ভুয়া ভাইরাল ভিডিও যেভাবে চিনবেন
প্রতীকী ছবি
মোখলেছুর রহমান : বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর কল্যাণে অনেক ভিডিও-ই দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। এতে করে অনেক ইস্যু বা ঘটনা দ্রততম সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, যা নিয়ে হচ্ছে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা।
কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এ সমস্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর কল্যাণে অনেক ফেক বা ভুয়া ভিডিও ও ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে এবং সত্য-মিথ্যা বিবেচনা না করেই সে সমস্ত ভিডিওগুলো আমরা শেয়ার করছি আমাদের পরিচিতজনদের সঙ্গে। ভাইরাল হওয়া কোনো ভিডিওর সত্যতা যাচাই না করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা মোটেই উচিত নয়।
এখন প্রশ্ন হলো কি করে বুঝবেন যে, একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিও আসল নাকি ভুয়া?
এক্ষেত্রে আপনি চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট বিশেষজ্ঞ অ্যালান মেলিকজানিয়ান এর কিছু টিপস অনুসরণ করতে পারেন। তিনি দীর্ঘ এক দশক ধরে ‘ক্যাপ্টেন ডিসইল্যুশন’ নামে সুপরিচিত একটি ইউটিউব সিরিয়ালের মেলিকজানিয়ান নামক চরিত্রটিতে অভিনয় করে আসছেন। তিনি খুব কাছ থেকেই পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, আসলে ঠিক কিভাবে এসব মিথ্যা বা জালিয়াতিমূলক ভিডিওগুলো ধারণ বা নির্মাণ করা হয়, যা পরবর্তীতে ইউটিউবের মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওতে রুপান্তর হয়।
তার দেয়া কার্যকরী কিছু টিপস এখানে তুলে ধরা হলো :
* নিজের বিবেক দিয়ে বিবেচনা করুন : মেলিকজানিয়ান বলেন, ‘আমি মনে করি ফেক ভিডিও চিহ্নিত করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে, নিজের মনকে প্রশ্ন করা। প্রথমতো আমি বলব যে, যদি আপনি কোনো ভিডিওতে একটি অস্বাভাবিক জিনিস দেখেন, তাহলে নিজেকেই আগে জিজ্ঞেস করুন: ‘এটা কি আদৌ সত্যি?’
প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এর মাধ্যমে আমাদের সামনে প্রচুর অস্বাভাবিক ভিডিও ভেসে আসছে যা প্রথম দেখায় অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু তা বাস্তব এবং পুরোপুরি স্বাভাবিক ঘটনা। তাই কোনো ভিডিওর সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য গুগলের সাহায্য নিতে পারেন যে, আদৌ ওই ঘটনাটি সত্য কিনা বা এ বিষয়ে আরো কোনো উদাহরণ রয়েছে কিনা। এছাড়াও সংবাদপত্রের কাভারেজকেও এক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন।
* উৎস খুঁজুন : মেলিকজানিয়ান বলেন, ‘যদি সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরেও কোনো ভিডিও সম্পর্কে আপনার মনে কোনো সন্দেহ বা অস্পষ্টতা থেকে থাকে, তবে আপনি ভিডিওটির উৎস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। আপনি এক্ষেত্রে ভিডিওটির শিরোনাম অনুসন্ধান করার মাধ্যমে এবং এটি প্রথমবারের মতো কখন আপলোড করা হয়েছিল তা খোঁজার মাধ্যমে অথবা থাম্বনেলের চিত্র সম্পর্কে গুগলে অনুসন্ধান করার মাধ্যমে এর উৎস যাচাই করতে পারেন।
আর যদি ভিডিওটি কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করা হয়ে থাকে, তাহলে তাদের অ্যাকাউন্ট কতদিন সক্রিয় এবং অন্য ব্যবহারকারীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের ইতিহাস আছে কিনা তা যাচাই করে দেখুন। যদি তা না হয়ে থাকে, তবে সম্ভবত এটি একটি ফেক ভিডিও হতে পারে।
* ভিডিও নির্মাতার ব্র্যান্ড খুঁজুন : অনেক সময় দেখা যায় যে, ভিডিওটির আপলোডার একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। বেশিরভাগ ভাইরাল ভিডিও-ই প্রকৃতপক্ষে স্পর্শকাতর সামগ্রীর বিজ্ঞাপন যা নির্দিষ্ট পণ্য বা ব্র্যান্ডের দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যেই নির্মিত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো নির্মাতাদের তৈরি একটি ভিডিও দেখছেন, যেখানে সুপার শক্তির টেপের দক্ষতা হিসেবে টেপ দিয়ে দরজা খোলা কিংবা আলোর সুইচ চালু করা যায়। কিন্তু আপনি হয়তো কখনো জানতেই পারবেন না যে, এটি আসলে সুপার শক্তির জানালার একটি বিজ্ঞাপন।
* ভিডিও ফুটেজটি যাচাই করুন : একটি ভিডিও ফেক কিনা তা যাচাই করার জন্য অবশ্যই প্রথমে ভিডিওটি ডাউনলোড করাই সর্বোত্তম পন্থা। এরপর ভিডিওটি ফ্রেম বাই ফ্রেম দেখতে হবে, কোনো অসঙ্গতি আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য। এটি করতে কোনো বিশেষ উন্নত সফটওয়্যারের প্রয়োজন নেই।
মেলিকজানিয়ান এক্ষেত্রে শট বাই শট পরীক্ষা করা এবং সম্পাদনায় কো ভিজ্যুয়াল প্রভাব ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার উপরই বেশি জোর দেন। তার মতে, বেশিরভাগ মিথ্যা বা জালিয়াতিমূলক ভিডিওগুলোতে নিম্নমানের ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করা হয়, যা থেকেও বুঝা যায় ভিডিওটি ফেক কিনা।
* ভিডিও নিয়ে খুব বেশি ভাববেন না : মেলিকজানিয়ান বলেন, তিনি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি দেখতে পেয়েছেন তা হলো জেনুইন ভিডিও নিয়েও সন্দেহ করা। তাই তিনি মনে করেন এক্ষেত্রে নিজের মধ্যে থাকা অতি সন্দেহ প্রবণতাকেও দূর করতে হবে। একটি ভিডিওর সত্যতা যাচাই করার জন্য ওপরের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন, তাই বলে কোনো ভিডিও নিয়ে খুব বেশি ভাবতে যাবেন না।
তথ্যসূত্র : দ্য ভার্জ
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ আগস্ট ২০১৭/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন