ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রবীণদের স্মরণ

ড. এ এস এম আতীকুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৫, ১ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রবীণদের স্মরণ

ড. এ এস এম আতীকুর রহমান : জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর  বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ১ অক্টোবর  আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালনের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে (রেজ্যুলেশন নং-৪৫/১০৬)। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু হওয়া দিবসটি পালনের ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ০১ অক্টোবর বিশ্ব জুড়ে উদযাপন করা হচ্ছে ২৮তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। এবছর দিবসের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রবীণদের স্মরণ পরম-শ্রদ্ধায়’।

বিস্তারিতভাবে বললে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সনদ এবং চুক্তির সুবাদে বিশ্ববাসীর জন্যে মানবাধিকার বিষয়টি আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রক্ষাকবচ। এর ছায়াতলে নাগরিকরা বর্তমানে অনেক সুরক্ষিত এবং নিরাপদ। মানবাধিকারের এ সকল চুক্তি আর সনদ যারা তৈরি করেছেন আজ তারা প্রবীণ। মানবাধিকারের বদৌলতে বিশ্ববাসী দারুণভাবে লাভবান হয়েছেন এবং হচ্ছেন। কিন্তু মানবাধিকারের কারিগর- শ্রদ্ধেয় প্রবীণদের জন্যে এর সুফল ভোগের ব্যবস্থা কী আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি? নাকি তাঁদেরকে সমাজ-সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছি? সময় এসেছে এ বিষয়ে জবাবদিহি করার। সমাজ এবং সংসারে প্রবীণদের প্রাপ্য সেবা, সম্মান, স্বাধীনতা এবং পছন্দের অধিকার পূরণ করা সকলের জরুরী পবিত্র দায়িত্ব।

আমাদের জীবনে বার্ধক্য অবধারিত এবং অলঙ্ঘনীয়। আমরা সবাই কিন্তু প্রবীণ! রীতিমত হয়ে গেছি অথবা হচ্ছি! প্রবীণজন কিন্তু ভিন্ন কেউ নন, আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবনব্যাপী বার্ধক্যের প্রস্তুতি গ্রহণ এবং নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধন রক্ষা করার কোন বিকল্প নেই। বলা হয় যে, প্রবীণের যুক্তি আর নবীনের শক্তি- দুইয়ে মিলে সমাজের মুক্তি! আমাদের ভবিষ্যতের কল্যাণ চিন্তা করে সেদিন যাঁরা মানবাধিকার চুক্তি এবং সনদ রচনা করেছিলেন তাঁদের প্রাপ্য পরিশোধ করলে বার্ধক্যে পৌঁছে আজকের তরুণ প্রজন্মও এর প্রতিফল পাবেন।

২. জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩ অনুসারে বাংলাদেশে ৬০ বছর এবং তদুর্ধ বছর বয়সীরা হচ্ছেন  প্রবীণ; মহামান্য রাষ্ট্রপতি এদেরকে ‘সিনিয়র সিটিজেন’ ঘোষণা করেছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উৎকর্ষে বিশ্বব্যাপী প্রবীণ জনসংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে। ১৯৯৫ সালের ৫৪ কোটি বিশ্ব প্রবীণ জনসংখ্যা আড়াই গুণ বেড়ে ২০২৫ সালে গিয়ে হবে ১২০ কোটি; আর ২০৫০ সালে হবে প্রায় ২০০ কোটি! বাংলাদেশে বর্তমানে বাস করছেন প্রায় ১.৪০ কোটি প্রবীণ। আগামী ২০২৫, ২০৫০ এবং ২০৬১ সালে এদের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে যথাক্রমে প্রায় ২ কোটি, ৪.৫ কোটি এবং ৫.৫ কোটিতে! উদ্বেগজনক বিষয় হলো অতি প্রবীণদের (৮০+) সংখ্যা বাড়ছে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে। অন্যদিকে শিশু জনসংখ্যা দ্রুত কমছে। ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে শিশুদের চেয়ে প্রবীণদের সংখ্যা বেশি হয়ে যাবে! মানবাধিকার সনদ ও চুক্তিসহ সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার সুনিপুণ কারিগর আজকের প্রবীণজনেরা। বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী এবং সংস্কৃতি ও গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের নেতৃত্বে প্রবীণদের উপস্থিতি এবং অবদান অত্যন্ত সরব, বলিষ্ঠ এবং প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় সকলেই আজ প্রবীণ। দেশের অগণিত কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষ নিজেদের বয়স উপেক্ষা করে নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে, কাজ করে নিজের জীবিকা অর্জনের পাশাপাশি দেশ ও জাতির প্রাণশক্তির যোগান দিয়ে যাচ্ছেন।

৩. বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান প্রবীণ জনগোষ্ঠী সংশ্লিষ্ট সমস্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বার্ধক্য বিষয়ে ব্যক্তি, পরিবার এবং সংগঠনের অবগতি, সচেতনতা, সক্রিয়তা, আগ্রহ এবং উদ্যোগের ভয়ানক রকমের ঘাটতি এবং অনীহা। দেশের সাধারণ ও পেশাগত শিক্ষা পাঠ্যসূচিতে, বিভিন্ন গণমাধ্যমের নানা কার্যক্রমে এবং সাংস্কৃতিক যেকোন তৎপরতায় বার্ধক্য এবং প্রবীণ-প্রবীণাদের অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, চাহিদা, অধিকার এবং আমাদের করণীয় বিষয়গুলো প্রায় অদৃশ্য, অনুচ্চারিত, গুরুত্বহীন অথবা অসম্পূর্ণভাবে উপস্থাপিত হয়ে থাকে! আমাদের কর্তব্য হচ্ছে সময় থাকতে সম্মান এবং অধিকারের ভিত্তিতে প্রবীণদের দেখভাল করা এবং নিজেদের সমাসন্ন বার্ধক্যের কার্যকরি প্রস্তুতি গ্রহণ করা। বার্ধক্য সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশে অবিলম্বে প্রয়োজন পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক (এলোপ্যাথিক, মনোরোগ, হোমিও, আয়ুর্বেদিক-ইউনানি ইত্যাদি), নার্স, পুষ্টিবিদ, ডেন্টাল সার্জন, থেরাপিস্ট, মনোবিজ্ঞানী, সমাজকর্মী, আইনজ্ঞ ইত্যাদি পেশাজীবী তৈরির বলিষ্ঠ উদ্যোগ গ্রহণ করা। অবসরে যাওয়া দেশের সুদক্ষ মানবসম্পদকে দেশের বিভিন্ন জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার কথা কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে।

৪. বিশ্বসংসার আর জাতিসমাজ এগিয়ে চলেছে উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির ধারাবাহিক পথে। এমডিজির সাফল্যে আমরা এসডিজির মসৃণ সড়ক ধরে এগুচ্ছি। জাতিসংঘ বলছে যে, বার্ধক্য এখন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ এবং একে মোকাবেলাও করতে হবে বৈশ্বিকভাবে। কবি বলেছেন, ‘মরিতে চাহিনা আমি এই সুন্দর ভূবনে’। কিন্তু বেঁচে থাকলে সকলকে প্রবীণ হতেই হবে, এটিই কঠিন বাস্তব। মানুষ এখন আর সহজে মৃত্যুবরণ করছেনা! কিন্তু প্রশ্ন হলো ক্রমবর্ধমান প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কাঙ্খিত সেবা-পরিচর্যা প্রদানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেবাকর্মী কি আমাদের আছে? চলমান নাগরিক সেবাকেন্দ্রে গিয়ে সেবা গ্রহণের সামর্থ্য ও সুযোগ প্রবীণদের কতটা আছে? প্রবীণ নারী, অটিস্টিক ও  নানাভাবে প্রতিবন্ধিতার সম্মুখীন প্রবীণদের দেখভালের ব্যাপারে আমরা কি সত্যই মনোযোগী? অতি প্রবীণদের পরিচর্যায় দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছি? অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করতে হবে যে, সরকার ও রাজনীতি প্রবীণবান্ধব হওয়া সত্বেও বাংলাদেশে আমরা এসব বিষয়ে বেশ পিছিয়ে আছি। কিন্তু এখন সময় এসেছে ব্যক্তিগত বার্ধক্য মোকাবেলায় সরকারি উদ্যোগে অংশীদার হয়ে নাগরিকদের এগিয়ে আসার। নাগরিকদের অংশিদারিত্বের মাধ্যমে দেশে বার্ধক্যবীমা, সার্বজনীন নাগরিক পেনশন ব্যবস্থা ইত্যাদির প্রচলন করা এখন জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে।

৫. সম্মানিত প্রবীণরা লক্ষ্য করেছেন যে, শত বছরের ইতিহাসে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মত করে কেউই প্রবীণকল্যাণ কাজে এগিয়ে আসেনি, উদ্যোগ নেয়নি, প্রবীণদেরকে সুরক্ষিত করার চেষ্টাও করেনি। নিঃসন্দেহে তিনি বাংলাদেশের একজন উজ্জ্বল সমাজ-সংস্কারক। মানবাধিকার, সামাজিক সুবিচার, সম্মিলিত দায়িত্ববোধ এবং বৈচিত্রের প্রতি সন্মান প্রদানের নিক্তিতে রাজনীতির সীমানা ছাড়িয়ে তিনি মানবিক ও সামাজিক নেতৃত্বের আসনে স্থায়ীভাবে সমাসীন হয়েছেন। এটি তার বহুদিনের, বহু দূরদর্শিতার একান্ত অর্জন। দুঃস্থ মানুষের কথা যখন যে মুহূর্তে তার কানে এসেছে, সুযোগ পেয়েছেন, সহজাত মহানুভবতায় তাদের কল্যাণে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সীমাহীন সফলতাও অর্জন করেছেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমৃদ্ধ কর্মকাণ্ড এর অন্যতম বাস্তব সাক্ষী। এই মন্ত্রণালয় পরিচালিত কর্মকাণ্ডের চৌহদ্দি বর্তমানে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, এগিয়েও যাচ্ছে আশাপ্রদ গতিতে। প্রবীণদের জন্য মন্ত্রণালয়ের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর আন্তরিক এবং একনিষ্ঠ সেবাকাজের কোন তুলনা হয়না।

৬. এতদঞ্চলে যত পরিবর্তনই হোকনা কেন, সমাজ-সংস্কারক শেখ হাসিনার নাম আর তার সামাজিক অবদান ইতিহাস থেকে কেউই মুছে ফেলতে পারবেনা। সামাজের পিছিয়ে পড়া, বিচ্ছিন্ন, সুবিধা বঞ্চিত, হতদরিদ্র, অসহায় এবং ভাগ্যবিড়ম্বিত নানা বয়েসের, লিঙ্গের, বর্ণের, গোত্রের, ধর্মের, প্রতিবন্ধিতার, অবস্থানের নাগরিকদের জন্যে দৃশ্যমান কল্যাণমূলক বলিষ্ঠ কর্মসূচি গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের মহান উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। একাধিক সামাজিক আইন প্রণয়ন করে, নীতি ও বিধি গড়ে, কর্মসূচির নির্দেশনা দিয়ে নাগরিকের দুঃসময়ে তিনি পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সুদীর্ঘকাল বাংলার মাটিতে বসবাস করেও যাঁদের কথা কেউ কখনও উচ্চারণ করেনি, ভাবেনি, ভাবতে চায়নি, শেখ হাসিনার দূরদর্শি সমাজ-সংস্কারের বদৌলতে তারা আজ রাষ্ট্রের মূলধারায় অঙ্গীভূত হয়েছেন। এই মূল্যায়ন সম্মানিত প্রবীণদের। সমাজ সংস্কারক শেখ হাসিনা প্রবর্তিত ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থবছরের বয়স্ক ভাতার আকার আকৃতি ২০১৮-২০১৯ সালে ঘোষিত জাতীয় বাজেট  অবধি অভাবিত হারে বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে দেশের ৪০ লক্ষ প্রবীণ বয়স্কভাতা হিসেবে প্রতিমাসে ৫০০.০০ টাকা করে মোট ২৪০০ কোটি টাকা পাবেন। শুরুতে এ সংখ্যা ছিল ৩.২ লক্ষ প্রবীণ, প্রবীণ প্রতি মাসিক ভাতা ১০০.০০ টাকা এবং মোট বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকা। প্রবীণজনের চলাচলের সীমাবদ্ধতার কথা আমলে নিয়ে সরকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রাপ্য ভাতার টাকা ঘরে বসে পাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। শুরু থেকেই কর্মসূচিটি রাজস্ব খাতের এবং যেখানে নারী-পুরুষের সংখ্যা সমান সমান। সমাজ-সংস্কারক শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ দিকনির্দেশনায় প্রবীণ ব্যক্তিদের সেবাকর্মসূচি সম্প্রসারণে সরকারের দেওয়া বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘের অনুদান মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা হতে বর্তমানে ৪.৩৬ কোটি  টাকায় উন্নীত হয়েছে। এরই সক্ষমতায় সংঘ বিগত চার বছর ধরে দেশব্যাপী তার ৭৮টি জেলা/উপজেলা শাখায় ক্ষুদ্র পর্যায়ে হলেও, প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কাজ শুরু করেছে। প্রতি বছর জেলা/উপজেলা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ০১ অক্টোবর – আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালন করা হচ্ছে বেশ জাঁকজমকের সাথে। বাংলাদেশের প্রবীণদের মূখ্য মন্ত্রণালয় হিসেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রবীণ হিতৈষী উদ্যোগ এবং দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নে সদাসর্বদা আন্তরিকভাবে সক্রিয় আছে। তবে প্রবীণদরদী শেখ হাসিনার দূরদর্শী প্রবীণকল্যাণ উদ্যোগকে আরো বেগবান করার লক্ষে সর্বান্তকরণে নাগরিকদের সক্রিয়ভাবে এ প্রক্রিয়ায় এবং সামিল হতে হবে। দেশের প্রবীণজন নিশ্চিত হয়েছেন যে, ধারাবাহিকভাবে আগামী দিনেও প্রবীণদরদী শেখ হাসিনা সরকার প্রবীণদের প্রাপ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং স্বার্থপূরণে অধিকতর সহানুভূতিশীল এবং সক্রিয় থাকবেন। প্রবীণদরদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর রয়েছে অগাথ বিশ্বাস, সমর্থন, দোয়া আর ভালবাসা। সফল সামাজ সংস্কারক একজন আলোকিত নেত্রী হিসেবে তিনি বর্তমান বিশ্বের গৌরবময় এক দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের জনগণ এবং বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ কৃতজ্ঞতার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্থ ও স্বস্তিময় দীর্ঘায়ু এবং সার্বিক সাফল্য কামনা করছে।

৭. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহীত একাধিক কল্যাণ কর্মসূচি প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কাছে তাঁকে প্রবীণদরদী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। ঐতিহাসিক বয়স্কভাতা কর্মসূচি প্রচলন, পেনশন সুবিধা সম্প্রসারণ, প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা উন্নীতকরণ, অবসর গ্রহণের বয়স বৃদ্ধি, ২০১৩ সালে জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা এবং পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন প্রণয়ন করা ছাড়াও প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইন প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। সকল নাগরিকের জন্যে সামাজিক পেনশন ব্যবস্থা চালুর বলিষ্ঠ প্রস্তাব বর্তমান সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। তাছাড়া, প্রস্তাবিত প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশান আইন প্রণীত এবং কার্যকর হলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সামাজিক মর্যাদা এবং গুরুত্ব শতগুণে বৃদ্ধি পাবে। এসকল উদ্যোগের পেছনে কাজ করেছে প্রবীণদরদী শেখ হাসিনার একান্ত মানবচিন্তা আর দেশপ্রেমের মহানুভবতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত সামাজিক দায়িত্বগুলো অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে তিনি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। একজন আলোকিত নারী হিসেবে বাংলাদেশ তথা বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজেকে তিনি সমাজ সংস্কারের রোল মডেল বা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নারীত্ব এবং বার্ধক্য বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নের পথে কোন বাধা নয় বরঞ্চ সুযোগ ও সহযোগী, তা শেখ হাসিনা প্রমাণ করে দিয়েছেন। এদেশের  প্রায় দেড় কোটি নাগরিক সমৃদ্ধ প্রবীণগোষ্ঠী তাঁর কাছে যারপর নাই কৃতজ্ঞ এবং শ্রদ্ধাবনত।

আজকের এই দিনে প্রবীণদের আহ্বান হচ্ছে- কেবল আবেগ-অনুকম্পা অথবা দয়া-দাক্ষিণ্যে নয়, অধিকার আর প্রাপ্য সন্মানের ভিত্তিতে জাতি-ধর্ম-গোষ্ঠী নির্বিশেষে অনিন্দ্য সুন্দর এই বাংলাদেশে আমরা সবাই মিলেমিশে শান্তিতে আর স্বস্তিতে বসবাস করি।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ অক্টোবর ২০১৮/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়