ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাসের বিপজ্জনক ২০ কারণ (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাসের বিপজ্জনক ২০ কারণ (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমে যাচ্ছে? তাহলে এটি হতে পারে মারাত্মক কোনো রোগের লক্ষণ। ২০টি স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে যেকোনোটির কারণে অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমে যেতে পারে। এ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* সেলিয়াক রোগ
সেলিয়াক রোগ হচ্ছে একটি ইমিউন ব্যাধি, যা ক্ষুদ্রান্তে ড্যামেজ সৃষ্টি করে। টাউরো কলেজ অব অস্টিওপ্যাথিক মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিকেট সোনপাল বলেন, ‘যখন সেলিয়াক রোগ সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে যাবে, এটি অন্ত্রের স্তর ধ্বংস করবে, যার ফলে লোকজনের শরীরে পুষ্টি শোষণ থেমে যাবে এবং সময়ের পরিক্রমায় ক্যালরি শোষণও বন্ধ হয়ে যাবে।’ এটি ওজন হ্রাস করে। ওয়ার্ল্ড জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিতে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, সেলিয়াক রোগের অন্যতম সর্বাধিক কমন উপসর্গ হচ্ছে, ওজন হ্রাস যা ২৩ শতাংশ রোগীদের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে।

* পরজীবী
প্রতিবছর হাজার হাজার লোকের শরীরে সাধারণত দূষিত খাবার ভোজন অথবা দূষিত পানি পানের মাধ্যমে ট্যাপওয়ার্ম, রাউন্ডওয়ার্ম, হুকওয়ার্ম ও পিনওয়ার্ম প্রবেশ করে থাকে। এসব পরজীবী মানুষের শরীর থেকে পুষ্টি শোষণ করতে ব্যস্ত থাকে। এর ফলে ক্ষুধা ও ওজন কমে যাবে, কিন্তু লোকজন এটি অনুধাবন নাও করতে পারে, কারণ এসব পরজীবী অনেক আগেই তাদের শরীরে এসেছে। ডা. সোনপাল বলেন, ‘পরজীবী নিজেদেরকে প্রকাশ করতে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস বা কয়েক বছর সময় নিতে পারে।’ শেষপর্যন্ত বমিবমি ভাব, বমি ও ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয় এবং এসবও ওজন হ্রাস করতে পারে।

* ডিমেনশিয়া
অগ্রসর পর্যায়ের অ্যালজেইমার’স রোগ ও অন্যান্য ধরনের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতা প্রায়ক্ষেত্রে ওজন কমিয়ে ফেলে- এ রোগের লোকেরা প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণে ব্যর্থ হতে পারে। কিন্তু অন্যান্য ফ্যাক্টরও ওজন হ্রাসে অবদান রাখে। ডিমেনশিয়ার লোকেরা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হতে পারে অথবা নিয়মিত খেতে ভুলে যেতে পারে। ডা. সোনপাল বলেন, ‘মস্তিষ্কে নিউরনের ভাঙ্গন স্বাদ ও ঘ্রাণের ক্ষমতাকে ভোঁতা করে দেয়। তাই তারা খাবারের প্রতি আবেদন হারায়।’ এছাড়া গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ওজন হ্রাস অনুমান করাতে পারে যে ভবিষ্যতে ডিমেনশিয়া হতে পারে। একটি গবেষণা অনুসারে, ডিমেনশিয়া আছে এমন নারীদের উপসর্গ প্রকাশের ১০ বছর পূর্ব থেকেই ওজন হ্রাস পেতে শুরু করেছিল।

* ক্রন’স রোগ
ক্রন’স রোগের রোগীদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা ও ওজন হ্রাস কমন। এটি গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের একটি ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহ জনিত অবস্থা। সেলিয়াক রোগের লোকদের শরীর সঠিকভাবে পুষ্টি শোষণ করতে পারে না এবং তারা কম খায়, কারণ খাবার অন্ত্রে সমস্যার ও উপসর্গের কারণ হতে পারে। ক্রন’স রোগের রোগীদের শরীরে আলসার বা ক্ষত থাকতে পারে, যেমন- মুখ ও পাকস্থলীতে। ডা. সোনপাল বলেন, ‘খাওয়ার সময় আলসারে ব্যথা হয় এবং এর ফলে খাবারের প্রতি অনীহা জন্মে।’

* রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস একটি ক্রনিক অবস্থা যা যন্ত্রণাদায়ক, অনমনীয় ও স্ফীত জয়েন্টের কারণ হতে পারে। কিন্তু এটি অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন হ্রাসও করতে পারে। এই রোগ প্রদাহ বৃদ্ধি করে, যা সাইটোকিনস নামক প্রোটিনের একটি গ্রুপের অত্যধিক উৎপাদনের কারণ হয় এবং রেস্টিং মেটাবলিক রেট বৃদ্ধি করে। ডা. সোনপাল বলেন, ‘তাই শরীর অধিক ক্যালরি ও ফ্যাট পোড়ায় এবং রোগীরা ওজন হারাতে থাকে।’

* লুপাস
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো লুপাস একটি অটোইমিউন রোগ, এটি পুরো শরীরের ক্ষতি করতে পারে, যেমন- কিডনি ড্যামেজ, থাইরয়েড ডিসফাংশন এবং র‍্যাশ। ডা. সোনপাল বলেন, ‘যেহেতু অনেক অর্গান সিস্টেমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তাই এ রোগের রোগীদের ওজন কমে যেতে পারে।’ লুপাস অ্যাসিড রিফ্লাক্সও সৃষ্টি করে- ভুক্তভোগীরা খাওয়ার পর প্রায়ক্ষেত্রে বুকে জ্বালাপোড়াময় ব্যথা অনুভব করে, এ কারণে অনেক রোগী খাবার এড়িয়ে চলেন। লুপাসের সঙ্গে থাকা সমস্যাও, যেমন- পাকস্থলীর ক্র্যাম্প ও ডায়রিয়া, প্রায়ক্ষেত্রে ওজন কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

* অ্যাডিসন’স রোগ
যখন কোনো লোকের অ্যাডিসন’স রোগ থাকবে, বুঝতে হবে তার অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড ড্যামেজ হয়ে গেছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে স্ট্রেস হরমোন করটিসল উৎপাদন হচ্ছে না। ডা. সোনপাল বলেন, ‘যদি আপনি স্ট্রেসে বিপর্যস্ত থাকেন, পর্যাপ্ত করটিসলের অভাবে আপনার শরীরকে ভুগতে হয়। তাই স্বাভাবিক স্ট্রেস প্রতিক্রিয়ার অভিজ্ঞতা হওয়ার পরিবর্তে আপনি বমিবমি ভাব, মাথাঘোরা কিংবা মাথাব্যথাসহ অসুস্থতা অনুভব করতে পারেন। আপনার ক্যালরি ও মাংসপেসীর ঘনত্ব পুড়ে এবং ওজন কমে যায়।’ এছাড়া পেট খারাপ হওয়া ছাড়াও এ রোগের অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশন- যেখানে ত্বক অত্যধিক বর্ণালী বা অতিরঞ্জিত হয়, বিশেষ করে হাঁটু ও কনুইতে।

* জিংক ঘাটতি
শরীরের সর্বোত্তম কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ প্রয়োজন, যেমন- জিংক। অধিকাংশ লোক খাবার থেকে পর্যাপ্ত জিংক পেয়ে থাকে, কিন্তু যারা পায় না তাদের জিংক ঘাটতি ক্ষুধা হ্রাস করতে পারে। যার ফলাফল হচ্ছে ওজন হারানো। ডা. সোনপাল বলেন, ‘জিংক ঘাটতি প্রতিনিয়ত মুখে বাজে স্বাদের অনুভূতি দেয়, এর ফলে খাওয়ার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয় এবং ওজন হ্রাস পায়।’ কিছু ওষুধও (যেমন- অ্যান্টিবায়োটিক ও রক্তচাপের জন্য প্রেসক্রাইবকৃত কিছু ডিউরেটিকস) জিংক ঘাটতির কারণ হতে পারে। লাল মাংস, মুরগির মাংস, বিনস ও বাদাম হচ্ছে জিংকের ভালো উৎস।

* এসজগরেন’স রোগ
মায়ো ক্লিনিক অনুসারে, এই ইমিউন সিস্টেম ডিসঅর্ডারের দুটি সর্বাধিক কমন উপসর্গ হচ্ছে- শুষ্ক চোখ ও শুষ্ক মুখ। এটি অন্যান্য অটোইমিউন ডিসঅর্ডারের (যেমন- রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও লুপাস) সংযোগে হতে পারে অথবা এটি নিজে নিজেও হতে পারে, জার্নাল অব ইন্টারন্যাশনাল ওরাল হেলথে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে। ডা. সোনপাল বলেন, ‘লালা গ্রন্থি ধ্বংস হয়ে যায় এবং রোগীদের খাওয়া ও গিলতে সমস্যা হয়।’ ভালো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সত্ত্বেও এই রোগের লোকদের অসংখ্য ক্যাভিটি হতে পারে এবং দাঁতও পড়ে যেতে পারে, জার্নাল অব ডেন্টাল রিসার্চের গবেষণা অনুসারে।

* অ্যাকালেজিয়া
এই ব্যাধি খাদ্যনালী ড্যামেজ করে। ডা. সোনপাল বলেন, ‘খাওয়ার সময় খাদ্যনালীর শেষাংশের স্নায়ু শিথিল থাকে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু অ্যাকালেজিয়ার লোকদের এসব স্নায়ু ড্যামেজ হয়ে যায় এবং পাকস্থলীতে খাবার প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়ে (প্রকৃতপক্ষে, অ্যাকালেজিয়া হচ্ছে ল্যাটিন শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে রিলাক্স বা শিথিল হতে ব্যর্থ)। এর ফলে বুকে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং রোগীদের খাবারের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়। সময়ের পরিক্রমায় এটি খারাপ থেকে খারাপ হতে থাকে এবং রোগীদের ওজন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।’

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়