ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

প্রাণী পোষার ১০ বিস্ময়কর উপকারিতা

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ২৫ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রাণী পোষার ১০ বিস্ময়কর উপকারিতা

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : অনেকে বাড়িতে শখের বসে প্রাণী পুষে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা কুকুর কিংবা বিড়াল অথবা পাখি হয়ে থাকে। কিন্তু অনেকেই আবার প্রাণী পোষার বিষয়টি এড়িয়ে চলেন।

প্রাণী পোষার একটি আশ্চর্যজনক উপকারিতা হচ্ছে, এটি ক্যানসার শনাক্ত করতে পারে। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও গবেষণা এটাকে সত্য বলে প্রমাণ করেছে। এছাড়া প্রাণী পোষার অন্যান্য উপকারিতাও রয়েছে, যেমন- পোষা প্রাণী আপনার নিঃসঙ্গতা দূর করতে পারে, আপনার স্ট্রেস কমাতে পারে এবং আপনার হার্টকে রক্ষা করতে পারে। এখানে প্রাণী পোষার ১০টি বিস্ময়কর উপকারিতা আলোচনা করা হলো।

* সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যান কাটিয়ে ওঠতে সাহায্য করে
পোষা প্রাণীকে পরিবারের অংশ ভাবলে আপনি সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়া কাটিয়ে ওঠতে পারবেন। অ্যানথ্রোজুস নামক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় স্বেচ্ছাকর্মীদের সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরের অভিজ্ঞতা স্মরণ করতে বলা হয়, তারপর তাদেরকে ছবিতে বিড়াল, কুকুর, খেলনা, বা ব্যক্তির নাম বলতে বলা হয়। যখন আবার তাদের অনুভূতি জানতে চাওয়া হয়, তখন যেসব লোক কোনো প্রাণী বা খেলনার নাম বলেছিল তাদের অনুভূতি যারা মানুষের নাম বলেছিল তাদের চেয়ে কম নেতিবাচক ছিল। এই গবেষণার গবেষকদের মতে, যেসব লোক প্রাণী বা মানুষের অনুরূপ খেলনার সঙ্গে ব্যস্ত থাকে তাদের মনে নেতিবাচক চিন্তা তুলনামূলক কম আসে।

* নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে ওঠতে সাহায্য করে
নিঃসঙ্গতার সঙ্গে হৃদরোগ, অ্যালঝেইমারস এবং অন্যান্য রোগের সংযোগ পাওয়া গেছে। যেসব প্রাপ্তবয়স্কদের পোষা প্রাণী ছিল তাদের ৩৬ শতাংশই বলেছে যে তারা যাদের পোষা প্রাণী ছিল না তাদের তুলনায় কম নিঃসঙ্গতা অনুভব করেছে, অ্যাজিং অ্যান্ড মেন্টাল হেলথে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে। বিশেষ করে যারা একাকী বাস করেন অথবা যাদের পাশে অন্য কোনো লোক থাকে না, পোষা প্রাণী তাদেরকে সামাজিক মিথষ্ক্রিয়ার পরিবেশ দিতে পারে।

* মানসিক চাপের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে
একটি ছোট সুইডিশ গবেষণায় পাওয়া যায় যে, যেসব নারীরা পোষা কুকুরকে আদর করেছে- ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর তাদের স্ট্রেস হরমোন করটিসলের মাত্রা কমে গেছে। কুকুর পোষা আপনাকে আরো উপকারিতা দিতে পারে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী যেসব লোক কুকুর পুষেছিল, পোষা প্রাণীকে আদর করার এক থেকে পাঁচ মিনিট পর তাদের সুখ হরমোন অক্সিটোসিনের মাত্রা বেড়ে গেছে এবং পরবর্তী এক ঘণ্টা পর্যন্ত হার্ট রেট কম ছিল। কিন্তু যাদের পোষা কুকুর ছিল না তাদের একই উপকারিতা ছিল না।

* হার্ট সুস্থ রাখে
একটি বিড়াল পোষা আপনার হৃদরোগ জনিত মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে পারে, জার্নাল অব ভাস্কুলার অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজির প্রতিবেদন অনুসারে। গবেষকরা ২০ বছরের এই গবেষণায় আবিষ্কার করেন যে, যেসব লোক বিড়াল পুষেছিল তাদের হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার ঝুঁকি যারা কখনো বিড়াল পুষেনি তাদের তুলনায় কম ছিল। বিড়াল স্ট্রেস বা মানসিক চাপের সময় লোকজনকে রিলাক্স হতে সাহায্য করে অথবা বিড়াল মালিকদের হৃদরোগের ঝুঁকি তুলনামূলক কম, এই গবেষণার লেখকরা বলেন।

* ব্রেইন শার্প রাখতে সাহায্য করে
অ্যানথ্রোজুসে প্রকাশিত গবেষণায় পাওয়া যায় যে, ঘরে আবদ্ধ যেসব প্রাপ্তবয়স্কের নিজেদের পোষা বিড়াল বা কুকুর ছিল তাদের এক্সিকিউটিভ ফাংশন (মনোযোগ দেওয়া, স্মরণ করা এবং অতীতের অভিজ্ঞতা অনুসারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা) যারা কোনো প্রাণী পুষত না তাদের তুলনায় ভালো ছিল।

* বেশি এক্সারসাইজ করতে ভূমিকা রাখে
আপনি যখন পোষা কুকুরকে নিয়ে হাঁটেন, তখন আপনার স্বাস্থ্যেরও উপকার হয়। কুকুর মালিকেরা মূলত এই কাজটি অন্যান্য এক্সারসাইজ না করার জন্য করে না। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব লোকের পোষা কুকুর থাকে তারা প্রতিসপ্তাহে যারা কুকুর পুষে না তাদের তুলনায় দেড় ঘন্টা বেশি এক্সারসাইজ করেন (অর্থাৎ হাঁটেন)।

* ব্যথা লাঘব করে
কুকুর পোষার উপকারিতা শুধু হাঁটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পোষা কুকুরের সঙ্গে সময় ব্যয় আপনাকে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে। অ্যানথ্রোজুসে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, যেসব লোক জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টের পর কুকুরের সঙ্গে পাঁচ থেকে ১৫ মিনিট সময় কাটিয়েছে তারা যাদের পোষা প্রাণী ছিল না তাদের তুলনায় কম ব্যথানাশক ওষুধ খেয়েছিল।

* শিশুর অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে
যেসব ঘরে পোষা প্রাণী থাকে, সেসব ঘরের শিশুদের পরবর্তী জীবনে অ্যালার্জি বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা কম, ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টালের একটি গবেষণা অনুসারে। এক বছরের কম বয়সের যেসব শিশুদের ঘরে পোষা বিড়াল বা কুকুর ছিল তাদের বয়স ১৮-তে ওই প্রাণীর প্রতি অ্যালার্জিক হওয়ার প্রবণতা একই বয়সের যেসব শিশুদের ঘরে পোষা প্রাণী ছিল না তাদের তুলনায় কম ছিল। অল্প বয়সেই পোষা প্রাণীর সংস্পর্শে আসা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রাপ্তবয়স্করা পোষা প্রাণীর সংস্পর্শে আসলে ইমিউন সিস্টেম একইভাবে কাজ করে না।

* শিশুর রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
নয় থেকে ১৯ বছর বয়সী যেসব শিশু বা কিশোর-কিশোরী পোষা প্রাণীর সেবাযত্ন করে তারা টাইপ ১ ডায়াবেটিস, যারা পোষা প্রাণীর দেখভাল করে না তাদের তুলনায় ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, পিএলওএস ওয়ান নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে। গবেষণাটিতে পাওয়া যায়, যেসব শিশু পোষা প্রাণীর যত্ন নেয় তাদের স্বাস্থ্যসম্মত রক্ত শর্করার মাত্রা বজায় রাখার সম্ভাবনা আড়াই গুণ বেশি, কারণ তারা অধিক দায়িত্বশীল এবং রুটিনের প্রতি অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।

* ক্যানসার শনাক্ত করতে পারে
প্রাণী পোষার একটি অবিশ্বাস্য উপকারিতা হচ্ছে, পোষা প্রাণী ক্যানসার শনাক্ত করতে পারে। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, কুকুর ঘ্রাণের মাধ্যমে অন্ত্রের ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে পারে এবং তা নির্ভুল হওয়ার মাত্রা বিস্ময়করভাবে উচ্চ। একটি বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে ৭৪টি ঘ্রাণ টেস্ট করা হয়, যেখানে শ্বাস ও মলের স্যাম্পল অন্তর্ভুক্ত ছিল। কুকুরটি ৩৬টি শ্বাস টেস্টের মধ্যে ৩৩টি এবং ৩৮টি মল টেস্টের মধ্যে ৩৭টি ক্যানসারযুক্ত স্যাম্পল হিসেবে সঠিকভাবে শনাক্ত করে। গবেষকরা ধারণা করছেন যে, কুকুর অন্যান্য ক্যানসারও (যেমন- মূত্রাশয়ের ক্যানসার, ত্বকের ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার, স্তনের ক্যানসার এবং ডিম্বাশয়ের ক্যানসার) শনাক্ত করতে পারে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ অক্টোবর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়