ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সোনালি সময়ে আ.লীগ, আছে সংকটও

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৯, ২২ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সোনালি সময়ে আ.লীগ, আছে সংকটও

নৃপেন রায় : ২৩ জুন ১৯৪৯। রাজধানীর স্বামীবাগের রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের (পরে এর নাম হয় আওয়ামী লীগ) জন্ম হয়েছিল। দেখতে দেখতে ৬৮ বছর অতিক্রম করতে চলেছে দলটি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত যেকোনো সময়ের তুলনায় সোনালি সময় পার করছে আওয়ামী লীগ। তারপরও সংকটের শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকরা। দলে অনুপ্রবেশকারীরাই এখন সংকট তৈরি করছে আওয়ামী লীগে।

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলটি নানা চড়াই-উৎড়াই পার হয়ে ৬৯ বছরে পদার্পণ করবে শুক্রবার। যেকোনো রাজনৈতিক দলের কাছেই এটি একটি বড় অর্জন। ৬৮ বছরে এই ভূখণ্ডে অনেক বড় বড় দলের আবির্ভাব হয়েছে। এসব দলের অনেকগুলোর অপমৃত্যুও হয়েছে, কিংবা দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের নানা বাঁক পেরিয়ে ৬৯ বছরে পা দিতে যাচ্ছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী আর বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগ। বাংলার মানুষের মুক্তি আর অধিকার আদায়ের জন্য গঠিত হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। পুরান ঢাকার বিখ্যাত রোজ গার্ডেনে দলটির জন্মলাভের মধ্য দিয়ে বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন ‘স্বাধীনতা’র বীজ রোপিত হয়েছিল।

১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন স্বামীবাগের রোজ গার্ডেনে নতুন দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। নতুন দল গঠনের বিষয়টিতে তৎকালীন সরকার ভীত হয়ে পড়ে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মওলানা ভাসানীকে গ্রেপ্তার করার আশঙ্কা দেখা দেয়। তখন তাকে আত্মগোপনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। সম্মেলনের দুই দিন আগে তাকে রোজ গার্ডেনে বোরকা পরিয়ে (মতান্তরে কম্বল জড়িয়ে) ঘোড়ার গাড়িতে করে আনা হয়। আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম-সম্পাদক করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। সম্মেলনে দলের নাম দেয়া হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরের দিন ২৪ জুন ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে প্রকাশ্য জনসভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে আন্দোলন শুরু হয়, দীর্ঘ ৬৮ বছরে তার বিরাম নেই। বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে কখনো বিরোধী দল, কখনো ক্ষমতাসীন দল হয়ে দেশ গঠনে অনন্য অবদান রেখে চলেছে মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ এখন যেকোনো সময়ের তুলনায় সোনালি সময় অতিক্রম করছে। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটি এ মুহূর্তে বেশ নির্ভার। সরকারে বড় ধরনের দুশ্চিন্তাও নেই। কিন্তু দলে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে সংকট আছে। এদের সম্পর্কে দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক সজাগ থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ফলে মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের সঙ্গে দলটির তৃণমূল নেতাদের এখন দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর গ্রুপিংয়ের কারণে সংকটে আছে দলটি। যার প্রমাণ ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দল সমর্থিত প্রার্থীর সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা তৃণমূলে সংকটের প্রমাণ দিয়েছে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের চেয়ে দলটির নেতা-মন্ত্রী-এমপিরা আত্মীয়-পরিজন বেষ্টিত হয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করেছে। অনেকে দল ভারী করার জন্য বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের লোকজনে দলে টানছেন। আবার মন্ত্রী-নেতা-এমপিদের এমন আদর্শহীন কর্মকাণ্ডের প্রভাব পড়েছে দলের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনে। তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি, খুনাখুনি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এতে অনেকে আওয়ামী লীগকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলেও তৃণমূলে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে দলটি। দলে গতি সঞ্চার করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ২৩ ও ২৪ অক্টোবর ২০তম জাতীয় সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ। এগিয়ে চলছে তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের প্রত্যয় নিয়ে।

স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শাসক দল ছিল। পরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার ক্ষমতাসীন হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের কাছে পরাজিত হয়। এরপর বহু ঘটনা ও অঘটনের পর ২০০৮ সালে ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ গণরায় নিয়ে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে। দরিদ্র ও পশ্চাৎপদ বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক নতুন, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করে লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে দলটি।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জুন ২০১৭/নৃপেন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়