ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সাইকেল বাদশা

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ২৮ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাইকেল বাদশা

পাবনা প্রতিনিধি : বাদশা আলম (৩৫) । পাবনা জেলার  বেড়া উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের সন্তান। বাবা আব্দুল বাতেন মোল্লা ও মা মনোয়ারা খাতুনের চতুর্থ এই সন্তানের নাম বদলে গেছে এখন ।

বাদশা আলম হয়ে গেছে ‘সাইকেল বাদশা’। তাঁত সমৃদ্ধ গ্রাম জগন্নাথপুরের এই তাঁতশ্রমিক সাইকেল নিয়ে ১০ বছর ধরে গ্রামবাসীদের বাড়ি বাড়ি বিনামূল্যে বিতরণ করছেন শাক-সবজির বীজ। শুধু সবজির বীজ-ই নয়, সমাজ সচেতনতামূলক বিভিন্ন লিফলেটও বিতরণ করেন তিনি।

সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার তাঁত বন্ধ থাকে।সপ্তাহের এই দিনটিতেই তার ভাঙ্গা সাইকেলটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাদশা আলম। সাইকেলের পিছনে প্লাস্টিকের বোতলে সাজানো থাকে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির বীজ। ঘুরে বেড়ান গ্রামের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত।

চলার পথে কোনো বাড়ির পাশে পতিত জমি দেখলেই  মালিককে ডেকে তাদের সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করেন এবং সঙ্গে রাখা  বিভিন্ন সবজির বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করেন। বিতরণকালে বীজ বপণ ও যত্ন করার পদ্ধতিও বলে দেন। কখনও কখনও তাতে নিজেও হাত লাগান।

 


আবার বাল্য বিবাহ, যৌতুক ও মাদক বিরোধী লিফলেট ছাপিয়েও বিতরণ করে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস চালান বাদশা আলম।

বাদশা আলম জানান, ছোটবেলায় দেখতাম, মা বাড়ির পাশে ফেলে রাখা জমিতে বিভিন্ন শাক সবজি লাগাতেন। সবজির বীজ হলে সেগুলো যত্ন করে রাখতেন এবং পাড়া প্রতিবেশী বাড়িতে এলে তাদের বীজ দিতেন।

বাদশা বলেন, ‘আমি মাকে জিজ্ঞেস করতাম, মা তুমি বীজ অন্য মানুষকে দাও কেন? মা বলতেন, প্রতিবেশীদের বীজ দেওয়া ভাল । এতে আল্লাহ খুশি হন। প্রতিবেশীদের প্রতি মায়ের এই ভালবাসা আমাকেও উদ্বুদ্ধ করেছে। আমি মায়ের সেই কাজটি এখন নিজে করি। গ্রামের মানুষকে বিনামূল্যে শাকসবজির বীজ বিতরণ করি।’

বাদশা আলম বলেন, ‘এর বাইরে যখন বীজ দেওয়ার মৌসুম নয়, সেই সময় আমি মাদক, যৌতুক ও বাল্য বিবাহ বিরোধী লিফলেট বিতরণ করি। লিফলেটে শ্লোগান লেখা থাকে, মাদক থেকে দূরে থাকুন, যৌতুক ও বাল্যবিবাহ বন্ধ করুন, দেশকে ভালবাসুন ইত্যাদি। আমার এ কাজকে সবাই উৎসাহ দেয়। আর এসব কাজে আমি কারো সাহায্য নেই না। নিজের খরচে বিতরণ করি।’

 


বাদশা আলম বলেন, ‘আমি মনে করি, একটি ভালকাজ কোনোদিনও হারিয়ে যায় না। করলে একটি করে ভাল কাজ, বদলে যাবে এ দেশের সাজ।’

বাদশা আলমের স্ত্রী মিনারা খাতুন জানান, বিয়ের পর প্রথমদিকে বাদশার এই কাজকে অসহ্য মনে হলেও এখন আর খারাপ লাগেনা তার। বরং মানুষের মুখে  বাদশার প্রশংসা শুনতে ভালই লাগে তার।

স্ত্রী মিনারা খাতুন বলেন, ‘সে হাট থেকে ৯০০ টাকা দিয়ে একটি পুরোনো সাইকেল কিনে বীজ বিতরণ শুরু করে। আমিও তাকে সহযোগিতা করি, মানুষ তাকে ভালবাসে।’

বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘তাঁত শ্রমিকের কাজ করে নিজের অর্থে মানুষকে সেবা দেওয়ার এমন মানুষ খুব একটা দেখা যায় না। ’

 

 

রাইজিংবিডি/পাবনা/২৮ অক্টোবর ২০১৭/শাহীন রহমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়