ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

৯ম বার সংসদ নির্বাচনে মারফত আলী

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৯ম বার সংসদ নির্বাচনে মারফত আলী

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা: কুষ্টিয়ার মারফত আলী মাষ্টার ৯ম বারের মতো এবারও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বয়সের ভারে কিছুটা ন্যুব্জ, চলেন খুড়িয়ে। তবু নির্বাচন করা চাই-ই তার।

রাজনীতি বলতে বর্তমানে নাম সর্বস্ব দল ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল কংগ্রেস দল’ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত মারফত আলী। তবে দল নিবন্ধন না পাওয়ায় পরে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের হয়ে হারিকেন প্রতীক পেতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

মারফত আলী মাষ্টারের বক্তব্য, তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুরের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে লড়ে যাচ্ছেন। তার দাবী, অর্থ বা ক্ষমতার জন্য নয়, সামাজিক পরিবর্তন এবং সাধারণ মানুষের অধিকার আদায় করতেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি ।

তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৮টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে একবারও জয়ী হতে পারেননি তিনি।

ছাত্রজীবনেই ১৯৬২ সালে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৯ সালে তিনি মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭০ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীনতার স্বপক্ষে বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন।

কর্মজীবনে মারফত আলী দৌলতপুর উপজেলার ছাতারপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।

মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের নওদাআজমপুর এলাকার মৃত হাতেম আলীর ছেলে ৭২ বয়সী মারফত আলী মাস্টার এখনো নির্বাচনে লড়াই-ই তার অস্থিমজ্জায়।

আলাপকালে মারফত আলী মাস্টার বলেন, ‘আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য এই মিরপুরের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনা।’

মিরপুর-ভেড়ামার উপজেলা নিয়ে কুষ্টিয়া-২ সংসদীয় আসন। এই আসনে বেশি ভোট মিরপুর উপজেলার। তবে এই এলাকার মানুষেরা ভেড়ামারার মানুষের চেয়ে অবহেলিত। নির্বাচনে নেতৃত্বের অভাবে মিরপুরের মানুষ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত।  আর এই দাবিতেই এখানে বারবার প্রার্থী হচ্ছেন মারফত।

তিনি বলেন, ‘সর্বপ্রথম জাসদ ইনুর দলের হয়ে ১৯৮০ সালে সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে খেজুরগাছ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। সে সময় মাত্র ২৬ ভোটে পরাজিত হই। তারপর প্রতিজ্ঞা করি যতদিন বাঁচবো নির্বাচন করে যাবো। তারপর প্রথম ১৯৮৬ সালে ১৫ দলীয় জোটের মাছ মার্কা প্রতীকের হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। সে সময় ১৩ হাজার ভোট পাই। ১৯৮৮ এবং ১৯৯১ সালে দুইবারই জাসদ (শাজাহান সিরাজ) এর দলের হয়ে মাছ মার্কা প্রতীকে নির্বাচন করি। পরবর্তীতে  ১৯৯৬ সালে জনতা পার্টি (আতাউল গনি ওসমানী) থেকে হরিণ মার্কা প্রতীকে নির্বাচন করি। এরপরে ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে কোন দলের না হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করি। এরপর চলে যাই মিরপুর পৌর এলাকার খন্দকবাড়ীয়ায়। সেখানে জমি কিনে বসবাস শুরু করি। পৌর এলাকার সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ২০১০ সালে পৌর নির্বাচনে তালা-চাবি মার্কায় অংশ নেই। তারপর ২০১০ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে টিয়া পাখি প্রতীকে নির্বাচন করি। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে জাসদ (রব) তারা মার্কা প্রতীকে অংশ নেই। পরে অর্থের অভাবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, ‘সামাজিক একটা পরিবর্তন চাই, মিরপুরের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। অন্য কোনো কারণ নেই। আমি এমপি হতে চাই না। চাই ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করতে। এ জন্য যত দিন বাঁচব, নির্বাচনে অংশ নিয়ে যাব।’

প্রতি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে মারফত আলী বলেন, ‘অর্থ এবং রাজনৈতিক কারণেই প্রতিবার আমি পরাজিত হই। তবে আমি নির্বাচনে না জিতলেও তরুণ প্রজন্ম’র কাছে একটা শিক্ষা পৌঁছে দিতে চাই। যাতে তারা আগামীতে নেতৃত্ব দিতে পারে।’




রাইজিংবিডি/ কুষ্টিয়া/৩ ডিসেম্বর ২০১৮/কাঞ্চন কুমার/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়