ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

রঙিন পোশাকে চেনা বাংলাদেশ, জিতল সহজেই

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৩, ২২ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রঙিন পোশাকে চেনা বাংলাদেশ, জিতল সহজেই

ইয়াসিন হাসান: ২০০৭ বিশ্বকাপে প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামেই নিজেদের ফিরে পেল টাইগাররা। ভাঙল ব্যর্থতার বৃত্ত।

৪৮ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ব্যাট-বলে দাপট দেখিয়ে, চোখে-চোখ রেখে লড়াই করে জিতেছে লাল-সবুজ জার্সীধারীরা।

তামিমের সেঞ্চুরি, সাকিবের হাফ সেঞ্চুরি এবং মুশফিকের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে লড়াকু পুঁজি বাংলাদেশের। পরবর্তীতে মাশরাফির দুর্দান্ত বোলিং, মুস্তাফিজের ধারালো আক্রমণ এবং মিরাজ, মোসাদ্দেকের দ্যুতি ছড়ানো ঘূর্ণিতে শেষ হাসিটা হাসে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে রঙিন পোশাকে দূর্দান্ত বাংলাদেশের উড়ন্ত সূচনা।

টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪ উইকেটে ২৭৯ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেমে যায় ৯ উইকেটে ২৩১ রানে। ৪৮ রানের বিশাল জয়ে ওয়ানডে সিরিজের যাত্রা দারুণভাবে শুরু করল টিম বাংলাদেশ।  

স্কোরবোর্ডে লড়াকু পুঁজি পেলেও ব্যাটিংয়ে শুরুটা ছিল বাজে। দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট। প্রস্তুতি ম্যাচে শূন্য রান করা এনামুলের ওপর আস্থা রেখে একাদশের বাইরে রাখা হয় শান্ত ও লিটনকে। কিন্তু দলে ফেরা এনামুল আউট হন শূন্য রানেই। হোল্ডারের বলে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন।
 


পরের গল্পটা তামিম ও সাকিবের। ২০৭ রানের জুটি গড়েন দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।  দ্বিতীয় উইকেটে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি জুটি এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সব মিলিয়ে  তৃতীয় সর্বোচ্চ।

রেকর্ডের পাতা ওলটপালট করলেও সহজ ছিল না তাদের যাত্রা। নড়বড়ে শুরু করেন দুজনই। মন্থর উইকেটে বল আসছিল না স্বাভাবিক গতিতে। দেখেশুনে খেলতে হচ্ছিল প্রতিটি বল। পাশাপাশি আউটফিল্ডও ছিল বাজে!

সংগ্রাম করে উইকেটে থিতু হতে হয়েছিল সাকিব, তামিমকে। দুরূহ উইকেটে স্বাভাবিক ব্যাটিংও কঠিন হচ্ছিল। তাইতো নবম ওভারে পেতে হয় প্রথম বাউন্ডারের স্বাদ। প্রথম পাওয়ার প্লে’তে রান মাত্র ৩১! এবং ৬০ বলের ৪৪টি ডট! কিন্তু উইকেটে সেট হওয়ার পর আপন মহিমায় দুই ব্যাটসম্যান। নিজের চিরচেনা রাস্তায় স্বাভাবিক তাদের পথচলা।

প্রথমে পঞ্চাশ, তারপর একশ, এরপর দেড়শ, সবশেষে দুইশ রানের জুটি। তাতেই যেন শুরুর ধাক্কা সামলে নিল টাইগাররা। তাদের ২০৭ রানের জুটিতে প্রাণ পায় বাংলাদেশ শিবির। কিন্তু এ জুটি ভাঙে আক্ষেপে। দলের সেরা তারকা সাকিব আউট হন ৯৭ রানে। সেঞ্চুরির পথে থাকা সাকিব আগ্রাসন দেখিয়ে বিশুর বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিড উইকেটে। ১২১ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৯৭ রানের ইনিংসটি সাজান সাকিব।
 


সাকিবের মতো ভুল করেননি তামিম। সেঞ্চুরির ‘দুই অঙ্কে’ পৌঁছান ১৪৬ বলে। ১৪৬ বলে সেঞ্চুরি, ওয়ানডে ইতিহাসে বাংলাদেশের মন্থরতম। সেঞ্চুরির পর হাত খুলে মেরে ১৩০ রানে অপরাজিত।  

কিন্তু ধীর গতির ব্যাটিংয়ের পর দরকার ছিল ঝোড়ো আক্রমণ। কাজের কাজটা করে দেন মুশফিক। ভুল সিদ্ধান্তে ৩ রানে সাব্বির স্ট্যাম্পড হওয়ার পর ক্রিজে আসেন মুশফিক। এসেই খেলেন ১০ বলে ৩০ রানের ইনিংস। হোল্ডারের করা ৪৯তম ওভারে ২ চার ও ছক্কায় আদায় করেন ২২ রান। পরের ওভারে তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ মিলে রাসেলের ওভার থেকে পান ২১ রান। শেষ দুই ওভারে ৪৩ রান তুলে তরতাজা বাংলাদেশের পুঁজি। ৪ উইকেটে ২৭৯ রানের লড়াকু সংগ্রহ তুলে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে টাইগার শিবির। তামিমের ১৩০ রানের সঙ্গে শেষ বলে ৪ রানে অপরাজিত মাহমুদউল্লাহ।

৮৭ বলে ফিফটি ছোঁয়া তামিম তিন অঙ্কে পৌঁছান পরবর্তী ৫৯ বলে। শেষ পর্যন্ত ১৬০ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ১৩০ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। ধীরগতিতে ব্যাটিং করলেও দলের প্রয়োজন ভালোভাবেই মিটিয়েছেন দেশসেরা ওপেনার। তাইতো ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে।

২৮০ রানের লক্ষ্যে সতর্ক শুরু ওয়েস্ট ইন্ডিজের। দুই ওপেনার এভিন লুইস ও ক্রিস গেইল সহজাত ব্যাটিংয়ের পরবর্তীতে উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেন। গেইল সফল হলেও লুইসকে ফেরান মাশরাফি। ধারাবাহিক ভালো বোলিংয়ের পুরস্কার পান মাশরাফি। দলীয় ২৭ রানে এভিন লুইসকে (১৭) মিড অফে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচে পরিণত করেন অধিনায়ক।
 


১৩তম ওভারে রুবেল বোলিংয়ে এসে প্রথম বলে সাফল্য দেয় বাংলাদেশকে। বাড়তি গতির সঙ্গে হাল্কা সুইং। তাতেই পথ ভুলেন শাই হোপ। এলবিডব্লিউ হয়ে আউট ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তৃতীয় উইকেটে ৪০ রানের জুটি গড়েন গেইল ও হেটমায়ার। বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল এ জুটি। বিশেষ করে গেইলকে ফেরানো দরকার ছিল ওই সময়ে। ভাগ্যদেবীকে পাশে পায় বাংলাদেশ। হেটমায়ার-গেইল ভুলবোঝাবুঝিতে রান আউট গেইল। মাহমুদউল্লাহর থ্রোতে বোলিং প্রান্তে উইকেট ভাঙেন মোসাদ্দেক। ৬০ বলে ৪০ রান করেন গেইল।

এরপর বড় কোনো জুটি গড়তে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মিরাজ সাজঘরে পাঠান জেসন মোহাম্মদকে (১০)। মুস্তাফিজ ৩৬তম ওভারে পরপর দুই বলে আউট করেন হেটমায়ার  (৫২) ও রভম্যান পাওয়েলকে (০)। এরপর মাশরাফি ওয়েস্ট ইন্ডিজের লেজটা গুড়িয়ে দেন। মাশরাফির শিকার জেসন হোল্ডার (১৭), আন্দ্রে রাসেল (১৩) ও আশলে নার্স (৭)। শেষ দিকে ৫৯ রান যোগ করে আলজারি জোসেফ ও দেবেন্দ্র বিশু পরাজয়ের ব্যবধান কমান। দুজনের ব্যাট থেকে আসে ২৯ করে রান।

বল হাতে ৩৭ রানে মাশরাফি নেন ৪ উইকেট। ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো নড়াইল এক্সপ্রেস পেলেন ৪ উইকেট। দলে ফেরা মুস্তাফিজ ৩৫ রানে নেন ২ উইকেট।

সাদা পোশাকে ছিল না সাচ্ছন্দ্য, আত্মবিশ্বাস ছিল তলানিতে। লাল বলের ক্রিকেটে এলোমেলো লাগছিল গোটা শিবিরকে। মাশরাফির আগমণে রঙিন পোশাকে বদলে গেল পুরো শিবির। প্রস্তুতি ম্যাচে জয়ের পর মূল মঞ্চে অসাধারণ বাংলাদেশ। ক্যারিবীয়ান দ্বীপপুঞ্জে এ সফরে প্রথমবার হাসল সাকিব, মুশফিক, তামিমরা। হাসি ফুটল ক্রিকেট প্রেমিদের মুখেও। তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। এবার সিরিজ জয়ের অপেক্ষা।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুলাই ২০১৮/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়