দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা মানেই স্বাস্থ্য ঝুঁকি
নাঈম জামান || রাইজিংবিডি.কম
নাঈম জামান : প্রতিদিন আমরা অনেকেই একটা দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকি। বেশিরভাগ সময় অফিসের চেয়ারে কিংবা গাড়িতে অথবা বাসায়, দিনের একটি লম্বা সময়ই আমাদের বসে থেকে কাটাতে হয়। হোক সেটা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত, মূলত বসে কাজ করার প্রবণতা আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার শুরু থেকেই প্রচলিত হয়ে আসছে। তবে, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা এতটাই প্রবল যা আগে কেউ কখনো ভাবেনি।
বর্তমান সময়ে মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে বসে থাকে
মানবদেহের একটি স্বাভাবিক অঙ্গবিন্যাস হল বসে থাকা, অফিসে কাজের সময়, কারো সঙ্গে দেখা করা, বাসায় বই পড়া, মুভি দেখা, এমনকি যানবাহন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও স্বাভাবিক অঙ্গবিন্যাস হল বসে থাকা। যদিও, তার মানে এই নয় যে বসে থাকায় কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই। দুর্ভাগ্যবশত, দীর্ঘ সময় বসে থেকে কাজ করা আমাদের প্রতিদিনের একটা স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আসলে, একজন সাধারণ অফিস কর্মী দিনে ৮-১০ ঘণ্টার মতো অফিসে বসে কাজ করে থাকে। অন্যদিকে একজন কৃষক দিনে মাত্র ৩/৪ ঘন্টারও কম সময় বসে থাকে।
যত বেশি বসে থাকা, তত বেশি ওজন বৃদ্ধি
যখন শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটি সামনে আসে, তখন কিছুটা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন বা কিছু সময়ের ব্যায়ামের ফলেও আশানুরুপ ক্যালরি ক্ষয় সম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ, এরপরেই শুরু হয় বসে থেকে অফিসের কাজ করা। এজন্যই বসে থাকা এবং মেদ বৃদ্ধি একে অপরের পরিপুরক।
বসে থাকা, অকাল মৃত্যুর কারণ
হেলথলাইন নিউজলেটারের তথ্য মতে, ১০ লাখেরও বেশি মানুষের ওপর পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, যারা দীর্ঘসময় বসে থাকে তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুকি ২২ থেকে ৪৯%।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা ক্যানসারের কারণ
আজকাল মনে হয় সবকিছুই ক্যানসারের কারণ! ধূমপান, মোবাইলফোন, অনিয়মিত ওষুধ সেবন। কিন্তু বসে থাকা? হ্যাঁ, আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চের সাম্প্রতিক তথ্যমতে, অতিরিক্ত সময় বসে থাকা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
এছাড়া, লম্বা সময় ধরে বসে থাকার ফলে আরো অনেক ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। যেমন: দুরারোগ্য কোমর ব্যথা, বুক ব্যথা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কর্মক্ষমতা হ্রাস, মাত্রাতিরিক্ত মেদ বৃদ্ধি ইত্যাদি।
বসে থেকে কাজ করার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিরোধের উপায়
প্রশ্ন হল কিভাবে এই সকল স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো এড়িয়ে চলা যায়? বিশেষজ্ঞদের মতে, কাজের মধ্যে প্রতি ৩০ মিনিট পরপর বিরতি নিতে হবে, একটু হাঁটাচলা করা এরপরে আবার কাজে বসে যাওয়া।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন এ বিষয়ে যেটা বলে অনুপ্রাণিত করে থাকে- ‘বসে থাকার তুলনায় মুভ করুন বেশি।’ কিন্তু এটা কোনো পরিপূর্ণ গাইডলাইন নয় বলেছেন, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির মেডিসিন ডিপার্টমেন্ট। তারা মনে করেন এই বিষয় থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে আরো অনেক গবেষণার দরকার।
আমেরিকার একটি ক্লিনিকাল প্র্যাকটিস অর্গানাইজেশন মায়ো ক্লিনিক এ বিষয়ে একটি সহজ সমাধান দিয়েছেন। তাদের মতে, যারা লম্বা সময় ধরে ডেস্ক জব করেন তারা একটি স্ট্যান্ডিং ডেস্ক ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ দাড়িয়ে থেকে কাজ করা যায় এমন একটি টেবিল, যেখানে যার যার উচ্চতা অনুযায়ী টেবিলের পার্টগুলো অ্যাডজাস্ট করে নেয়া যাবে।
কিন্তু এই ধরনের স্ট্যান্ডিং ডেস্ক আমাদের দেশে কোথায় পাওয়া যাবে? উত্তর হচ্ছে, সম্প্রতি বাংলাদেশে স্ট্যান্ডিং ডেস্ক নিয়ে কাজ করছে একটি ইন্টেরিয়র ডিজাইন অ্যান্ড ডেকোরেশন কোম্পানি- ইন্টেরিয়র স্কেচ। তাদের নতুন ব্র্যান্ড ইজিডেস্ক নামে এই পণ্যটি তারা তৈরি করেছে। ইজিডেস্কের ওয়েবসাইট: ।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ জানুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন