ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কন্টাক্ট লেন্স পরে ঘুমানো কতটা খারাপ?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৩, ১২ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কন্টাক্ট লেন্স পরে ঘুমানো কতটা খারাপ?

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : সম্প্রতি আপনি কনটাক্ট লেন্সের ব্যবহার শুরু করেছেন। আপনি হয়তো ইতোমধ্যে চোখের ডাক্তারের কাছ থেকে একটি পরামর্শ পেয়েছেন- কন্টাক লেন্স নিয়ে ঘুমাবেন না। যেহেতু ডাক্তার নিষেধ করেছেন, তাই আপনি নিশ্চিতভাবে ধরে নিলেন যে এ অভ্যাসে ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু আপনার মনে এ প্রশ্নটির আবির্ভাব হওয়া স্বাভাবিক যে, কন্টাক্ট লেন্স পরে ঘুমানো কতটা খারাপ?

সাউথ ফ্লোরিডার অপথালমোলজিস্ট ইন্না ওজিরভ বলেন, ‘আমি আমার কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারী রোগীদের প্রথমে যে প্রশ্নগুলো করি তাদের একটি হলো তারা কন্টাক্ট লেন্স নিয়ে ঘুমায় কিনা। একজন কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি এমন কিছু মারাত্মক কর্নিয়াল ইনফেকশনের চিকিৎসা করেছি যাদের সঙ্গে কন্টাক্ট লেন্সের অযথাযথ ব্যবহারের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল।’

কন্টাক্ট লেন্স নিয়ে ঘুমানো ঠিক আছে কিনা এ প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো- না। অনেকেই আছেন যারা ইতোমধ্যে কিছু রাত কন্টাক্ট লেন্স পরিহিত অবস্থায় ঘুমে কাটিয়েছেন এবং লক্ষ্য করেছেন যে কোনো সমস্যাই হয়নি। কিন্তু অতীতের এ সফলতায় বোকা বনে যাবেন না এবং মনে করবেন না যে নিয়মিত কন্টাক্ট লেন্স পরে ঘুমালে কোনো ক্ষতি নেই। আপনার কল্যাণার্থে জানানো যাচ্ছে যে, ঘুমের সময় কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহারে অনেকগুলো ঝুঁকি ও বড়সড় নেতিবাচক ফলাফলের আশঙ্কা রয়েছে। এ অভ্যাসে তীব্র মেডিক্যাল সমস্যা অথবা দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

অল অ্যাবাউট ভিশন ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ১৯৮১ সালে কিছু কন্টাক্ট লেন্সের অনুমোদন দেন। এসব কন্টাক্ট লেন্স না খুলেই টানা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত পরার অনুমোদন পায়। কিন্তু এ অনুমোদনের কিছুদিন পর এফডিএ কিছু কন্টাক্ট লেন্সকে ৩০ দিন পর্যন্ত না খুলেই পরার অনুমোদন দেয়। সময় অতিক্রান্ত হতে থাকে এবং একটা সময় গবেষকরা আবিষ্কার করলেন যে যারা কন্টাক্ট লেন্স পরিহিত অবস্থায় ঘুমিয়েছেন তাদের মধ্যে চোখের ইনফেকশনের হার বেশি ছিল। তাই এফডিএ সময়ের দৈর্ঘ্য কমিয়ে সাতদিনে সীমিত করেছে।

অনেক চোখ বিশেষজ্ঞ জোর দিয়ে বলছেন যে, সারারাত কন্টাক্ট লেন্স পরে ঘুমানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ডা. ওজিরভ বলেন, ‘যদিও সারারাত ব্যবহারের জন্য এফডিএ অনুমোদিত কিছু কন্টাক্ট লেন্স ব্র্যান্ড রয়েছে, কিন্তু তারপরও আমি সবসময় আমার রোগীদেরকে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে অবগত করি। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময়ের মধ্যে কর্নিয়ার কেন্দ্রের আলসার দ্রুত অগ্রগতি লাভ করতে পারে এবং তা কোনো ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তিতে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। কর্নিয়াকে আক্রমণকারী অত্যধিক ক্ষতিকর অণুজীবগুলোর জন্য সবচেয়ে অনুকূল পরিবেশ হলো অন্ধকার, আর্দ্র ও নিম্ন অক্সিজেনের চাপ আছে এমন পরিবেশ। আমাদের ঘুমের সময় অকিউলার সারফেসের ওপর এ ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এর ফলে কন্টাক্ট লেন্সে লেগে থাকা জীবাণু ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।’

কন্টাক্ট লেন্স জনিত আলসারে কত মারাত্মক ড্যামেজ হতে পারে তা দেখাতে ভিটা আই ক্লিনিক মে, ২০১৯ এ ফেসবুকে কিছু গ্রাফিক ফটো পোস্ট করেছে। ভিটা আই ক্লিনিকের ডাক্তাররা ব্যাখ্যা করেছেন যে, কিভাবে দ্রুত-ক্রিয়াশীল ব্যাকটেরিয়া কর্নিয়ার বিপক্ষে যেতে পারে এবং চোখের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ব্যাকটেরিয়াগুলো ৩৬ ঘন্টার মধ্যে চোখের কর্নিয়ায় ভয়াবহ ড্যামেজ সৃষ্টি করতে পারে ও টিস্যুকে মেরে ফেলতে পারে। সঠিক মেডিক্যাল সেবা ছাড়া এটি স্থায়ী ক্ষত ও অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।

সবসময় কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহারে আলসারই একমাত্র ঝুঁকি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন সতর্ক করেছে যে, ২৪ ঘন্টা কন্টাক্ট লেন্স পরে থাকলে কর্নিয়ায় অক্সিজেনের ঘাটতি হয়, যা চোখের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে- যার ফলে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের সক্ষমতা চলে যেতে পারে। ফাউন্ডেশনটি আরো উল্লেখ করেছে যে, কন্টাক্ট লেন্স পরে ঘুমালে চোখ লাল হতে পারে, চোখের পাতায় ফোলা হতে পারে এবং অন্যান্য ইনফেকশন হতে পারে। কন্টাক্ট লেন্স সংক্রান্ত ভুলগুলোর মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ভুল হলো এটি পরে ঘুমানো এবং এ অভ্যাসটি অনিরাময়যোগ্য অন্ধত্বের ঝুঁকিতে রাখে।

ডা. ওজিরভ বলেন, কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীদের এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে কন্টাক্ট লেন্স হলো একটি মেডিক্যাল ডিভাইস এবং এর যথাযথ যত্ন প্রয়োজন। তিনি কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীদেরকে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুসারে চশমা বানাতে পরামর্শ দিচ্ছেন, যেন প্রয়োজনে তা ব্যবহার করা যায়।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ মে ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়