ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এসব রোগ ত্বক বিশেষজ্ঞরা শনাক্ত করতে পারে

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ২৩ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এসব রোগ ত্বক বিশেষজ্ঞরা শনাক্ত করতে পারে

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : ত্বকের ডাক্তারের কাজ শুধুমাত্র এটা নয় যে ব্রণ বা বলিরেখার জন্য ক্রিম প্রেসক্রাইব করা কিংবা তিল বা আঁচিল চেক করা। তারা এর চেয়েও বেশি কিছু করতে পারে। ডার্মাটোলজিস্ট বা ত্বক বিশেষজ্ঞের কাছে ভিজিট করলে আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারেন।

ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গ মেডিক্যাল সেন্টারের ডার্মাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লিসা গ্র্যান্ডিনেটি বলেন, ‘ডার্মাটোলজিস্টরা ত্বক পরীক্ষা করে যেসব সমস্যা নির্ণয় করেন তার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই অন্তর্নিহিত ক্রনিক স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।’ ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ডিপার্টমেন্ট অব ডার্মাটোলজির সিনিয়র ডার্মাটোলজিস্ট উইলমা বার্জফেল্ড বলেন, ‘ত্বক হলো আপনার স্বাস্থ্যের জানালা।’ মেডিক্যাল ডার্মাটোলজিস্টরা ইমিউন সিস্টেম সমস্যার (যেমন- লুপাস, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও প্রদাহমূলক আন্ত্রিক রোগ) সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ত্বকের সমস্যা বেশি হারে দেখে থাকেন। এখানে ত্বকের ডাক্তাররা ধরতে পারেন এমন ৯টি রোগ বা স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

* ডায়াবেটিস
ডা. গ্র্যান্ডিনেটি বলেন, প্রায় অর্ধেক ডায়াবেটিস রোগীর ত্বকের সমস্যা থাকতে পারে। প্রধান একটি সমস্যা হলো অ্যাকান্থোসিস নাইগ্রিকানস, যেখানে ঘাড় ও বগলের ত্বক পুরু হয়ে যায়, যা মসৃণ ও কালচে রঙের। ডা. বার্জফেল্ড বলেন, ‘সাধারণত রোগীরা জানেন না যে এসব ডার্ক প্যাচ হলো ডায়াবেটিসের উপসর্গ। আমরা এ উপসর্গ দেখে প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে পারি।’ ডায়াবেটিসের আরেকটি লক্ষণ হলো স্কিন ট্যাগ বা আঁচিল, কিন্তু এটি সবসময় ডায়াবেটিস নির্দেশ করে না। ডা. গ্র্যান্ডিনেটি বলেন, ‘ঘষাঘষি থেকে যে কারো বগল বা কুঁচকি এলাকায় স্কিন ট্যাগ হতে পারে। যদি কারো ডায়াবেটিসের রিস্ক ফ্যাক্টর না থাকে, বেশি ওজন না হয়, ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস না থাকে এবং শুধুমাত্র একটি-দুটি স্কিন ট্যাগ থাকে, তাহলে তাকে ডায়াবেটিস নির্ণয় সম্পর্কিত টেস্ট দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি কারো ঘাড়, বগল ও কুঁচকিতে অনেকগুলো স্কিন ট্যাগ থাকে এবং অ্যাকান্থোসিস নাইগ্রিকানও থাকে, তাহলে আমি সাধারণত তার রক্ত শর্করার মাত্রা অথবা এ১সি লেভেল টেস্ট করি।

* সেলিয়াক রোগ
ডার্মাটাইটিস হার্পেটিফরমিস নামক অতি চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ির গুচ্ছ হলো সেলিয়াক রোগের অন্যতম স্পষ্ট লক্ষণ। এসব ফুসকুড়ি সাধারণত কনুই, হাঁটু, নিতম্ব ও মাথার ত্বকে কমন। ডা. গ্র্যান্ডিনেটি বলেন, ‘যদি আপনার এ অবস্থা থাকে, তাহলে আপনার সেলিয়াক আছে, যদিও প্রত্যেক সেলিয়াক রোগীর ডার্মাটাইটিস হার্পেটিফরমিস থাকে না।’ যাদের ত্বকের এই দশা আছে, কিন্তু কোনো ধরনের পাকস্থলি বা অন্ত্রের সমস্যা অনুভব করে না প্রাসময় তারা তাদের সেলিয়াক আছে জেনে বিস্মিত হন। যখন তারা গ্লুটেনমুক্ত ডায়েট খেতে শুরু করেন, তাদের ত্বক ভালো হতে শুরু করে। গম, রাই ও বার্লিতে গ্লুটেন নামক প্রোটিনটি পাওয়া যায়, যা সেলিয়াক রোগীদের মধ্যে ইমিউন সিস্টেম প্রতিক্রিয়া প্ররোচিত করে।

* রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস
এই প্রদাহজনিত রোগের লক্ষণ কখনো কখনো ত্বকে প্রকাশ পেতে পারে। এ রোগে হাত ও পায়ের ছোট জয়েন্ট ফুলে যায় ও ব্যথা হয়। ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আর্থ্রাইটিস রোগীর আক্রান্ত জয়েন্টের কাছাকাছি ত্বকের নিচে পিণ্ড (সাবকিউটেনিয়াস লাম্প) হতে পারে, জনস হপকিন্স আর্থ্রাইটিস সেন্টার অনুসারে। ত্বক পাতলা হওয়া, হাতের পিঠের ত্বক স্বচ্ছ (আলো চলাচল করতে পারে এমন) হওয়া এবং নখ ভাঙার প্রবণতাও হতে পারে রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের কমন লক্ষণ, বলেন টিইউএলএ স্কিন কেয়ারের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং এনওয়াইইউ স্কুল অব মেডিসিনের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রোশিনি রাজ।

* লুপাস
গালের উপরিভাগে রোদেপোড়ার মতো র‍্যাশ প্রায়ক্ষেত্রে লুপাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিতবাহক হয়ে থাকে। লুপাস হলো একটি প্রদাহজনিত রোগ, যেখানে আপনার ইমিউন সিস্টেম আপনার শরীরের টিস্যু ও অর্গানকে আক্রমণ করে। লুপাস রোগীদের মাথার ত্বকেও র‍্যাশ হতে পারে এবং শরীরের সেসব স্থানেও র‍্যাশ হতে পারে যা খুব বেশি সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসে, যেমন- ঘাড়, বাহুর পিঠ ও পিঠের উপরিভাগ। ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ লুপাস রোগীর ক্ষেত্রে সূর্যালোকের সংস্পর্শ তাদের রোগকে আরো খারাপ করতে পারে, লুপাস ডট অর্গ অনুসারে।

* থাইরয়েড রোগ
ক্রনিক হাইভস বা দীর্ঘস্থায়ী আমবাত (যা ছয় সপ্তাহের বেশি থাকে) হতে পারে গ্রেভ’স রোগ বা হাশিমোটো’স থাইরয়েডাইটিসের মতো থাইরয়েড দশার একটি লক্ষণ, বলেন ডা. গ্র্যান্ডিনেটি। ডাক্তাররা নিশ্চিত নন যে কেন এসব দশা আমবাতে প্ররোচিত করে, কিন্তু তারা ধারণা করছেন যে ইমিউন সিস্টেমের কিছু অংশের বিরুদ্ধে শরীর অ্যান্টিবডি (আইজিই রিসেপ্টর বা ইমিউনোগ্লোবিউলিন ই রিসেপ্টর) ডেভেলপ করে, যা অ্যালার্জিক রিয়্যাকশনকে প্ররোচিত করে।

* প্রদাহজনিত আন্ত্রিক রোগ (ক্রন’স ও কোলাইটিস)
এক-তৃতীয়াংশ আলসারেটিভ কোলাইটিস এবং অর্ধেক ক্রন’স রোগীদের ত্বকে সমস্যা দেখা দেয়, মাউন্ট সিনাই স্কুল অব মেডিসিন এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের গবেষকদের গবেষণাপত্র অনুসারে। কিউটেনিয়াস ক্রন’স রোগের ক্ষেত্রে রোগীর ত্বকের ওপর ফিশার বা ফাটল ও নডিউল বা পিণ্ড বা অস্বাভাবিক টিস্যুর বিকাশ হবে। যখন আমরা তাদেরকে বায়োপসি করি, তখন দেখি যে তারা দেখতে আসলেই অন্ত্রের ক্রন’স রোগের মতো, বলেন ডা. গ্র্যান্ডিনেটি। কোলাইটিস রোগীদের ক্ষেত্রে আরেকটি কমন লক্ষণ হলো পায়োডার্মা গ্যানগ্রিনোসাম- হাঁটু থেকে গোড়ালি, গোড়ালি ও বাহুর ওপর আলসারের মতো লেশন। সাধারণত ছোট ফুসকুড়ি হিসেবে পায়োডার্মা গ্যানগ্রিনোসামের যাত্রা শুরু হয়, কিন্তু ধীরে ধীরে গভীর আলসারে রূপ নেয়, ক্রন’স অ্যান্ড কোলাইটিস ফাউন্ডেশন অব আমেরিকার মতে। প্রদাহজনিত আন্ত্রিক রোগের তীব্রতা বাড়লে এসব ত্বকের দশা আরো খারাপ হতে পারে।

* হেপাটাইটিস সি
এই লিভার রোগে আক্রান্ত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ রোগীর উপসর্গ ত্বকে প্রকাশ পেয়ে থাকে, রুটজার্স নিউ জার্সি মেডিক্যাল স্কুলের গবেষণা অনুসারে। এসব র‍্যাশের মধ্যে ভাস্কুলাইটিস বা রক্তনালির প্রদাহজনিত র‍্যাশ ও লিচেন প্লানাস বা চুলকানির উদ্রেককারী গোলাপী স্ফীত র‍্যাশ অন্তর্ভুক্ত- উভয় র‍্যাশেরই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বা প্যাটার্ন। ডা. গ্র্যান্ডিনেটি বলেন, ‘অনেক রোগী জানেন না যে তাদের হেপাটাইটিস সি আছে। কেউ লিচেন প্লানাস নিয়ে আমার কাছে আসলে আমি তার মধ্যে হেপাটাইটিস সি আছে কিনা চেক করি।’

* অ্যাড্রিনাল অপর্যাপ্ততা
কিডনির ওপরে অবস্থিত অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি করটিসোল নামক গুরুত্বপূর্ণ হরমোন উৎপাদন করে। এ হরমোনটি স্ট্রেসের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখাতে শরীরকে সাহায্য করে। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি পর্যাপ্ত করটিসল উৎপাদন করতে না পারলে অ্যাডিসন রোগের সৃষ্টি হয়, যার ফলে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ প্রকাশ পায়, যেমন- মাংসপেশির দুর্বলতা ও ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, ক্ষুধা কমে যাওয়া, নিম্ন রক্তচাপ ও রক্ত শর্করা এবং আরো অনেক। যেহেতু অ্যাডিসন রোগের উপসর্গ ধীরে ধীরে আসে, তাই প্রায়ক্ষেত্রে এটি তাড়াতাড়ি শনাক্ত করা যায় না। ডার্মাটোলজিস্টরা অ্যাডিসন’স রোগের যে উপসর্গটা দেখতে পান তা হলো কালো হয়ে যাওয়া ত্বক। ত্বকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আরেকটি লক্ষণ হলো অস্বাভাবিক স্ট্রেচ মার্ক বা ফাটা দাগ।

* পুষ্টি ঘাটতি
ডা. বার্জফেল্ড বলেন, ‘নারীদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক হারে চুল পড়ার সবচেয়ে কমন প্ররোচক হলো পুষ্টি ও হরমোন সম্পর্কিত। যারা খুব সীমিত ডায়েটের ওপর থাকেন তারা কার্বস ও মাংস খান না বললেই চলে, ফলে তাদের প্রোটিন, জিংক, ভিটামিন ডি ও আয়রনের ঘাটতি হতে পারে।’ চুল পড়ার অন্য একটি প্ররোচক হলো হরমোনগত সমস্যা, যেমন- অ্যান্ড্রোজেনের আধিক্য, যেখানে পুরুষ হরমোনের প্রাচুর্যতা কিছু পার্শপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে (যেমন- মাথার চুল পড়ে যাওয়া এবং শরীরে লোম ও ব্রণ বেড়ে যাওয়া)।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :
* সুস্থ ত্বকের ১১ গোপন রহস্য
* স্ট্রেস যেভাবে ত্বক অধিকতর খারাপ করে
* চাকরি যেভাবে ত্বকের বয়স বৃদ্ধির কারণ




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়