ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

পোষা কুকুরের লেহন ম্যান্টিউফেলকে প্রায় মেরে ফেলেছিল

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৮, ২২ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পোষা কুকুরের লেহন ম্যান্টিউফেলকে প্রায় মেরে ফেলেছিল

এস এম গল্প ইকবাল : যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা গ্রেগ ম্যানটিউফেল ভেবেছিলেন, তিনি ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ঘটনা ২৬ জুনের। তার মুখের ত্বকের রঙ গাড় লাল বর্ণের হয়ে যায়। তারপর পা ফুলে যায়, তিনি জ্বর অনুভব করেন এবং তার ডায়রিয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘আমার ঘুমের প্রয়োজন হয়েছিল। আমার চেতনা ছিল না বললেই চলে।’ সেসময় তার ছেলে মাইক তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় তার ত্বকের বর্ণ তিন দিনের পুরোনো কালশিটে এবং হালকা নীলসহ রক্তবর্ণের মতো হয়ে যায়, তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। ম্যানটিউফেল বলেন, ‘আমার জীবন বাঁচাতে আমি চিকিৎসকদেরকে যা করা প্রয়োজন তা-ই করতে বলেছিলাম।’

কেননা হাসপাতালে ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ম্যান্টিউফেলের পা কালো হয়ে যায় এবং চিকিৎসকরা বাধ্য হয়ে তার হাঁটুর নিচের অংশ কেটে ফেলেন এবং পরবর্তীতে হাঁটুর ওপরের কিছু অংশ। যখন হাতের বর্ণ কালো হয়ে যায় তখন দুটো হাতও কেটে ফেলা হয়, তারপর নাকের অংশ।

ম্যান্টিউফেলের স্ত্রী ম্যান’স হেলথ ডটকমকে বলেন, ‘এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেননি যে ম্যান্টিউফেলের কি রোগ হয়েছে। তারা আমাদেরকে জিজ্ঞেস করেছে যে তাকে টিক পোকা অথবা মাকড়সা কামড় দিয়েছে কিনা অথবা তিনি জঙ্গলে গিয়েছিলেন কিনা। কিন্তু এসবের কোনোটাই ম্যান্টিউফেলের ক্ষেত্রে ঘটেনি।’

শেষপর্যন্ত আটদিনের গবেষণার পর চিকিৎসকরা জানতে পারেন যে, ম্যান্টিউফেলের রোগটি একটি সংক্রামক রোগ যা ক্যাপনোসাইটোফাগা ক্যানিমোরসাস নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়েছিল। এই ব্যাকটেরিয়াটি কুকুরের মুখে পাওয়া যায় এবং এটি কামড় বা লেহনের (চাটার) মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। পোষা কুকুরের মুখের লালা থেকে এই ব্যাকটেরিয়া তার শরীরে প্রবেশ করেছিল।



খুবই বিরল ক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং প্রাণনাশক ইনফেকশন যেমন- সেপসিস (শরীরের সর্বত্র ইনফেকশন) সৃষ্টি করতে পারে- ম্যান্টিউফেলের ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। পরবর্তী তিন মাসে তার ১৪টি অস্ত্রোপচার হয়েছিল, যার মধ্যে কিছু স্কিন গ্রাফট অন্তর্ভুক্ত ছিল।

৪৮ বছর বয়সী পেইন্টার ম্যান্টিউফেল বলেন, ‘আমি সারাজীবন কুকুরের পাশে ছিলাম। তাই আমার মাথায় আসেইনি যে কুকুরের মাধ্যমে এই ইনফেকশন হয়েছে।’ ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে পোষা কুকুর ছিল এবং বর্তমানে তার ‘এল্লাই’ নামে ৮ বছর  বয়সের একটি পোষা কুকুর রয়েছে।

ম্যান্টিউফেল প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, এল্লাইয়ের চুম্বন বা চাটার ফলে তিনি ক্যাপনোসাইটোফাগা ক্যানিমোরসাস ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এসেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, তার কুকুরটির লেহনের স্বভাব নেই। তিনি বলেন, ‘এই অস্ত্রোপচারের পর আমি এল্লাইকে প্রথমবারের মতো আমাকে লেহন করতে দিয়েছিলাম। কুকুরের প্রতি আমার কোনো নির্দয় অনুভূতি নেই, আমি তাদেরকে ভালোবাসি।’

এটি বলা কঠিন যে, এল্লাই থেকে কিভাবে এই ব্যাকটেরিয়া ম্যান্টিউফেলের মধ্যে ছড়িয়েছে অথবা এই ব্যাকটেরিয়া এল্লাই থেকে ছড়িয়েছে কিনা। ম্যান্টিউফেল অসুস্থ হওয়ার পূর্বে তিনি একটি জন্মদিনের উৎসবে ছিলেন যেখানে অনেকেই তাদের পোষা কুকুর নিয়ে এসেছিল। ম্যান্টিউফেল বলেন, ‘সেখানে আটটি বা তার বেশি কুকুরকে আমি স্পর্শ করেছি। তাই আমি আসলেই জানি না যে কোন কুকুর থেকে এই ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়েছে।’

ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার ভেটেরিনারি মাইক্রোবায়োলজির লেকচারার স্টিফেন কোলি ম্যান’স হেলথ ডটকমকে বলেন, ‘ক্যাপনোসাইটোফাগা ক্যানিমোরসাস ব্যাকটেরিয়া সাধারণত কুকুরের মুখে পাওয়া যায়। কিন্তু এটি রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে সেপসিস সৃষ্টি করার ঘটনা খুবই বিরল। আমরা জানি না যে ম্যান্টিউফেলের এই ইনফেকশনের উদ্দীপক কি ছিল অথবা কেন তার এটি বিকশিত হয়েছিল।’

বর্তমানে ম্যান্টিউফেল একটি মোটরাইজড হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন এবং তাকে ফ্রোয়েডটার্ট হসপিটালে থেরাপি দেওয়া হচ্ছে যেখানে তাকে প্রতিদিনকার কাজ কিভাবে করতে হবে তা শেখানো হচ্ছে, যেমন- খাওয়া, গোসল করা, ফোন ব্যবহার করা। তিনি টুথব্রাশ ও চামচের মতো আইটেম রাখার জন্য ভেলক্রো রিস্টব্যান্ড ব্যবহার করেন। তার গলায় একটি নেকলেস রয়েছে যা তার সেলফোন ধরে রাখে।



ম্যান্টিউফেলের পরামর্শ হচ্ছে, ‘জীবনে যাই ঘটুক না কেন, ইতিবাচক থাকুন- ভেঙে পড়বেন না।’ তাকে চিকিৎসা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খরচের জন্য তার বাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। তিনি পরিবারসহ এখন মা-বাবার সঙ্গেই থাকছেন।

চিকিৎসার ক্ষেত্রে ম্যান্টিউফেলকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তিনি আশা করেন যে অনেকগুলো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পরবর্তী বছরের মধ্যেই তিনি ভালো হয়ে যাবেন এবং কৃত্রিম বাহু ও পা কিনবেন। তার চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, আবার গাড়ি চালানো। তিনি বলেন, ‘আমি আসলেই ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করছি এবং যা হয়ে গেছে তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না।’

ম্যান্টিউফেলের পক্ষে এখন পেইন্টারের কাজ করা সম্ভব নয়, তাই তিনি অনলাইনে গোফান্ডমি থেকে অর্থ সংগ্রহ করছেন। ইতোমধ্যে ১৩০,০০০ ডলারেরও বেশি অর্থ সংগৃহীত হয়েছে যা তার চিকিৎসা খরচ ও কৃত্রিম অঙ্গ কেনার পেছনে ব্যয় হবে।

ম্যান্টিউফেল এখনো তার পোষা কুকুরকে ভালোবাসেন, কোলে বসান। তিনি চান না যে, কেউ কুকুরকে ভয় পাক। এই ইনফেকশন যেন আর কারো মাঝে না ছড়ায় তার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির আশা করেন তিনি।

তথ্যসূত্র : ম্যান’স হেলথ



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ অক্টোবর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়