ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সিলেট-১ আসনে মুহিতের বিকল্প ভাবছেন না কেউ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪১, ২০ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সিলেট-১ আসনে মুহিতের বিকল্প ভাবছেন না কেউ

কেএমএ হাসনাত, সিলেট থেকে ফিরে : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে আবুল মাল আবদুল মুহিতের বিকল্প কোনো প্রার্থীর কথা ভাবতে পারছেন না সিলেটবাসী। তাদের মতে, সিলেটের এই সন্তানের গ্রহণযোগ্যতা ও সুনাম বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ছড়িয়েছে।

শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে নয়, একজন নির্লোভ, সৎ, জ্ঞানী এবং সাদা মনের মানুষ হিসেবে দলমত নির্বিশেষে সিলেট-১ আসনে তাকেই দেখতে চান ভোটাররা। সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা সিলেট-১ আসনে সিলেটবাসীর প্রাণপ্রিয় নেতা আবুল মাল আবদুল মুহিতের বিকল্প ভাবতে পারছি না। দীর্ঘদিন অবহেলিত সিলেটে বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়নের যে ধারা শুরু হয়েছে তা ধরে রাখতে হলে তাকেই প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, সিলেটের আসন ধরে রাখতে হলে তার বিকল্প কোনো প্রার্থী চিন্তা করা যাবে না। সিলেট আসনে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না। এ আসনটি ধরে রাখতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সবাই এটাই চান।

সিলেট-১ আসন নিয়ে বেশ কয়েক দফা সিলেটের বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। এদের মধ্যে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুর রহমান জামিল, মহানগর আওয়ামী লীগের পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক জগদিশ চন্দ্র দাশ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কবিরুল ইসলাম প্রমুখ।

তারা বলেন, সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল নগরীর বুকের ওপর বসে থাকা শতবর্ষের পুরনো কারাগারটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া। এর আগে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সাহেব অনেক চেষ্টা করেছিলেন কারাগারটি সরিয়ে নিতে, কিন্তু নানা চাপের কারণে তিনিও ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সেটি সরিয়েছেন। সিলেটে নতুন কারাগার হয়েছে।

তারা আরো বলেন, গত দশ বছরে সিলেটে যে উন্নয়ন হয়েছে তা গত ১০০ বছরে হয়েছে কি না সন্দেহ। সিলেটে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম হয়েছে, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, দুটি সরকারি মাধ্যমিক স্কুল হয়েছে, খাদিমপাড়ায় ৫০ শয্যার হাসপাতাল হয়েছে, বিমানবন্দর সম্প্রসারণ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কাজটি হয়েছে- ছড়া (খাল) খনন। এই খালগুলো ছিল সিলেট শহরবাসীর সবচেয়ে বড় সমস্যা। সিলেট শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন খাল ভরে যাওয়ায় প্রতি বছর বৃষ্টি ও বর্ষা মৌসুমে আশপাশ এলাকা ডুবে যেত। ফলে নগরবাসীর দুর্ভোগ চরম রূপ নিতো। প্রায় ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় সে সমস্যা থেকে সিলেটবাসী এখন মুক্ত।

সিলেটের নেতারা বলেন, শিক্ষার দিক থেকে সিলেট অনেকটা অনগ্রসর ছিল। নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, সংস্কারসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় শিক্ষা খাতে ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়া, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে।

তারা বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র অন্য দল থেকে নির্বাচিত হলেও অর্থমন্ত্রী দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে সিলেট মহানগরের উন্নয়নে মেয়রকে যা সহযোগিতা করা প্রয়োজন তা তিনি করে থাকেন। সিলেটের উন্নয়নের স্বার্থে আগামী নির্বাচনে সিলেটবাসী তাকে ছাড়া বিকল্প কোনো চিন্তা করছেন না।

সিলেট জিন্দাবাজার এলাকায় ফুটপাতে তৈজসপত্র বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, আগে ধানের শীষে ভোট দিতাম। মুহিত সাবে ছড়ার সমস্যা দূর করছে। ভোট দিলে তাকেই দেব।

নগরীর শিবগঞ্জ এলাকায় রিকশা চালান হামিদ মিয়া। তার বাড়ি ময়মনসিংহে। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় বসবাস করছেন। তিনি সিলেট নগরীর ভোটার। হামিদ মিয়া বলেন, অর্থমন্ত্রী ভোটে দাঁড়াইলে তারেই ভোট দিয়াম, নইলে এরশাদ সাবরে।

সিলেট-১ আসনে এখনো জনপ্রিয়তায় শীর্ষে বর্তমান সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে তিনি বার বার মত পাল্টেছেন। সবশেষে আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই ড. এম এ মোমেন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি সে ক্ষেত্রে নিজ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। তিনি অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও সিলেটের মানুষ মনে করেন, একজন সৎ ব্যক্তি, দক্ষ মন্ত্রী এবং সিলেটের উন্নয়নের রূপকার হিসেবে আবারও আবুল মাল আবদুল মুহিতকেই প্রয়োজন।

দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীও চান আবুল মাল আবদুল মুহিতই প্রার্থী হোন। নেতাকর্মীদের ধারণা, আবুল মাল আবদুল মুহিত যদি আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নেন, তবে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে, এটা নিশ্চিত। আর সেই সঙ্গে যদি আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করে তবে আবারও তিনিই অর্থমন্ত্রী হবেন। ফলে আলোকিত সিলেট তৈরির যে স্বপ্ন তিনি বুকে লালন করেন তা সহজেই বাস্তবায়ন হবে। সেই সঙ্গে তার অসম্পূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে। এছাড়া, সিলেটের সাধারণ মানুষের মধ্যে অর্থমন্ত্রীর প্রতি রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা।

সিলেটের জনগণের কাছে তিনি একজন সৎ এবং নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার হাত ধরেই সিলেটে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থার। সর্বশেষ সিলেটে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। তাই উন্নয়নের স্বার্থে সাধারণ জনগণও চান মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসন থেকে আবারও যাতে আবুল মাল আবদুল মুহিতই নির্বাচন করেন।

জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসন বিশেষ মর্যাদার বলে সমাদৃত। এ আসন নিয়ে গত প্রায় পাঁচটি নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে এক ধরনের মিথ প্রচলিত আছে। এ আসনে যে দলের প্রার্থী জেতেন, সেই দলই ক্ষমতায় যায়। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে এমন মিথ প্রচলিত হওয়ার কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সিলেট-১ আসন বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ।

গত প্রায় দুই যুগে পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, ১৯৯১ সালে এ আসনে নির্বাচন করে বিএনপির প্রার্থী প্রয়াত খন্দকার আবদুল মালিক সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। ওই বছর সরকার গঠন করেছিল বিএনপি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত স্পিকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী জিতেছিলেন। তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঐকমত্যের সরকার গঠন হয়। ২০০১ সালে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান জয়ী হন। বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার গঠন করে। ওই নির্বাচনে প্রথমবার প্রার্থী হয়ে সাইফুর রহমানের কাছে হেরেছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০০৮ নির্বাচনে তিনি জয়ী হন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করে। ২০১৩ সালে অবশ্য বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়ী হন আবুল মাল আবদুল মুহিত।

এদিকে, জানা গেছে, জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারা ও ১৪ দলের শরিকদের জন্য নির্ধারিত আসন খালি রেখে ২৩২টিতে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। বাকি ৬৮টি আসনে দলীয় প্রার্থী তালিকা তৈরি করেনি সরকারি দল। দ্রুতই ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও মহাজোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার প্রস্তুতি রয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় যে ২৩২ আসনের তালিকা চূড়ান্ত করেছে তাতে সিলেট-১ আসনে আবুল মাল আবদুল মুহিতের নাম রয়েছে। একই আসন থেকে তার ছোট ভাইও দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন। কিন্তু দলের হাইকমান্ড এবং সিলেট আওয়ামী লীগের পছন্দ আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ড. মোমেনকে ডেকেছিলেন। তাদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে তা জানা না গেলেও সূত্র জানিয়েছে, ড. মোমেনকে অন্য কোনোভাবে ম্যানেজ করা হবে। তবে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ আবুল মাল আবদুল মুহিতের বিকল্প কোনো প্রার্থীর কথা ভাবছে না।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ নভেম্বর ২০১৮/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়