ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আন্দোলনে বছর পার

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আন্দোলনে বছর পার

আহমদ নূর : ২০১৮ সালে বিভিন্ন দাবি আদায়ে দেশব্যাপী আন্দোলনের সূত্রপাত। যৌক্তিকতা অনুভব করে সরকার দাবিও মেনে নেয়। এসব আন্দোলনের শুরুর একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন নিরব ছিল, তেমনই কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখলে তারা কঠোরও হয়েছেন।

বেসরকারি শিক্ষক জাতীয়করণ আন্দোলন:
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে বছরের শুরুতে আন্দোলনে যান শিক্ষকরা। শিক্ষকরা তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেন। আন্দোলনের সর্বশেষ তারা আমরণ অনশনে যান ও বিদ্যালয়গুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে সরকার তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানায়।

কোটা সংস্কার আন্দোলন :
কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের ৫ দফা দাবি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সরকারি চাকরি প্রত্যাশীরা তাদের ধারাবাহিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ও দেশের কয়েকটি স্থানে মানববন্ধন করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি পুনরায় সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করা হয়। এরপর ৪ মার্চ দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ৬ মার্চ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে জানানো হয়, আপাতত কোটা সংস্কার হচ্ছে না। তবে আদেশে উল্লেখ করা হয় যদি কোটায় প্রার্থী না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করা হবে। ৮ এপ্রিল ঢাকার শাহবাগে কোটা সংস্কারের পক্ষে বিক্ষোভ শুরু হলেও ধিরে ধিরে সেটি দেশের প্রায় সবকটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচির কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের দাবি মেনে নিয়ে ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে তিনি সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন :
বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় ঢাকায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশে কার্যকর সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন চলে। নিহত দুই কলেজ শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে দেশের অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়ে এবং নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে পড়ে।

পরবর্তীতে ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা একটি খসড়া ট্রাফিক আইন অনুমোদন করে। যেখানে উল্লেখ করা হয়, ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যায় মৃত্যদণ্ড এবং বেপরোয়াভাবে চালিয়ে কারো মৃত্যু ঘটালে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হবে। যদিও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছিল। পরে ৮ আগস্টের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।

চাকরির প্রবেশের বয়স বাড়ানোর আন্দোলন :
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তর, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে আবেদন জমা দিয়ে আসছে। তাদের দাবির স্বপক্ষে অবস্থান নিয়ে গত ২৭ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার সুপারিশ করেছে। সর্বশেষ গত ১০ সেপ্টেম্বর এই সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির বিষয়টি সরকার যে ইতিবাচাক দিক থেকে বিবেচনা করছে তার অন্যতম কারণ হলো মানুষের গড় আয়ুবৃদ্ধি।

পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি :
সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা পরিবর্তনের দাবিতে ২৮ অক্টোবর ভোর ৬টা থেকে দেশজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস হয়েছে। এই আইনে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা ও পরিপন্থী উভয় ধারা রয়েছে। এছাড়া, সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে, অপরাধ হিসেবে গণ্য করে আইন পাস করা হয়েছে।

#মি টু আন্দোলন :
বছরের শেষদিকে এসে হলিউডে শুরু হওয়া #মি টু আন্দোলনের ছোঁয়া পায় বাংলাদেশ। নভেম্বর মাসে বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম ব্যক্তি ও শিল্পপতির বিরুদ্ধে নারীদের যৌন হেনস্তার অভিযোগে ওঠে। যদিও অভিযুক্তরা তাদের ওপর আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ ডিসেম্বর ২০১৮/নূর/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়