ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

মানব ক্লোনিং: খুব কাছে পৌঁছেও, বাধা কোথায়?

নিয়ন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ২১ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ১৭:৫৩, ২৩ আগস্ট ২০২১
মানব ক্লোনিং: খুব কাছে পৌঁছেও, বাধা কোথায়?

প্রতীকী ছবি

বিগত সময়ের সাইন্স-ফিকশন লেখকেরা যদি কোনোভাবে বর্তমান সময়ে আসতেন, তারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করতেন- ক্লোন কোথায়?

একুশ শতকে পৌঁছে ভাবা হয়েছিল বিজ্ঞানীরা হয়তো যেকোনো দিন মানব ক্লোনিং শুরু করতে পারে। ১৯৯৭ সালে, প্রথম ক্লোন স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্ম হয়। এটি ছিল একটি ভেড়া, এর নাম রাখা হয় ডলি। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ বায়োএথিক্স পরিষদ গঠন করেন এবং সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমির একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। উভয় রিপোর্টেই বলা হয়, এই টেকনোলজি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটা নিষিদ্ধ করা উচিত। এমনকি এটা নিয়ে গবেষণা বা চিকিৎসাতেও ব্যবহার করা নিষেধ করা উচিত। মিডিয়াতে তোলপাড় শুরু হয় এই রিপোর্টগুলো নিয়ে। এমনকি আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার একটা সিনেমায় দেখান যে, কিভাবে একজন মানুষের ক্লোন তার জীবন কেড়ে নিয়েছে।

হ্যাঁ, এরপর অনেক বছর পার হয়ে গিয়েছে, জেনেটিক্স এর গবেষণা অনেক এগিয়ে গিয়েছে, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, আমরা আসলে মানব ক্লোন তৈরির খুব কাছে চলে গিয়েছি।

কিন্তু কেবল এটাই শেষ কথা নয়। বৈজ্ঞানিক ব্যাপারগুলো ছাড়াও মানব ক্লোনিংয়ে আরো কিছু বাঁধা ছিল।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নব্বই এর দশকে ডলির জন্মের পিছনে ছিল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। প্রায় একশোটি ক্লোন ভেড়ার মৃত্যুর পর ডলির জন্ম হয়, এদের অধিকাংশই জন্মগত ত্রুটির কারণে মারা যায়। বিজ্ঞানীরা এসব ত্রুটির খুব অল্প কিছুই দূর করতে পেরেছেন।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তারা জেনেটিক কোডিং এর মাধ্যমে একটি অপরিপক্ব ভ্রূণ কিভাবে সুস্থ অবস্থায় জন্ম নিতে পারে সেই উপায় বের করতে সক্ষম হন।

এই বৈজ্ঞানিক সফলতার কারণে কিছু কিছু কোম্পানির জন্য বেশ সুবিধাই হয়। তারা তাদের কাস্টমারদের প্রিয় কোনো পোষা প্রাণীর ক্লোনিং করে দেয়ার জন্য বেশ ভালো রকমের মূল্য দাবি করতে শুরু করে। বাস্তবেও এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে, একজন চাইনিজ বিজ্ঞানী একটি পোষা বানরের ক্লোন করতে সক্ষম হন।

এই সমস্ত ঘটনা কি এই দাবি-ই করে না যে, আমরা মানব ক্লোনিং এর খুব কাছে চলে এসেছি? কিন্তু ভেড়া ক্লোনিংয়ের মতোই মানব ক্লোনিং করতে গেলেও বেশ কিছু অপরিপক্ব মানব শিশুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যেতে হবে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এটা ভ্রূণ হত্যার সামিল। আর তাই বায়োএথিক্স পরিষদ এটাকে অনুমোদন করবেন এটা ভাবাও ভুল।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অনেক দেশই এই প্রক্রিয়া অনুমোদন করবে না। সেন্টার ফর জেনেটিক্স অ্যান্ড সোসাইটির মতে, বিশ্বের প্রায় ৪৬টি দেশে যেকোনো ধরনের ক্লোন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এবং ৩২টি দেশে ক্লোনিং এর মাধ্যমে জন্মদান বিশেষ করে মানব ক্লোনিং নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র চিকিৎসার ক্ষেত্রে মানব ক্লোনিং এর ক্ষেত্রটি এখনো নিষিদ্ধ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পনেরটি স্টেটস এ ক্লোনিং এর মাধ্যমে জন্মদান নিষিদ্ধ এবং তিনটি স্টেটস এ সরকারি অর্থায়নে ক্লোনিং গবেষণা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তবে এসব ক্ষেত্রে এটা বলা যায় না যে, কোনো বিজ্ঞানী নিষিদ্ধ কোনো কিছু নিয়ে গবেষণা করা বন্ধ রাখবে। অতীতেও এমন অনেক দেখা গেছে যে, আবিষ্কারের নেশায় অনেক বিজ্ঞানীই বিভিন্ন নিষিদ্ধ গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন।  কিন্তু যেহেতু মানব ক্লোনিং অনেক খরচ সাপেক্ষ এবং বিশাল ল্যাবের প্রয়োজন পরে তাই শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ল্যাবে এই গবেষণা চালু রাখা যাবে, এই আশা করাটা বেশ ভুল। কাজেই শুধুমাত্র পাগলাটে ধনাঢ্য ব্যক্তি যদি সকল প্রকার নিষেধ ও প্রশ্ন উপেক্ষা করে এই গবেষণায় অর্থায়ন করে তবেই শুধুমাত্র মানব ক্লোনিং এর গবেষণা চালু রাখা সম্ভব।

যেহেতু চায়নায় এখনো অনেক ক্ষেত্রেই ক্লোনিং নিষিদ্ধ করা হয়নি তাই অনেকেই ভাবছেন যে, সফল ভাবে বানর ক্লোনিং করার পর চায়নায় বিজ্ঞানীরা এখন মানব ক্লোনিং এর গবেষণার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এখন দেখার বিষয় এই যে, যদি চায়নায় বিজ্ঞানীরা এই গবেষণা অব্যাহত রাখেন তাহলে হয়তো তারা বহির্বিশ্বের সকল বৈজ্ঞানিক এবং কূটনৈতিক সংস্থা তাদের বর্জন করবে।

অন্তত এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এমন কোনো জায়গা যেখানে বিজ্ঞানীদের যদি কোনো আইনগত বাধা নাও থাকে, তবুও মানব ক্লোনিং থেকে বিরত থাকার জন্য শুধুমাত্র এই চাপই যথেষ্ট।

তথ্যসূত্র : ফিউচারিজম

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়