ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

চৌকিদারের কাছেই কুপোকাত কংগ্রেস

অলোক আচার্য || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৫ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চৌকিদারের কাছেই কুপোকাত কংগ্রেস

অলোক আচার্য: লোকসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহের অবসান হয়েছে। ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ভারতের ১৭ তম লোকসভা নির্বাচনের সাতটি ধাপ শেষ ফল ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য শেষ ধাপের নির্বাচন শেষ হওয়ার পরেই বুথ ফেরত জরিপ প্রকাশে বিজেপি ও কংগ্রেসের জয় পরাজয়ের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। বুথ ফেরত জরিপে স্পষ্ট হয়েছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট গত বারের চেয়েও বিপুল আসনে জয় পেতে যাচ্ছে। প্রথমে বিষয়টি নিয়ে বিরোধী শিবির প্রশ্ন তুললেও সময় যত গড়িয়েছে সেই জরিপের ফলের জোরালো ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। শেষ পর্যন্ত দিল্লীর মসনদে দ্বিতীয় বারের মতো নরেন্দ্র মোদিকেই বেছে নিয়েছে জনগণ। বিপরীতে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে। কংগ্রেসের ঘাঁটি আমোথীতে স্মৃতি ইরানির কাছে হেরেছেন রাহুল গান্ধী। এরই মধ্যে তিনি পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছেন। মোদির শাসনামলের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ, আক্ষেপ থাকার পরও কেন জনগণের আস্থা মোদিতেই রয়েছে তাই এখন হিসাব-নিকাশ করার পালা।

বিরোধী শিবির যতই ‘চৌকিদার’ বলে মোদিকে উপহাস করুক না কেন এখনও যে জনগণের ওপর চৌকিদারের প্রভাব তারা কাটাতে পারেনি নির্বাচনের ফল তারই প্রমাণ। শেষ ধাপের নির্বাচনের আগেই মোদি তো বলেই ফেলেছেন- দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে লোকসভায় যা আসন প্রয়োজন ছয় দফার ভোটেই তা হাসিল হয়ে গিয়েছে। এমনকি তার দাবি ছিল- বিজেপি একাই ৩০০-এর বেশি আসনে ভোট পাবে। তার জোট ঠিকই ৩৪৮টি আসন পেয়েছে। ১৯৯৬ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ির নেতৃত্বে ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসে। বিজেপি সভাপতি অমিত শাত তার টুইট বার্তায় ভারতবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি এই জয়কে পুরো ভারতের জয় বলেছেন। প্রশ্ন হলো- ক্ষমতায় থাকা নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ থাকার পরেও কংগ্রেস কেন লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়লো? প্রধানমন্ত্রী মোদির দিকে অভিযোগের মূলেই ছিল দেশের অর্থনীতি। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ঘিরে গড়ে ওঠা অর্থনীতি। এই নিয়ে বিরোধী শিবির বারবার মোদিকে আক্রমণও করেছেন। তাছাড়া নোট বাতিল আর জিএসটির মতো সিদ্ধান্তেরও কড়া সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু নেতা এমন একজন যে জনগণকে তার ব্যক্তিত্ব দিয়ে আকর্ষণ করতে পারে। যার ওপর জনগণের বিশ্বাস জন্মে। মোদির ব্যক্তিত্ব জনগণের ওপর এতটাই প্রভাব বিস্তার করে আছে তা কাটানো কংগ্রেসের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ভোটের আগেই এই বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল যে, এমন কে আছেন যে মোদির বিকল্প হতে পারে। মোদির সন্ন্যাসী মনোভাব, দৃঢ়চেতা মানসিকতা, প্রতিপক্ষের কাছে দুর্বলতা প্রকাশ না করা, বর্হিরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন, তথ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য জনগণের মনে এই ধারণার জন্ম দিয়েছে যে আপাতত মোদির বিকল্প তাদের কাছে নেই। সামরিক শক্তিতেও ভারত পূর্বের তুলনায় নিজের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। ফলে বিজেপি আরও একবার মোদি ম্যাজিকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে গেলো।

লোকসংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচনে কি কি বিষয় প্রভাব বিস্তার করতে পারে তা নিয়ে শুরু থেকেই আলোচনা ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ভারতের নিরাপত্তার হুমকি মনে করা পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলার উচিত জবাব দিতে পারা। যা পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালিয়ে বা এর আগে সার্জিক্যাল ষ্ট্রাইকের মতো ঘটনায় মোদি দিয়েছিল। এসব ভারতীয় জনগণের মনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। তারা ভেবেছে মোদির হাতেই ভারত নিরাপদ। কারণ নিরাপদ দেশ সবাই আশা করে। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে ২৮২টি আসন পেয়েছিল। এনডিএ জোট পেয়েছিল ৩৩৬ আসন। এবার তা আরও বেড়ে গেছে, অন্যদিক কংগ্রেসের কমেছে। ১৯৯৮ সালে বিজেপি পেয়েছিল ১৮২ আসন। এনডিএ জোটের সম্মিলিত শক্তি পেয়েছিল ২৫৪ আসন। মোদির ব্যক্তি ইমেজ ভারতের রাজনীতিতে অত্যন্ত শক্তিশালী। এই মুহূর্তে মোদির সমকক্ষ ইমেজের কেউ আছেন বলে মনে হয় না। তাই ব্যাপক বেকারত্ব ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অসন্তোষের কারণে এবারের নির্বাচনে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা কম হলেও মোদির বিপরীতে ভারতীয়রা মোদিকেই আর একবার তাদের ভাগ্য উন্নয়নের যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে মনোনীত করেছে। এমনকি নির্বাচনের আগেই অনেক জরিপে মোদি বিরোধীদলীয় নেতার চেয়ে এগিয়ে আছেন এমন তথ্য উঠে এসেছে। এমন তথ্য যে আসলে কতটা সত্যি ছিল তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।

২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রধান প্রার্থীর ওপর ফোকাস করে বিগত ৩০ বছরের রেকর্ড ভেঙে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়লাভ করে বিজেপি। এবারেও মূলত সেই একই পন্থায় বিজেপি বিজয়ী হয়েছে। পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলার পর বিজেপির ওপর মানুষের আস্থা বেড়েছিল। তারা মনে করেছে ভারত এখন শক্ত ও নিরাপদ নেতৃত্বের হাতে রয়েছে। কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও বলতে গেলে সফল ছিল। সব সমস্যার সমাধান হিসেবে মোদিকেই বেছে নিয়েছে দলটি। বিজেপির শাসনামলে বৈশ্বিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তারা মোটামুটি সফল বলা যায়। মহাকাশসহ প্রযুক্তি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ছিল দৃশ্যমান অগ্রগতি। কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপিতে মোদি কেন্দ্রীয় শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান মোদির আমলে শক্তিশালীই হয়েছে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির ওপর এর প্রভাব খুব বেশি না হলেও সার্বিকভাবে ভারতের অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে গিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ভারত বিশ্বের ষষ্ঠ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে এবং চলতি বছর ব্রিটেনকে পেছনে ঠেলে দিয়ে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলে আভাস দিয়েছে। বেকারত্ব বরাবরই একটি বড় ইস্যু ছিল। মোদির সময়েই বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে বেশি। ফলে বেকারতের এই চাপ কমানো মোদির জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ মে ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়