ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের সূচনা

শায়েখ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ৩০ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের সূচনা

শায়েখ হাসান: রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক কেমন হবে- এ নিয়ে ছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও নেতা ‘ইতিবাচক সর্ম্পক’ থাকবে বলে আসছেন। কিন্তু এর সবই ছিল অনানুষ্ঠানিক।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপ-সহকারী লিসা কার্টিসের বাংলাদেশে সফরে আসার কথা। তার সফরের মধ্য দিয়েই ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের উষ্ণ সম্পর্কের শুরু হতে পারে বলে ঢাকায় কর্মকর্তারা আশা করছেন। বাংলাদেশে একদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে রোববার দিনের প্রথমভাগে তার ঢাকায় এসে পৌঁছানোর কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তার সফর স্থগিত করা হয়। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, সুবিধাজনক সময়ে শিগগিরই তিনি বাংলাদেশে আসবেন। এরপর বাংলাদেশে আসতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসন।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া জনিত কারণে লিসা কার্টিসের সফর স্থগিত করা হয়েছে। তবে তিনি বাংলাদেশে সফরে আসবেন এবং তার আগমনের দিনক্ষণ যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে পরে জানানো হবে।  

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক জোরদারে ঢাকায় আসবেন হোয়াইট হাউসের অন্যতম পদস্থ কর্মকর্তা লিসা কার্টিস। জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর হোয়াইট হাউসের গুরুত্বপূর্ণ কোনো কর্মকর্তার এটিই হবে প্রথম বাংলাদেশ সফর।

ঢাকায় কর্মকর্তারা লিসার এই সম্ভাব্য সফরকে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের সূচনা বলে মনে করছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লিসা কার্টিস বাংলাদেশে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করবেন। পৃথক পৃথক সাক্ষাৎ ও বৈঠকে দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রায় সব বিষয়েই আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, লিসা কার্টিস যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপ-সহকারী (ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট) এবং হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক। তার ঢাকা সফরের মূল ফোকাস হবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন। বিশেষ করে গত বছরের পহেলা জুলাই হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারে বিশেষ আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে তার সফরকালে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে।

এই কর্মকর্তা আরো জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় ঢাকা। সে কারণেই লিসা কার্টিসের সফরকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়তে চায়। আর দক্ষিণ এশিয়ার ভৌগোলিক কৌশলগত কারণে বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ বিষয়ে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রাধান্য দেয়। লিসা কার্টিসের সম্ভাব্য সফরও কূটনীতির একটি অংশ। সুতরাং বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব পাবে।’

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা শুরু থেকেই বলে আসছেন, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকবে। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব সময় জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। রাতারাতি কোনো কিছু পরিবর্তনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের একক ক্ষমতা নেই। সেখানে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটেরও ক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং এখনই কোনো পরিবর্তন হবে, এটা ভাবার কারণ নেই।

কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা শুরু থেকেই করা হচ্ছে। এবার বিষয়টিতে ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রহ পাওয়া গেছে। যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সফরে আসবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপ-সহকারী। তাই এই সফরকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। যদিও লিসার এই সফর হচ্ছে পররাষ্ট্র সচিবের আমন্ত্রণে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, লিসা কার্টিসের আগমন উপলক্ষে ঢাকায় নেওয়া হবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কোনোভাবেই যাতে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদরদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থাকে অবহিত করা হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তার প্রশাসনের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে ঢাকা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নতুন করে আলোচনাও শুরু করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চালিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। কিন্তু জিএসপি সুবিধা পাওয়া যায়নি। সে কারণে এই ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। 

জানা গেছে, লিসা কার্টিসের সফরের পরে ঢাকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসনেরও সফর হতে পারে। সে বিষয়েও আলোচনা চলছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ইতোমধ্যেই টিলারসনের কাছে পাঠানো এক বার্তায় তাকে সস্ত্রীক বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বার্তায় জানিয়েছেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে।

রেক্স টিলারসন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় মাহমুদ আলী আন্তরিক অভিনন্দন জানান। সেই সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সুবিধাজনক সময়ে সস্ত্রীক বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানান। আগামীতে সুবিধাজনক সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ঢাকা সফর করতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জুলাই ২০১৭/শায়েখ/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়