ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জনে অনেক দূর যেতে হবে’

এনএ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪২, ১১ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জনে অনেক দূর যেতে হবে’

রাইজিংবিডি ডেস্ক : কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে আরো অনেক দূর যেতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশের দারিদ্রের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে নামিয়ে আনাকে তার সরকারের বৃহৎ সাফল্য আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নের এ ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে এবং গ্রামীণ জনপদের ভাগ্যবঞ্চিত জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে হবে।’

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের আওতায় একযোগে ২০ জেলার ৩৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের  উদ্বোধনকালে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি পাঁচ জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত থেকে স্থানীয় জনগণের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দরিদ্র সীমাকে ২১ ভাগে নামিয়ে এনে আমরা দারিদ্র হ্রাসে সাফল্য অর্জন করেছি। বাংলাদেশের মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা সকলের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছি, সবদিক থেকে মানুষ যেন ভালভাবে বাঁচতে পারে তার ব্যবস্থা করেছি।

দিন বদলের যাত্রা শুরু হয়েছে এবং তা এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৩ বছরের সংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধও বিজয়ের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন এবং সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে তিনি একটি যুদ্ধ বিধ্বস্থ প্রদেশকে দেশ হিসেবে গড়ে তুলে দেশের উন্নয়নের যাত্রা শুরু করেছিলেন।

‘কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীনতা বিরোধী চক্র যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয়কে মেনে নিতে পারেনি তাদের চক্রান্তে জাতির পিতাকে ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয় এবং বাঙালি জাতি তাদের জীবন মান উন্নত করার সকল সম্ভবনাকে হারিয়ে ফেলে। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সবসময় চেষ্টা করেছে জাতির পিতা যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন সেই স্বপ্ন পূরণ করা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার মানুষকে একটি উন্নত জীবন দান করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। যে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই তার সরকার একের পর এক জনমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

যে ৩৩ প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী সেগুলো হচ্ছে- সাতটি সেতু ও কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট ঘাটে ৫৫০ মিটার দীর্ঘ জেটি, নারী ও শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ৬ তলা বিশিষ্ট ৬টি নগর মাতৃসদন ভবন এবং ৩ তলা বিশিষ্ট ১০টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৯টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে উন্নয়নের কাজগুলি আমরা সম্পন্ন করেছি সেগুলি রক্ষণারেক্ষণ করা এবং সঠিকভাবে যেন ব্যবহার হয় সেদিকে বিশেষভাবে আপনারা যত্নবান হবেন সেটাই আমি চাই।

এলজিআরডি এবং সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দোকার মোশাররফ হোসেন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব ড. জাফর আহমেদ খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন।



কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট ঘাটে ৫৫০ মিটার দীর্ঘ জেটি নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে জেটি নির্মাণ হওয়ায় মানুষকে আর কাদা পানি মাড়িয়ে যেতে হবে না। সুন্দরভাবে জেটিতে নামতে পারবেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা বা পর্যটকরাও যাতায়াত করতে পারবেন।

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের প্রতি তার সরকারের দৃষ্টি রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন, এখানেই তিনি প্রথমবারের মত তার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৭০টি পরিবারকে পুণর্বাসিত করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার নারী ও শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ৬ তলা বিশিষ্ট ৬টি নগর মাতৃসদন ভবন এবং ৩ তলা বিশিষ্ট ১০ নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তুলেছে।

এগুলো হচ্ছে- গাজীপুর জেলা সদর একটি মাতৃসদন ও তিনতলা বিশিষ্ট নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কুষ্টিয়া জেলার পৌরসভা সদরে একটি ৬ তলা বিশিষ্ট মাতৃসদন ও তিনতলা বিশিষ্ট দুটি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রংপুর সিটি কর্পোরেশন একটি ৬ তলা বিশিষ্ট নগর মাতৃসদন ও তিনতলা বিশিষ্ট দুটি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৩টি তিন তলা বিশিষ্ট নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

সেতুগুলোর বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার মুকুন্দপুর থেকে কান্তজির বাজার পর্যন্ত ডেপা নদীর ওপর ২শ ২৮ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, জামালপুরে ব্রম্মপুত্র নদীর ওপর ৫৬০ মিটার দীর্ঘ শহীদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সেতু নির্মাণ করা হয়েঠে ফলে এর চারটি উপজেলার সাথে শেরপুরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

জামালপুর জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীরউত্তম সেতু নির্মাণ হয়েছে ফলে জেলার ইসলামপুর দেওয়ানগঞ্জ মহাসড়কের সঙ্গে বকশীগঞ্জ- কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি- রাজিপুর মহাসড়কের পাশাপাশি বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর স্থলবন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

তিনি বলেন, টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর-মির্জাপুর-মোকরা সড়কে ধলেশ্বরী নদীর ওপর ৫শ ২০ দশমিক ৬০ মিটার দীর্ঘ জননেত্রী শেখ হাসিনা সেতু নির্মিত হওয়ায় নাগরপুর ও সিরাজগঞ্জের চৌহালির সঙ্গে ঢাকার নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে, গাজিপুর জেলার শ্রীপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর ৩শ’ ১৫ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের ফলে পুরো কাপাসিয়া উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হল।

নড়াইল জেলার চিত্রা নদীর ওপর শেখ রাসেল সেতু নির্মিত হওয়ায় এটি গোপালগঞ্জ এবং যশোরের মধ্যে নড়াইল হয়ে যোগাযোগ স্থাপন করবে, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর ৬শ’ ৮৬ দশমিক ৭৫ মিটার দীর্ঘ শেখ লুৎফর রহমান সেতু নির্মাণের ফলে উপজেলার সাথে জেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ২০ কি.মি. হ্রাস পাবে পাশাপাশি বরিশাল ও শরিয়তপুর জেলার সাথেও যোগাযোগ দ্রুততর হবে।

টানা ১০ দশ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুফল তুলে ধরে সরকারের ধারাবাহিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এর ফলশ্রুতিতেই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে নওগাঁর রাণী নগরের এক মসজিদের ইমামের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তার সরকারের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পুনরোল্লেখ করে শান্তির ধর্ম ইসলামকে কেউ যেন আর বদনাম, দিতে না পারে সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকার জন্যও সকলের প্রতি আহবান জানান।

তথ্যসূত্র : বাসস



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ অক্টোবর ২০১৮/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়