ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বাঁধ দুর্নীতির সন্ধানে হাওরে দুদকের ৪ টিম

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৩, ৬ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাঁধ দুর্নীতির সন্ধানে হাওরে দুদকের ৪ টিম

এম এ রহমান মাসুম : হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে এবার সুনামগঞ্জে সরেজমিনে পরিদর্শন করছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক চারটি তদন্ত টিম।

মূলত হাওর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ পরিমাপে যে ২৫টি বিশেষজ্ঞ টিম নিয়োজিত রয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করাই দুদক ওই টিমগুলোর কাজ। পনি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), স্থানীয় প্রশাসন ও দুদকের বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে ওই টিমগুলো। দুদক কেবল ওই টিমগুলোর সঙ্গে থেকে পর্যবেক্ষণ করছে।

টিমগুলো ভবিষ্যতে কাজের পরিমাপের পাশাপাশি পূর্বের অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। যা দুদকের তদন্ত ও অনুসন্ধান কাজে সরাসরি সুবিধা পাওয়া যাবে বলে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এরই মধ্যে দুটি টিম তাদের পরিদর্শনকাজ শেষ করে ঢাকা ফিরেছে।

টিমগুলো হলো- উপ-পরিচালক আবদুর রহিম ও সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি সমন্বয়ে গঠিত টিম এবং দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান ও সাইফুল ইসলামের সমন্বয়ে পৃথক টিম। টিমগুলো গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ এলাকায় পর্যবেক্ষণের কাজ করছেন।

গত ১ জানুয়ারি থেকে সহকারী পরিচালক ফারুক আহমেদ ও দুদক সহকারী পরিচালক জাকারিয়া আহমেদ পরিদর্শনে রয়েছেন। এরপরই আগামী ৯ জানুয়ারি থেকে সহকারী পরিচালক দেবব্রত মন্ডল ও উপ-সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত টিমটি পরিদর্শন করবে।

দুদক টিমগুলো পরিদর্শনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক পরিচালক ও মামলার তদারককারী কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল বাছির। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে অস্বীকার করেছেন তিনি।

তবে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, নিরপেক্ষ পরিমাপের জন্য পাউবো ও ইউএনও অফিসের বাইরে ২৫টি বিশেষজ্ঞ টিম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাজ করছে। এ পরিমাপ হবে গত বছরের যে কাজ হয়েছে সে হিসাব এবং এ বছর যতটুকু কাজ দরকার হবে এর জন্য পূর্ববর্তী হিসাব। এ পরিমাপের বিষয়টিই পর্যবেক্ষণ করছে দুদক টিমগুলো। ৪০০ প্রকল্পের নিরপেক্ষ পরিমাপ করতেই টিমগুলো কাজ করছে। মূলত দুদক দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের কাজ একসঙ্গে করছে। যা আমাদের মামলা তদন্ত ও অনুসন্ধানে কাজে লাগবে। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ দু্র্নীতি বন্ধেও কাজে লাগবে। 

দুদক সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন এ বিষয়ে রাইজিংবিডিকে বলেন, হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধে অনিয়মের ব্যাপারে ইতিমধ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দায়ের করার পর তদন্ত কাজ এগিয়ে চলছে। এ সংক্রান্ত যেকোনো অনুসন্ধান কিংবা তদন্তে যাদেরই সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

গত ২ জানুয়ারি হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম চলতে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ আপিল বিভাগ স্থগিত করার পরই মূলত দুদকের কাজে নতুন গতি আসে। এর আগে মামলার আসামি বাচ্চু মিয়া বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করলে ১২ ডিসেম্বর মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছিল আদালত।

২০১৭ সালের ২ জুলাই সুনামগঞ্জ জেলার পাউবোর ১৫ কর্মকর্তা এবং ৪৬ ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠানসহ ৬১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিল দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন। এর পাশাপাশি ২৩৯টি স্থানীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) দুর্নীতির অনুসন্ধানের কাজটি করছে দুদক টিম।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জের হাওরে প্রতিবছরের মতো এবারো বন্যা আসার সার্বিক তথ্য জানার পরও তা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন আসামিরা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮৪টি প্যাকেজের অসমাপ্ত কাজের জন্য নতুনভাবে টেন্ডার আহ্বান না করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও আগের ঠিকাদারদের কাজের অনুমতি দেওয়া হয়। মোট ১৬০টি প্যাকেজের মধ্যে নয়টির কাজ শুরুই হয়নি। বাকি ১৫১টি প্রকল্পের কাজ আংশিক শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টি করে হাওরের কৃষক ও স্থানীয় জনসাধারণের আর্থিক ক্ষতিসাধন করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন আসামিরা।

পাউবোর ১৫ আসামি হলেন- সুনামগঞ্জ জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (বরখাস্ত) মো. আফছার উদ্দীন, সিলেট বিভাগের প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম সরকার, প্রাক্তন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই, সুনামগঞ্জের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস, খলিলুর রহমান, সেকশন কর্মকর্তা মো. শহিদুল্যা, ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ খান, খন্দকার আলী রেজা, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. শাহ আলম, মো. বরকত উল্লাহ ভূঁইয়া, মো. মাহমুদুল করিম, মো. মোছাদ্দেক, সজীব পাল ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লার ৪৬ জন ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠান মালিকদের আসামি করা হয়েছে। মামলার পরপরই রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে প্রধান আসামি সুনামগঞ্জ জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (বরখাস্ত) মো. আফছার উদ্দীন ও ঠিকাদার বাচ্চু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীকালে তারা আদালত থেকে জামিন নেন।

এছাড়া অনুসন্ধানে বাঁধ নির্মাণে দায়িত্ব পালনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অবহেলার তথ্য পাওয়ায় পানিসম্পদ সচিবসহ ঊর্ধ্বতন ১৩ কর্মকর্তার নাম আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে চিঠি পাঠায় দুদক। কর্মকর্তারা হলেন- পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ড. মোহাম্মদ আলী খান, যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন-১, হাওর) নুজহাত ইয়াসমিন, যুগ্ম প্রধান (পরিকল্পনা অনু বিভাগ) মন্টু কুমার বিশ্বাস, পাউবোর মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর কবির, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পূর্ব রিজিওন) এ কে এম মমতাজ উদ্দিন। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট কমিটির সাতজন হলেন- যুগ্ম সচিব কাজী ওবায়দুর রহমান, শামিম আরা খাতুন, মো. খলিলুর রহমান, উপসচিব নন্দিতা সরকার, মুহম্মদ হিরুজ্জামান, সহকারী প্রধান আবু ইউসুফ মোহাম্মদ রাসেল ও মো. সিদ্দিকুর রহমান।

২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের নেতৃত্বে টিম কাজ শুরু করে। এই টিমের সদস্যরা হলেন- উপ-পরিচালক আবদুর রহিম, সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি, সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ, উপ-সহকারী পরিচালক নেয়ামুল কাজী, সাইফুল ইসলাম এবং তাজুল ইসলাম।

**

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ জানুয়ারি ২০১৮/এম এ রহমান/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়