ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

অনলাইনে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে বাংলাদেশি তরুণদের বিশ্বজয়

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 অনলাইনে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে বাংলাদেশি তরুণদের বিশ্বজয়

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : ‘শুরুর দিকে চ্যাম্পিয়ন হবো মাথায় ছিলো না। কিছু একটা করতে হবে-এটুকুই শুধু ভেবেছি। বাংলাদেশের নাম ঘোষণা করার পর পতাকাটা যখন তুলে ধরেছি মনে হয়েছে- আমিই বাংলাদেশ। আমি আর আমার মধ্যে ছিলাম না। নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি ওই দিন।’ কথাগুলো বলছিলেন সম্প্রতি ফেসবুক গ্লোবাল ডিজিটাল চ্যালেঞ্জ শীর্ষক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশি তরুণদের টিম ‘think twice, act wise’ এর উদ্যোক্তা ইমরান আহসান।

বিশ্বজুড়ে অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন কিছু মানুষ ঘৃণা ছড়াছে, উস্কানি দিচ্ছে, মানুষের মাঝে বিরোধ তৈরি করছে ঠিক তখন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট-এর সহযোগিতায় ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেছিল একটি বিশেষ প্রতিযোগিতা। ফেসবুক গ্লোবাল ডিজিটাল চ্যালেঞ্জ শীর্ষক আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি এক দল তরুণ। পুরস্কার হিসেবে তারা জিতেছেন চার লাখ টাকার প্রাইজমানি।

১৯ জুলাই এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ফাইনালে বাংলাদেশ নাইজেরিয়া, স্পেন এবং ফিলিপাইনকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। বিশ্বের ৭০টি দেশের ১৬০টি দল এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ‘আয়োজকদের উদ্দেশ্য ছিল- মানুষ যাতে অনলাইনে ঘৃণা না ছড়ায়, মানুষের মাঝে যাতে সহমর্মিতা গড়ে তোলা য়ায়। একটি সমাজে বিভিন্ন ধরনের মানুষ থাকে, তারা যাতে এক সঙ্গে বাস করতে পারে, কাজ করতে পারে।’ জানালেন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য তওসীফ তানজীম আহমেদ।

‘think twice, act wise’ টিমের শুরুর গল্প বলতে গিয়ে উদ্যোক্তা ইমরান আহসান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘২০১৫ সালে আমি সুসি নামক একটা প্রোগ্রাম-এ ইউএসএ গিয়েছিলাম। যাওয়ার জন্য ইউএস এম্বাসিতে ভাইভা দিতে হয়েছিল। তখন একজন আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, আমি ফিরে এসে কী করতে চাই? তখন আমি আমার এই ফিল্ডে কাজ করার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছিলাম। সহনশীলতা, সহানুভূতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি- এই জায়গাগুলোতে আমার কাজ করার আছে বলে মনে করতাম। দেশে ফিরে আসার পর আমেরিকান সেন্টারে আমাকে ডেকে ফেসবুকের এই প্রজেক্টটার কথা বলা হয়। তখন আমি আগ্রহী হয়ে ১৩ সদস্যের টিম তৈরি করি। আমাদের টিম ছিল মাল্টিডাইমেনশনাল। অনেক ব্যাকগ্রাউন্ডের ছেলেমেয়েরা এক সঙ্গে হয়েছি। সাথে আছেন পরামর্শক শ্রদ্ধেয় আসিফ শাহান স্যার। এ ভাবেই আমাদের পথচলা শুরু। প্রথম তিনমাস তো শুধু গবেষণা করেই কাটিয়েছি কীভাবে কী করবো।’

 



‘think twice, act wise’ টিম  https://think2act.org/ নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে। তারা একটি ফেসবুক পেইজ এবং ইউটিউব চ্যানেলও খোলে। তিন ধর্মের মানুষকে একত্রিত করে ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করে। সেখানে তারা জীবনে সম্প্রিতির গল্পগুলো তুলে ধরে। ওয়েবে রাখে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য নানা ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম। কেবল যাতে ধর্মের কারণে বিদ্বেষ না বাড়ে, যাতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে ভালোবাসা গড়ে উঠে, অনলাইনে সাম্প্রদায়িকতা ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে স্কুলভিত্তিক ক্যাম্পেইনও করে তারা। শিক্ষার্থীদের মাঝে সহিঞ্চুতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টাও করা হয়। টিমের কার্যক্রমগুলো ২০১৭ সালের জুনে প্রতিযোগিতার আয়োজকদের কাছে জমা দেওয়ার পর আয়োজকেরা চারটি দলকে ওয়াশিংটন ডিসিতে আমন্ত্রণ জানান। কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে ‘think twice, act wise’ টিমের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটন ডিসিতে মূল অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।

টিমের আরেক সদস্য রহিস-উজ-জামান শিশির বলেন, ‘আমরা কোনো জিনিস যেভাবে দেখি সেটাই যে দেখার একমাত্র উপায় বিষয়টা এমন নয়। যদি ভিন্ন কোনো আঙ্গিক থেকে জিনিসটা দেখা হয়, তাহলে সেই একই জিনিস নতুন একটা রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিষয়টা মানুষ কিংবা কোনো ঘটনা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেও সত্য। হয়তো একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে প্রথমে যেটা ধারণা করেছিলাম সেটার ভুল বুঝতে পারি। সুতরাং কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছার আগে একটু ভাবি- Think Twice, Act Wise!’

বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ মোহাম্মদ শাহানের নেতৃত্বে প্রতিযোগিতায় শীর্ষস্থান অর্জনকারী দলের সদস্যরা হলেন– উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের মো. ইমরান আহসান, শারমিন আক্তার শাকিলা, মো. সাব্বির আহমেদ জুবায়ের, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের মো. মনজুরুল আলম, মো. সাইফুল ইসলাম, আশরাফুল কিবরিয়া, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এ কে এম তওসীফ তানজীম আহমেদ, সওসান সুহা, অর্থনীতি বিভাগের মু. মাহদী হাসান সরকার, সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের ডি. এম রইস-উজ-জামান শিশির, রোবোটিক্স এবং মেকাট্রনিক্স বিভাগের জুলকারনাইন তাসিন এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আজওয়াদ আদনান।

পুরস্কার পেয়ে থেমে যাওয়া নয়, বরং তরুণদের মাঝে সহিঞ্চুতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ‘think twice, act wise’ টিমকে এগিয়ে নেওয়ার কথা জানান সদস্যরা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ আগস্ট ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়