ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ব্যথা কমাতে অ্যাসপিরিন নাকি ইবুপ্রোফেন, কোনটি খাবেন?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০০, ২৫ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ব্যথা কমাতে অ্যাসপিরিন নাকি ইবুপ্রোফেন, কোনটি খাবেন?

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : আপনি মনে করতে পারেন, ব্যথা উপশমের ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিনের পরিবর্তে ইবুপ্রোফেন অথবা ইবুপ্রোফনের পরিবর্তে অ্যাসপিরিন ওষুধ খাওয়া যেতে পারে, কিন্তু আসলে এমনটা করা যায় না। এ প্রতিবেদনে অ্যাসপিরিন ও ইবুপ্রোফেন ওষুধের মধ্যে প্রকৃত পার্থক্য তুলে ধরা হলো।

ব্যথা উপশমের জন্য ‍ওষুধের দোকানে গিয়ে আপনি হয়তো বিভ্রান্ত হন যে, কোন ওষুধটি গ্রহণ করা উচিত এবং কখন গ্রহণ করতে হবে। একটির পরিবর্তে আরেকটি ব্যবহার করা যাবে এরকম মনে হতে পারে এমন দুটি সর্বাধিক কমন ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ (যা কিনতে ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন লাগে না) হচ্ছে, অ্যাসপিরিন ও ইবুপ্রোফেন। এই দুটি ওষুধ নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (এনএসএআইডি), যা ব্যথা উপশমের জন্য সেবন করা হয় এবং এসব ওষুধ অনেক বছর ধরে ওষুধের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। ফার্মেসি ডাক্তার অ্যালিসে স্ক্যাফিডি বলেন, ‘দুটি ওষুধের মধ্যে সাদৃশ্যতা রয়েছে, কিন্তু একটির পরিবর্তে অন্যটি ব্যবহার করা যায় না।’

তিনি যোগ করেন, ‘শুধু অ্যাসপিরিনে (ইবুপ্রোফেন নয়) রাসায়নিকভাবে সম্পর্কযুক্ত কম্পাউন্ডের একটি গ্রুপ থাকে যাকে স্যালিসিলেট বলে। স্যালিসিলেট হচ্ছে, প্রকৃতিতে পাওয়া এমন রাসায়নিকের একটি গ্রুপ যা স্বাস্থ্য দশার চিকিৎসায় হাজার হাজার বছর ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ প্রাকৃতিকভাবে কিসমিস ও অ্যাপ্রিকটে স্যালিসিলেট পাওয়া যায় এবং কোনো কোনো টুথপেস্টে এটি ব্যবহার করা হয়, হেলথলাইন ডটকমের প্রতিবেদন অনুসারে।

অ্যাসপিরিন ও ইবুপ্রোফেন উভয়েই প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন (শরীরের প্রাকৃতিক হরমোন-লাইক সাবস্ট্যান্স) ব্লক করে, যার ফলে ব্যথা উপশম হয় ও ফোলা হ্রাস পায়, বলেন ডা. স্ক্যাফিডি। কিন্তু কোনটি কখন সেবন করতে হবে অথবা কখন তৃতীয় অপশনের প্রয়োজন হবে?

কখন অ্যাসপিরিন সেবন করবেন?
হার্ট অ্যাটাকের উচ্চ ঝুঁকি : প্রতিদিন লো-ডোজের অ্যাসপিরিন হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে পারে, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে। এর কারণ হচ্ছে, অ্যাসপিরিন রক্ত জমাটবদ্ধতা হ্রাস করতে পারে এবং হার্টে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখে। প্রতিদিন অথবা নিয়মিত অ্যাসপিরিন থেরাপি শুরু করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন- যদি কারো অ্যাসপিরিন অ্যালার্জি অথবা রক্তক্ষরণের ইতিহাস থাকে, তাহলে তার এই থেরাপি গ্রহণ করা উচিত নয়, মায়ো ক্লিনিক অনুসারে।

কখন ইবুপ্রোফেন সেবন করবেন?
* ১২ বছরের কম বয়সের শিশু : ১২ বছরের কম বয়সের শিশুদের ইবুপ্রোফেন অথবা অ্যাসিটামিনোফেন (টাইলিনল) সেবন করানো উচিত, যদি তাদের ফ্লু অথবা চিকেনপক্সের চিকিৎসা চলে। যদিও ৩ বছরের বেশি বয়সের শিশুদের জন্য অ্যাসপিরিন ব্যবহার করা যায়, কিন্তু এসব দশার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে নিরাপদ অপশন নয় এবং তা ১২ বছরের কম বয়সের শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এর কারণ হচ্ছে, অ্যাসপিরিন রেয়ে’স সিন্ড্রোম নামক মারাত্মক দশা বিকশিত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। রক্তকোষ অথবা প্লেটিলেটের ওপর ইবুপ্রোফেনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তেমন উল্লেখযোগ্য নয়, তাই ১২ বছরের কম বয়সের শিশুদের জন্য এটি তুলনামূলক বেশি নিরাপদ।

কখন সেবন করবেন না?
* গর্ভাবস্থা : স্ক্যাফিডি বলেন, সম্ভাব্য জটিলতা এড়াতে গর্ভবতী নারীদের অ্যাসপিরিন ও ইবুপ্রোফেন উভয় ওষুধই এড়িয়ে চলা উচিত। তাই গর্ভাবস্থায় কোনো ব্যথানাশক ব্যবহারের পূর্বে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলাই সর্বোত্তম। গর্ভাবস্থায় সেবনের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ হচ্ছে অ্যাসিটামিনফেন, টুডে ডটকমের প্রতিবেদন অনুসারে। কিন্তু নিশ্চিত হোন যে আপনি দৈনিক সুপারিশকৃত ডোজের চেয়ে বেশি ওষুধ গ্রহণ করছেন না।

* ব্লিডিং ডিসঅর্ডার অথবা হিমোফিলিয়াক : যেকোনো ব্লিডিং ডিসঅর্ডারের রোগীদের লো-ডোজ অ্যাসপিরিন পরিহার করা উচিত, কারণ এটি রক্ত জমাটবদ্ধতা হ্রাস করতে পারে, ডা. স্ক্যাফিডি বলেন। শরীরে রক্তপাত থামাতে রক্তকোষের কার্যক্রমের ওপর অ্যাসপিরিন ও ইবুপ্রোফেন উভয়েই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, কিন্তু অ্যাসপিরিনের প্রতিক্রিয়া তুলনামূলক বেশি। ব্লিডিং ডিসঅর্ডারের কেউ ইবুপ্রোফেন গ্রহণ করলে সতর্কভাবে এটি মনিটর করা উচিত অথবা বিকল্প ওষুধ হিসেবে অ্যাসিটামিনোফেন সেবন করতে পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. স্ক্যাফিডি।

এনএসএআইডি সেবনে অন্যান্য সতর্কতা
ডা. স্ক্যাফিডি বলেন, ‘অ্যাসপিরিন ও ইবুপ্রোফেন উভয়েই একই শ্রেণীর, এ কারণে তাদেরকে একত্রে সেবন করা উচিত নয়। এমনটা করলে পাকস্থলিতে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।’ অতিরিক্ত ব্যথার জন্য কোনো কোনো চিকিৎসক বিকল্প ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন। অন্য চিকিৎসকরা অ্যাসপিরিন অথবা ইবুপ্রোফেনের সঙ্গে অ্যাসিটামিনোফেন প্রেসক্রাইব করতে পারেন, যা একত্রে নিরাপদে সেবন করা যায়, ভেরিওয়েল হেলথ এবং কনজ্যুমার রিপোর্টের প্রতিবেদন অনুসারে।

অ্যাসপিরিনের সর্বাধিক ভুল ব্যবহার হচ্ছে, এটি অতি উচ্চ ডোজে সেবন করা, বিশেষ করে খালিপেটে- এর ফলে পাকস্থলীতে ক্র্যাম্পিং ও অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, ডা. স্ক্যাফিডি বলেন। অ্যাসপিরিনের অন্যতম কমন ভুল ব্যবহার হচ্ছে, মাইগ্রেন ব্যথার চিকিৎসায় এটি ঘনঘন সেবন করা। ডা. স্ক্যাফিডি বলেন, ‘দৈনিক সুপারিশকৃত ডোজের চেয়ে বেশি অথবা সপ্তাহে দুইবারের বেশি অ্যাসপিরিনের ব্যবহারে রিবাউন্ড হেডেক (অত্যধিক ব্যথানাশক ওষুধ সেবনে সৃষ্ট মাথাব্যথা) হতে পারে। ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধের সমন্বয় ব্যবহারেও আপনার রিবাউন্ড হেডেক হতে পারে, যার মধ্যে ক্যাফেইন, অ্যাসপিরিন ও অ্যাসিটামিনোফেন অন্তর্ভুক্ত।’

অন্যদিকে, প্রায়সময় ইবুপ্রোফেনের ব্যবহারে যে কেউ এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে। ইবুপ্রোফেন ব্যবহারের অন্যতম উদ্বেগ হচ্ছে, এটি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, ইবুপ্রোফেন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এই দুই এনএসএআইডির যেকোনোটির অত্যধিক সেবনে পরিপাক সমস্যা, হার্ট অ্যাটাক ও রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যদি আপনার কয়েকদিনের বেশি সময়ের জন্য ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক প্রয়োজন হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়