ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মুদ্রানীতিতে গুরুত্ব পাচ্ছে উৎপাদনশীল খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৮, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুদ্রানীতিতে গুরুত্ব পাচ্ছে উৎপাদনশীল খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি

হাসান মাহামুদ : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা হতে যাচ্ছে একদিন পরেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার প্রতিফলন ঘটতে যাচ্ছে এবারের মুদ্রানীতিতে।

দেশের আর্থিক খাতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রস্তুত করা চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে গুরুত্ব পাচ্ছে উৎপাদনশীল খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি।  থাকছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্য। মূলত দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধানের পরিকল্পনা থেকেই এমন উন্নয়নধর্মী মুদ্রানীতি তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে এ বিষয় নিয়ে রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্বে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবির। মুদ্রানীতি প্রণয়ন কমিটি পর্ষদ সভায় মুদ্রানীতির পাশাপাশি অন্যান্য মূলনীতি নিয়েও আলোচনা করা হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ অপরিবর্তিত ও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থনৈতিক খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে একটি বাস্তব মুদ্রানীতি গঠন করা হয়েছে। দেশে সর্বত্র চাকরির সুযোগ তৈরিতে সহায়তা করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলি (এমএসএমইএস) এবং কৃষিঋণকে ক্ষুদ্রঋণসহ ঋণপ্রবাহ বাড়িয়ে তুলতে পারে। মুদ্রানীতিতে নগদ রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তা (সিআরআর), রেপো এবং রিভার্স রেপোসহ অন্যান্য রেটগুলো ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে অপরিবর্তিত থাকছে।

আগামীকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে বেলা সাড়ে ১১টায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গর্ভনর ফজলে কবির।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবারের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে। কারণ সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের ঘাটতি বাজেটের জন্য তহবিলের প্রয়োজন হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, দেশের আর্থিক খাতের শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সবসময় বাংলাদেশ ব্যাংক সচেতন। মুদ্রানীতিতে এসব বিষয়ে বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার গত ডিসেম্বরে ৩৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে। গত ডিসেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। চলমান মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। তাই যে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কালন করা হয়েছে, তা অর্জন করতে হলে আসন্ন মুদ্রানীতিতে ব্যাংকের ঋণ বাড়ানোর সুযোগ রাখতে হবে। উৎপাদনশীল খাতে ঋণ গেলে কর্মসংস্থান বাড়বে, অর্থনীতি সচল হবে। সে হিসেবেই তৈরি করা হয়েছে অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের মুদ্রানীতি।

আগের ধারাবাহিকতায় প্রবৃদ্ধিবান্ধব এবং একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি পরিমিত রাখার লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সংযত ধরনের মুদ্রানীতি ঘোষণা হয়। জানা গেছে, সেই ধারা থেকে নতুন সরকারের প্রথম মুদ্রানীতি বের হয়ে আসবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতির উর্ধ্বমূখী প্রবণতা দেখা দেওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে মুদ্রাস্ফীতির বিষয়ে সতর্কতার অবস্থান বজায় থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের আভাস পাওয়া গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ২০ শতাংশে নেমে আসে। আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ কম হয়েছে। তবে ২০১৯ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এক মাস আগে নভেম্বরেও মূল্যস্ফীতি ছিল ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করে থাকে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) থেকে অ-খাদ্য এবং অ-জ্বালানি উপাদান বাদ দিয়ে।

এবারের মুদ্রানীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা এবং অর্থবাজারের পাশাপাশি পুঁজিবাজারের সর্বশেষ পরিস্থিতি পরবর্তীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নজরদারি এবং তত্ত্বাবধান শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে মুদ্রানীতিতে ঋণের গুণমান নিশ্চিত করতেও জোর দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এ ছাড়া ঋণ বিতরণে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে করণীয় বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে।

প্রসঙ্গত, দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে পরবর্তী ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি বছর দু'বার মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। ছয় মাস অন্তর এই মুদ্রানীতি একটি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই মাসে এবং অন্যটি জানুয়ারি মাসে।

সাধারণত মুদ্রার গতিবিধি প্রক্ষেপণ করে এই মুদ্রানীতি। মুদ্রানীতির অন্যতম কাজগুলো হলো- মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করা, ঋণের প্রক্ষেপণের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি ঋণের জোগান ধার্য করা এবং মুদ্রার প্রচলন নিয়ন্ত্রণ করা।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জানুয়ারি ২০১৯/হাসান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়