ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

দৌরাত্ম্য বেড়েছে ‘টানা পার্টির’

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ২৪ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দৌরাত্ম্য বেড়েছে ‘টানা পার্টির’

আহমদ নূর : শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা। ঈদের কেনাকাটা করতে গৃহিনী তাসলিমা আক্তার যাচ্ছিলেন রাজধানীর ধানমন্ডির রাইফেল স্কয়ার শপিং মলে। রিকশায় বসে ফোনে কথা বলছিলেন। মার্কেটের সামনে জ্যামে পড়ায় নামতে যাচ্ছিলেন, সেই সময় এক যুবক তার কান থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে গায়েব হয়ে যায় ছিনতাইকারী।

এর আগের দিন বৃহস্পতিবার রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার তমা। মার্কেটের প্রবেশমুখে যেতেই এক যুবক তার গলা থেকে একটি সোনার চেইন নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই যুবককে ধরতে ধাওয়া করেছিলেন তমা। কিন্তু মার্কেটের সমানের প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে তিনি আর সামনে যেতে পারেননি।

শুধু তাসলিমা বা তমা নয়, ঈদের আগে রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মলের সামনে, কোলাহলপূর্ণ জায়গায় এভাবেই ‘টানা পার্টি’র ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ চক্রের সদস্যরা দিনের আলোতে বা রাতের অন্ধকারে ছিনতাই করছে।

ঢাকা শহরে টানা পার্টির উৎপাত নতুন কিছু নয়। প্রতি ধর্মীয় উৎসব বা সামাজিক, সাংস্কৃতিক উৎসবে সড়ক, বিনোদন পার্ক বা শপিং মলে যখন মানুষের ঢল নামে তখনই এই চক্রের সদস্য তৎপর হয়ে ওঠে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা ছিনতাই করে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, টানা পার্টি হলো, ছিনতাইয়ের একটি নতুন কৌশল। ছিনতাইকারীরা কৌশলে সাধারণ মানুষের ব্যাগ, মোবাইল, গলার দামি চেইন, লকেট, কানের দুল ছিনিয়ে নিয়ে পালায়। ঘটনাস্থলে এতো ভিড় থাকে যে ছিনতাইয়ের পরে ছিনতাইকারী সব মানুষের ভিড়ে গায়েব হয়ে যায়। অনেক সময় ভোক্তভোগী তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারেন যে, তিনি টানা পার্টির দ্বারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। আবার কখনো এটি বুঝতে ভোক্তভোগীর কিছুটা সময়ও লেগে যায়।

ভোক্তভোগীদের কেউ কেউ বলছেন থানায় অভিযোগ লেখাতে গেলে পুলিশ তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে। তারা এমনভাবে জেরা করেন যে, পরবর্তীতে অভিযোগ দিতে তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পুলিশের সদাচরণের প্রশংসাও করছেন।

পুলিশ বলছে, টানা পার্টিকে তরা ছিনতাইয়ের মতোই দেখছেন। এর বিরুদ্ধে তারা তৎপর রয়েছেন। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের অনেক সদস্যকে তারা আটকও করেছেন বলে দাবি করছেন।

মিরপুর এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী রুহুল আবেদীন জানান, তিনি গত ২১ তারিখ টানা পার্টির শিকার হন। এ বিষয়ে তিনি মিরপুর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে পুলিশের বিভিন্ন জেরার মুখে পড়েন। তাদের প্রশ্নের মুখে তিনি শেষে অভিযোগ না করেই থানা থেকে বের হয়ে আসেন।

তিনি বলেন, ‘তাদের কথায় মনে হচ্ছিল আমিই অপরাধী। আমার অপরাধ অপরাধীদের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ করতে গেলাম। তারা এত অযৌক্তিক প্রশ্ন করছিলেন, যা শুনে আমি বিব্রত হয়ে চলে এসেছি।’

আরেক ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি তেজগাঁও থানা এলাকায় টানা পার্টির ছিনতাইয়ের শিকার হন। ওই সময় ছিনতাইকারীরা তার হাতে থানা ল্যাপটপের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ওই ল্যাপটপে তার মূল্যবান কিছু নথিপত্র ছিল। এ কারণে তিনি থানায় অভিযোগ করতে যান। কিন্তু সেখানে তাকে সধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘থানার ডিউটি অফিসার আমাকে বলল জিডি করতে। আর জিডিতে ছিনতাই না লেখে খোয়া গেছে এটি উল্লেখ করতে বলল। আসল ঘটনাটাই এখানে হাইড করে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তারা। হতাশ হয়ে থানা থেকে ফিরে গেছি।’  

তবে পুলিশে সদাচরণের ভূয়সি প্রশংসা করেছেন সংবাদ কর্মী লাইজুল ইসলাম। তিনি জানান, সম্প্রতি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকায় তার সঙ্গে ছিনতাইয়ের একটি ঘটনা ঘটে। সে বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে তারা সহজেই সেটি নিয়ে নেয় এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস জানায়।

এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, যেকোনো ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা তৎপর রয়েছি। ইতোমধ্যে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের তৎপরতায় অজ্ঞান, মলম, ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। টানা পার্টির বিরুদ্ধেও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

স্বল্প সময়ের মধ্যে টানা পার্টির সদস্যদের নিষ্ক্রিয় করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুন ২০১৭/নূর/হাসান/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়