ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নিট লোকসান বাড়বে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৯, ১৭ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নিট লোকসান বাড়বে

কেএমএ হাসনাত: গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের চেয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের নিট লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪৮ কোটি ৪ লাখ টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর এসব প্রতিষ্ঠানের নিট আয় হয়েছিল পাঁচ হাজার ১৭২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নিট মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৩২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শুধু বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বিপুল লোকসানের কারণে এবার নিট লোকসান দেখা দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর। এ বছরে বিপিডিবি লোকসান গিয়ে ঠেকবে ১০ হাজার ২৭১ কোটি ৫৮ লাখ টাকায়।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো দুই হাজার ৬০৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা নিট লোকসান দিয়েছিল। এরপর ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সব মিলিয়ে নিট মুনাফায় রয়েছে। ওই অর্থবছরে (২০১৩-২০১৪) রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট মুনাফা হয়েছিল তিন হাজার ৫৩৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর নিট মুনাফা হয়েছে চার হাজার ৩১৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর রেকর্ড পরিমাণ নিট মুনাফা হয়। এ সময় নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৮৮৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এরপর পরের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে নিট মুনাফা কিছুটা কমে দাঁড়ায় নয় হাজার ৩০৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। নিট মুনাফা কম হলেও ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর পর্যন্ত মুনাফার ধারা অব্যাহত ছিল। এ অর্থবছর নিট মুনাফা হয় পাঁচ হাজার ১৭২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত হিসাবে প্রতিষ্ঠানগুলো নিট লোকসানে আছে। নিট লোকসানের পরিমাণ চার হাজার ৩২৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলতি অর্থবছরে মাত্র ১৩টি প্রতিষ্ঠান লোকসান দিয়েছে। অর্থবছর শেষে এগুলোর মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৩ হাজার ৬৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৩৬৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান বাড়ছে এক হাজার ৭০১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। মুনাফা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা কমে যাওয়ার পাশাপাশি লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান বৃদ্ধি ও মুনাফা অর্জনকারী দু’একটি প্রতিষ্ঠান লোকসান দেওয়ার কারণে লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৩টি লোকসানি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানও গত অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে বিপিডিবি’র লোকসান প্রাক্কলন করা হয়েছে ১০ হাজার ২৭১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে সংস্থাটির মোট লোকসানের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ২৮৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাৎ, গত অর্থবছরের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটি এবার ৯৮৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা অতিরিক্ত লোকসান দিতে যাচ্ছে।

অন্যান্যের মধ্যে চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯৮১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে ৮৩৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা); বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) লোকসান দাঁড়াবে ৯১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে ৫৫৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা); বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) লোকসান দাঁড়াবে ৬৯৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে ৪৯৭ কোটি চার লাখ টাকা)। অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) লোকসান গত অর্থবছরের তুলনায় কমছে। চলতি অর্থবছর শেষে বিআরটিসির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে ৯৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা)। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের পরিমাণ সব মিলিয়ে ১০০ কোটি টাকার মতো দাঁড়াবে।

এদিকে চলতি অর্থবছরে মুনাফা কমে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। চলতি অর্থবছর শেষে বিপিসি’র মুনাফার পরিমাণ দাঁড়াবে এক হাজার ৯৪৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে মুনাফা হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা); বিটিআরসির মুনাফার পরিমাণ দাঁড়াবে দুই হাজার ৫৪৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে মুনাফা করেছে ছয় হাজার ২৬২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা); সিভিল এভিয়েশন অথরিটির (সিএএ) মুনাফার পরিমাণ দাঁড়াবে ৩৫৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে মুনাফা করেছে ৬৮৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা)।

এ ছাড়া গত অর্থবছরের তুলনায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও রাজউকের মুনাফা এবার বাড়ছে। চলতি অর্থবছর শেষে আরইবির মুনাফার পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৯২ কোটি ৩১ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে মুনাফা করেছে ৩৫১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা) এবং রাজউকের মুনাফার পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৮৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে মুনাফা করেছে ৪১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা)। এদিকে এসব প্রতিষ্ঠানের নিট মুনাফা কমে যাওয়ার কারণে চলতি বছরে সরকারকে প্রদেয় মোট লভ্যাংশের পরিমাণও কমে যাবে।

চলতি ২০১৮-২০ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট নিট মুনাফা প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কমে যেতে পারে বলে বছরের শুরুতেই অর্থ বিভাগের এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল। ওই পূর্বাভাসে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট মুনাফা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং এর বিপরীতে অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় না করার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষত, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিপিসি লোকসানে থাকবে বলে সংস্থাটি কোনো মুনাফা অর্জন করবে না। এ ছাড়া আমদানিকৃত প্রাকৃতিক তরল গ্যাসও (এলএনজি) ভর্তুকি মূল্যে অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রয় করা হবে। এ কারণেও লোকসানের পরিমাণ আগামীতে আরো বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বড় ধরনের লোকসানের মুখোমুখি হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট লোকসান চলতি অর্থবছর বৃদ্ধি পাবে। যে হিসাব করা হয়েছে তা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর আরো দুই মাসের লোকসান যোগ হলে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাগুলোর নিট লোকসান আরো বাড়বে।




রাইজিবিডি/ঢাকা/১৬ জুন ২০১৯/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়