলাদেশের ছবি। যে দেশের মানুষের নিজেদেরই খাওয়া-পরার পূর্ণ নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি, তারাই যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ল বিপন্ন মানবতা রক্ষায়, তা অনেকের কাছেই এক বিস্ময়কর গল্প।

সত্যি হলো, বাংলাদেশ এই বিস্ময় উপহার দিয়েছে। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার- প্রত্যেকটি বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় আর অন্নের নিশ্চয়তা দিতে নিজেদের সর্বোচ্চ ঢেলে দিয়েছেন। এখনো এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকে আগলে রেখেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উদারতায় বিশ্ব তাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ সম্মানে ভূষিত করেছে।

সবচেয়ে বড় কথা, পরদেশের এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর চালানো বর্বরতার একেকটি গল্প কাঁদিয়েছে গোটা বাংলাদেশকে। এটা এমনই এক ভয়াবহ বিপর্যয় মানব ইতিহাসের। এ বিপর্যয়ের রেশ এখনো কাটেনি। কারণ রোহিঙ্গারা এখনো তাদর নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেনি। বাংলাদেশ জতিসংঘ এবং বিশ্বের অনেক দেশকে সঙ্গে নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ফিরিয়ে দিতে, কিন্তু মিয়ানমারের নেত্রী সু চি এবং তার দুর্বৃত্ত সরকার এখনো এ প্রশ্নে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। লোক দেখানো দু’একটি সমঝোতা তারা করলেও বিশ্লেষকদের ধারণা, তারা এ ব্যাপারে আরো বহুদিন গড়িমসি করবে। বিশেষ করে, যতদিন চীন এবং রাশিয়া তাদের মাথার ওপর ছায়া হয়ে থাকবে ততদিন বাকি বিশ্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি তারা দেখিয়ে যাবে। তাই বাংলাদেশকে এ বিষয়ে মরিয়া হয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করতে হবে। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আসছে বছর বাংলাদেশের জন্য অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি এই রোহিঙ্গা ইস্যুও মাথা ব্যথার কারণ হবে।

বিদায়ী বছরের শেষ দিকে এসে ঢাকা শহরের বা বিশেষ দৃষ্টিতে বিচার করলে বাংলাদেশেরই একজন যোগ্য নাগরিককে হারিয়েছি আমরা। সম্পর্কে তিনি আমাদের ‘নগরপিতা’। ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হক। ঢাকা নগরীকে কার্যকর ক্লিন সিটি এবং গ্রিন সিটিতে রূপান্তরের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং সেই লক্ষ্যে বাস্তবিক অর্থেই কাজ শুরু করা এই মানুষটির মৃত্যুতে অনেকের চোখের জল গড়িয়েছে নীরবে; হয়ত এই নগরীর সব মানুষেরই। কারণ, তার কোনো বিশেষ শত্রু ছিল না। তার নগরপিতা হওয়ার পর এমন কিছু অর্জন, পরিবর্তন ঢাকাবাসী দেখেছে, যা স্বাধীনতা পরবর্তী কোন সময়ে আর দেখা যায়নি। এই নগরীর মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল- না, একটা কিছু এবার হবে, হচ্ছে। কিন্তু উপরে বসে যিনি ফয়সালা করেন সবকিছুর, তার বুঝি অন্যরকম ইচ্ছা ছিল এ নগরীর মানুষের ভাগ্যলিখনে। তাই ভাগ্য পরিবর্তনে যিনি হাত দিয়েছেন, তাকেই নিলেন সরিয়ে; দূরে, বহু দূরে।

কিছুদিন পর অবশ্য বন্দরনগরীও হারিয়েছে সেখানকার আরেক বীরকে। যিনি ‘চট্টলার বীর’ নামে পরিচিত সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী। তার মৃত্যু শোক কাটিয় উঠতে না উঠতেই তারই কুলখানিতে ১০ জনের পদদলিত হয়ে মৃত্যু গোটা চট্টগ্রামকেই স্তব্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় অব্যবস্থাপনার যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা দুঃখজনক। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবগুলো মানুষের জন্য কেবল একটি সেন্টার কেন বরাদ্দ করা হলো- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভালোবাসার প্রকাশ করতে গিয়েও যদি এই দেশে মৃত্যুবরণ করতে হয়, এর চেয়ে হতাশার আর কী হতে পারে? অবহেলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে- এটাই প্রত্যশা। কিন্তু বড় সমস্যা হলো- আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নেই না। ভুল-ত্রুটি সরিয়ে, সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাবো এই প্রত্যাশা।

লেখক: সাংবাদিক



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ ডিসেম্বর ২০১৭/তারা  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়