ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যে ১২ রোগে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৩, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে ১২ রোগে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকে হঠাৎ মৃত্যু হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু সংক্রমণ রোগও হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। সংক্রমণ রোগের ক্ষেত্রে আপনি কতটা অসুস্থ তা নির্ণয় করতে অনেকগুলো ফ্যাক্টর বিবেচনা করতে হয়, বলেন ইলিনয়েসে অবস্থিত অ্যাডভোকেট লুথেরান জেনারেল হসপিটালের ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক রবার্ট সাইট্রনবার্গ।

কিছু রোগের মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্রুত মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু দুশ্চিন্তা করবেন না, কারণ এ প্রতিবেদনে আলোচিত বেশিরভাগ ইনফেকশন বিরল।

* স্ট্রোক
তখনই স্ট্রোক হয়, যখন কোনো ক্লট বা জমাটবাঁধা রক্ত মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালীকে ব্লক করে (অথবা রক্তনালী ছিঁড়ে যায়)- যার ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ইশকেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ক্লট ভাঙনের ওষুধ জীবন বাঁচাতে পারে- কিন্তু সাধারণত তিন ঘণ্টার মধ্যে।

* ম্যালেরিয়া
দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়ার কিছু অংশে এই মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। পি. ফ্যালসিপেরাম নামক একটি বিশেষ ধরনের ম্যালেরিয়া প্যারাসাইট জীবননাশের কারণ হতে পারে, বলেন ডা. সাইট্রনবার্গ। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, এই প্যারাসাইটটি দ্রুত লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস করতে পারে- লোহিত রক্তকণিকা শরীরের টিস্যুতে অক্সিজেন সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি আপনি ম্যালেরিয়া প্রবণ দেশে বা অঞ্চলে ভ্রমণ করতে চান, তাহলে ট্রাভেল মেডিসিন স্পেশালিস্ট অথবা ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন, যিনি আপনাকে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের ওষুধ সুপারিশ করতে পারেন।

* সিভিয়ার ডেঙ্গু
ডেঙ্গু হচ্ছে আরেকটি মশাবাহিত ইনফেকশন যা ফ্লু’র মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে এবং বিশ্ব জনসংখ্যার অর্ধেকেই এর ঝুঁকিতে রয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুসারে। উপসর্গের মধ্যে উচ্চ জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা এবং জয়েন্ট ব্যথা অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এই অসুস্থতা জটিলতায় রূপ নিতে পারে এবং এ অবস্থাকে বলে ‘সিভিয়ার ডেঙ্গু’। তীব্র পেট ব্যথা এবং অনিয়ন্ত্রিত বমির দ্বারা সিভিয়ার ডেঙ্গুকে চিহ্নিত করা যায়, যা প্রাণনাশক হতে পারে। এসব উপসর্গ দেখা দেওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একজন রোগীর মেডিক্যাল সেবা প্রয়োজন হয়। ডা. সাইট্রনবার্গ বলেন, ‘ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক ওষুধ থাকলেও ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য কোনো ওষুধ নেই। আপনি যা করতে পারেন তা হচ্ছে মশা প্রতিরোধক ব্যবহার করা।’

* হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট
হঠাৎ বা সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে হৃদস্পন্দন থেমে যায়। এটি তখনই হয়, যখন আমাদের হৃদপিন্ড সারা শরীরে রক্ত পাম্প করা বন্ধ করে দেয়। বিশ্বে প্রতিবছর অনেক প্রাপ্তবয়স্কের মৃত্যুর জন্য দায়ী অবস্থা হচ্ছে সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং পুরুষেরা এর বর্ধিত ঝুঁকিতে থাকে, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক অনুসারে। প্রায়ক্ষেত্রে সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট জনিত মৃত্যু হয় অ্যারিদমিয়ার (যেখানে হার্টবিট অস্বাভাবিক) কারণে। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ওয়েবসাইটে উল্লেখ আছে, ‘চিকিৎসা করা না হলে কয়েক মিনিটের মধ্যে মৃত্যু হবে।’ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কিছু লক্ষণ থাকলেও এটি প্রায়সময় সতর্ককারী লক্ষণ ছাড়াই হয়ে থাকে।

* নিউমোনিক প্লেগ
ফুসফুস-ভিত্তিক এই প্লেগটি কোনো ইনফেক্টেড ফ্লি (এক ধরনের মাছি) এর কামড় কিংবা কোনো ইনফেক্টেড ব্যক্তির সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। নিউমোনিক প্লেগের প্রাদুর্ভাব আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা না হলে এ রোগটি ১৮ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাণনাশক হতে পারে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুসারে।

* মেনিনগোককসেমিয়া
মেনিনগোকক্কাল ব্যাকটেরিয়া মেনিনগোককসেমিয়া নামক বিরল রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ডা. সাইট্রনবার্গ বলেন, ‘এই ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে এবং খুব দ্রুত অর্গান ফেইলিউর ও মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আমি দেখেছি যে, ভালো অনুভব না করার কারণে জরুরি বিভাগে আসা লোকেরা আট ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছে। এটি খুব আগ্রাসী হয়ে টিস্যুকে ধ্বংস করে, রক্তনালীতে ক্লট সৃষ্টি করে এবং দ্রুত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মৃত্যু ঘটিয়ে থাকে।’ এটি হচ্ছে সর্বাধিক ভয়ংকর ইনফেকশনের একটি। যাদের প্লীহা (একটি অর্গান, যা শরীরকে কিছু ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে) নেই, তারা মেনিনগোককসেমিয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। এটির সর্বোত্তম চিকিৎসা হচ্ছে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ, বলেন ডা. সাইট্রনবার্গ।

* কলেরা
ভাইব্রিও কলেরাই নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত পানি বা খাবার খাওয়ার ফলে পাতলা পায়খানা ও তীব্র ডিহাইড্রেশন হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এটি কারো স্বাস্থ্য মারাত্মক অবনতির দিকে নিতে যেতে পারে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু ঘটাতে পারে। এই অসুস্থতার চিকিৎসা করতে ওরাল রিহাইড্রেশন সল্যুশন অথবা আইভি ফ্লুইড প্রয়োজন।

* ডায়াবেটিক কেটোঅ্যাসিডোসিস
ডায়াবেটিসের (প্রায়ক্ষেত্রে টাইপ ১) এই জীবননাশক জটিলতা তখন ঘটে যখন ইনসুলিনের মাত্রা এতই নিম্ন হয় যে শরীর ফ্যাটকে ভেঙে কেটোনে রূপান্তর করে, যা জমা হয়ে রক্তকে অ্যাসিডিক করতে পারে। এ অবস্থার কিছু উপসর্গ হচ্ছে মাথাব্যথা, মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, বমিবমি ভাব এবং দ্রুত শ্বাসকার্য। দ্রুত চিকিৎসা (ইনসুলিন ও ফ্লুইড) প্রয়োজন, অন্যথায় কেউ সেরিব্রাল এডিমা, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট অথবা কিডনি ফেইলিউরে ভুগতে পারে। ডায়াবেটিকদের জন্য অ্যাডভোকেসি ম্যাগাজিন ডায়াট্রাইবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২৪ ঘন্টার মধ্যে রোগীদের মধ্যে কোনো তীব্র উপসর্গ দেখা দিতে পারে এবং এটি কোমা বা মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে।’

* ইনভেসিভ গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কাল ইনফেকশন
এটিকে ‘মাংস-খাদক স্ট্রেপ ইনফেকশন’ অথবা ‘নেক্রোটাইজিং ফ্যাসিটিস’ও বলে। এ ইনফেকশনটি স্ট্রেপ থ্রোটের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেইন দ্বারা হয়ে থাকে, বলেন ডা. সাইট্রনবার্গ। ত্বক কেটে গেলে এ ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে, যা দ্রুত মারাত্মক ইনফেকশনের দিকে ধাবিত হয়। লাল পিণ্ড হিসেবে এটি প্রকাশ পেতে পারে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা অন্য স্থানে ছড়াতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এটি আপনার পায়ের পাতায় শুরু হলে আপনার পা পর্যন্ত ছড়াতে পারে। দ্রুত শনাক্তকরণের পর অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা আক্রান্ত টিস্যু অপসারণ করতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হবে। যাদের প্লীহা নেই, তারা এ রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকতে পারে।

* সেপটিক শক
রক্তে প্রবাহিত একটি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হচ্ছে সেপসিস বা রক্তদূষণ। প্রায়ক্ষেত্রে মেনিনজাইটিস সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে সেপসিসের সম্পর্ক রয়েছে। সেপসিসের তীব্র পর্যায়ে হঠাৎ করে রক্তচাপ খুব দ্রুত কমে যেতে পারে- এ অবস্থাকে সেপটিক শক বলে। রোগীদেরকে দ্রুত আইসিইউতে নেওয়া ও চিকিৎসা করা প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাত্র ৫০ শতাংশ রোগী ছয় ঘণ্টার মধ্যে নিরাময় লাভ করে। এরপর প্রতি এক ঘণ্টায় বেঁচে থাকার হার ৭.৬ শতাংশ করে কমে যায়।

* টক্সিক শক সিন্ড্রোম
টক্সিক শক সিন্ড্রোম (টিএসএস) হচ্ছে রক্তপ্রবাহের একটি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, যা শরীরের অঙ্গে বিষাক্ত পদার্থ ছড়ায়, জনস হপকিন্স মেডিসিন অনুসারে। এটি প্রায়ক্ষেত্রে ট্যাম্পন (সফট ম্যাটারিয়ালের একটি প্লাগ, যা মাসিকের রক্ত শোষণের জন্য ভ্যাজাইনাতে প্রবেশ করানো হয়) ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ২০১৭ সালে কানাডার ১৬ বছর বয়সী একটি মেয়ের মৃত্যুর জন্য স্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াস ব্যাকটেরিয়াকে দায়ী করা হয়।

* হান্টাভাইরাস
ইনফেক্টেড রডেন্টের (এক ধরনের ইঁদুর) মূত্র কিংবা লালা কিংবা তরলের সংস্পর্শে আসলে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থতায় ভুগে তাদের ৩৮ শতাংশই মারা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র অনুসারে। এটির প্রাদুর্ভাব প্রথম ধরা পড়ে ১৯৭৩ সালে- যেখানে একজন লোকের শ্বাসকষ্ট হয়েছিল এবং তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি খুব দ্রুত মারা যান। এই অসুস্থতায় ফ্লু’র মতো উপসর্গ প্রকাশ পায় এবং এটি শনাক্ত করা কঠিন। কারো মধ্যে এই ইনফেকশন ধরা পড়লে তাকে প্রতিনিয়ত চিকিৎসার মধ্যে রাখা জরুরি, রোগীকে সাধারণত আইসিইউতে তত্ত্বাবধানে রাখা উচিৎ।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জানুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়