ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সাদিয়ার তৈরি পোশাক এখন বিদেশের শপিং মলে

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৩ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাদিয়ার  তৈরি পোশাক এখন বিদেশের শপিং মলে

রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম : ইসরাত সাদিয়া চৌধুরী। চট্টগ্রামের বড় শিল্পপতি বাবার আদুরে কন্যা । ইংরেজি মাধ্যমের এই মেধাবী ছাত্রীর হয়তো কোন কর্পোরেট হাউজ কিংবা ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা হওয়ারই কথা ছিলো। কিন্তু চাকরি কিংবা বাবার ব্যবসা কোনটাই আকর্ষণ করেনি তাকে।

নিজে কিছু করার স্বপ্ন ও ইচ্ছের ওপর ভর করে ইসরাত সাদিয়া আজ সফল নারী ব্যবসায়ী। বুটিকের পোশাক তাকে এনে দিয়েছে সেই সাফল্য।সাদিয়ার  ডিজাইন করা তৈরি পোশাক বিক্রি হয় অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় শপিং মলে। পোশাক যায় জাপান, ইউএসএ, মধ্যপ্রাচ্যেও। শুধুমাত্র ফেসবুক পেইজে ভর করেই সাদিয়া তার ব্যবসার পসার ঘটিয়েছেন।

 


সাদিয়া শুরু করেছিলেন নিজের বাসা থেকে মাত্র একজন কর্মী সঙ্গে নিয়ে। এখন চট্টগ্রাম ইপিজেডে তার নিজের ফ্যাক্টরি। কর্মী সংখ্যা ১৫ । মাত্র তিন বছর আগেও লোকসান গুনে বুটিকের ব্যবসা শুরু করলেও এখন প্রতিমাসে কর্মীদের বেতনই দেন দেড় লাখ টাকা। এর পরও প্রতিমাসে মুনাফা থাকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা । মাত্র তিন বছরেই ইসরাত সাদিয়া বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একজন সফল বুটিক ডিজাইনার ও ব্যবসায়ী হিসাবে নিজেকে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে ।

ইসরাত সাদিয়া চৌধুরীর চট্টগ্রামের স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে এসএসসি ও ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে এইচএসিসি পাস করেন। এর পর ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে শেষ করেছেন এসিসিএ কোর্স।

 


আলাপকালে ইসরাত সাদিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমি সব সময় নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখেছি। নিজের পায়ে নিজেই দাঁড়ানোর আকাঙ্ক্ষা থেকেই আমি শূন্য থেকে শুরু করেছি।’

সাদিয়া বলেন, ‘ব্রিটিশ কাউন্সিলে এসিসিএ করতে করতেই পোশাক ডিজাইন এবং বুটিকসের ব্যবসার বিষয়টি মাথায় আসে। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে শুধুমাত্র একজন কর্মী নিয়ে ঘরে বসেই পোশাকে এমব্রয়ডারির কাজ শুরু করি। এই সময় ছোটখাটো অর্ডারের কিছু কাজ পেলেও বাণিজ্যিকভাবে ততোটা সাড়া ছিলো না।’

সাদিয়া বলেন, ‘২০১৫ সালে ফেসবুকে ‘সাদিয়া’স এমব্রয়ডারি কালেকশান’ নামের একটি পেইজ খুলে আমার তৈরি পোশাক বাণিজ্যিকভাবে উপস্থাপন ও বিক্রয়ের কার্যক্রম শুরু করি। পেইজ চালুর কয়েক মাসের মধ্যেই  দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে থেকেও ব্যাপক অর্ডার আসতে শুরু করে।’

 


চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম ইপিজেডে একটি ফ্লোর নিয়ে কারখানা চালু করেন সাদিয়া। প্রথমে ৪/৫ জন কর্মী নিয়ে এই কারখানা চালু হলেও বর্তমানে সাদিয়ার কারখানায় কাজ করেন ১৫ জন কর্মী। ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে অর্ডার সরবরাহের পাশাপাশি সাদিয়ার তৈরি করা পোষাক সরবরাহ হয় জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউএসএসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে একটি শপিং মলে সাদিয়ার বুটিক ও এমব্রয়ডারি করা পোশাক বিক্রি হচ্ছে গত দুই বছর ধরে। জাপান, অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশি এবং স্থানীয়দের মধ্যেও সাদিয়ার তৈরি করা পোশাকের চাহিদা বেশ ভাল। সাদিয়ার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ পোশাকের ক্রেতা দেশের বাইরের।

জাপানে সাদিয়ার পোষাক ক্রেতা নাদিয়া জানান, সাদিয়ার তৈরি পোশাকের ডিজাইন ব্যতিক্রম । এ ছাড়া যেসব পোশাক বা ডিজাইন পাকিস্তান থেকে আমদানি করলে প্রতিটি পোশাকের মূল্য পড়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা, সাদিয়া সেই একই পোশাক নিজের কারখানায় তৈরি করে দিতে পারেন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়।

 


একই রকম মন্তব্য করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাদিয়ার পোষাক ক্রেতা সারাহ। সারাহ বলেন, ‘আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসেও সাদিয়ার বুটিকের পোশাক ও এমব্রয়ডারির উপর আস্থা রাখি। সাদিয়ার তৈরি পোশাক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালীদের পছন্দের।’

মাত্র ২৫ বছর বয়সেই সাফল্য অর্জনকারী ইসরাত সাদিয়া বলেন, ‘আমি প্রতি মাসে কর্মীদের বেতন পরিশোধ করি প্রায় দেড় লাখ টাকা। এর পরও প্রতিমাসে আমার সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। গার্মেন্টস-এর অর্ডারের ক্ষেত্রে ১০ হাজার পিসের উর্ধ্বে ৫০ হাজার পিস পর্যন্ত পোশাকের অর্ডার নিয়ে থাকি। ব্রাইডাল ড্রেস তৈরির ক্ষেত্রে প্রতিমাসে ১টির বেশি অর্ডার নেই না। ব্রাইডাল প্রতিটি পোষাকের দাম হয় সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত।’

 


সাদিয়া বলেন, ‘সব সাফল্যের জন্য পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় প্রয়োজন। আমি যখন ব্যবসা শুরু করি তখন প্রথম তিন মাস আমি লোকসান দিয়েছি। কোন লাভ না হওয়ায় নিজের পুঁজি থেকেই কর্মীদের বেতন দিয়েছি। কিন্তু আমি হতাশ হইনি। আমি জানি পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবেই। আমার অদম্য ইচ্ছা  আর বাবা মায়ের অনুপ্রেরণায় আমি এখন পুরোপুরি নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।’

 


সাদিয়া বলেন, ‘আমার আরও বহুদূর যাওয়ার স্বপ্ন। আমি মাত্র শুরু করেছি। আমি আমার একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে চাই দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। বড় শো রুম করতে চাই। আমি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আরও দৃঢ় মনোবলে কাজ করে যেতে চাই।’

 

 

রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২ মে ২০১৭/রেজাউল/টিপু         

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়