ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে মারমেইড ইকো রিসোর্ট

ফেরদৌস জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ২৩ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈদের ছুটিতে মারমেইড ইকো রিসোর্ট

ফেরদৌস জামান : সাধারণত ইকো ট্যুরিজম বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো, একটি জায়গার প্রকৃতির ক্ষতি না করে পর্যটনকে এগিয়ে নেয়া। অর্থাৎ গাছপালা, নদী, পাহাড়-পর্বত বা সেখানকার জীববৈচিত্রের অনিষ্ট না ঘটিয়ে পরিবেশবান্ধব পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করা। বিষয়টি মাথায় রেখে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে মারমেইড ইকো রিসোর্ট। এটি এখন পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।

কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে মাত্র ষোল কিলোমিটার দূরে জেলেদের ছোট্ট একটি গ্রাম প্যাঁচার দ্বীপ। ঠিক তার পাশেই রেজুখাল নদী। এখানেই গড়ে উঠেছে মারমেইড। অবাক করা বিষয় হলো তাদের সীমানায় রয়েছে নিজস্ব সমুদ্র সৈকত। ইকো টুরিজমের কনসেপ্ট মাথায় রেখে নির্মিত এই রিসোর্ট একবার ঘুরে দেখলেই অনুধাবন করা সম্ভব কীভাবে প্রকৃতি আর নান্দনিকতার মিলন ঘটানো হয়েছে।



এখানে অতিথিদের থাকার ঘরগুলো বাঁশ ও ছনের ছাউনিতে তৈরি। পাশের গাছপালার উচ্চতা ছাড়িয়ে ঘর যেন উপরে উঠে না যায় সেই বিষয়টিও সচেতনভাবে খেয়াল রাখা হয়েছে। চারপাশের নৈসর্গিক দৃশ্যের সাথে মিল রেখে প্রায় প্রতিটি জায়গায় মাটি এবং সাধারণ কাঠ রঙের ব্যবহার করা হয়েছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন জিনিসপত্র যথাসম্ভব কম ব্যবহার করা হয়েছে।

এখানে রয়েছে ইয়োগা সেন্টার, স্পা, নৌ-ভ্রমণ ব্যবস্থা, কনফারেন্স রুম, মিনি থিয়েটার ইত্যাদি। আমাদের চারপাশে কত আগাছা লতাপাতা থাকে যা অবহেলায় নষ্ট হয়ে যায় অথবা উৎপাত ভেবে উপড়ে ফেলা হয় কিন্তু এখানকার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই লতাগুল্মও যেন রিসোর্টের অমূল্য সম্পদ। তারা যেন স্বাভাবিক নিয়মে বেড়ে উঠতে পারে সে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে উপযুক্ত পরিবেশ। রিসোর্টে কটেজ আছে প্রায় ত্রিশটি। আগত অতিথিরা যাতে সমুদ্র স্পর্শ করে আসা নির্মল বাতাস আর বর্ষায় বৃষ্টির ঝিরিঝিরি শব্দ পুরোপুরি উপভোগ করতে পারে সে জন্য কটেজের জানালা এবং দরজাগুলো বেশ বড় বড় করে তৈরি। কটেজের ভেতর নেই কৃত্রিম আলো। কেবল খয়েরি কাগজের ঠোঙার ভেতর মোমের মিটিমিটি আলোর ব্যবস্থা। দূর থেকে কেবলই ছোট-বড় কিছু কুটিরের সমাহার দেখালেও ভেতরের আয়োজন ভীষণ মুগ্ধকর। প্রতিটি কটেজের অভ্যন্তরে রয়েছে আধুনিক সমস্ত সুযোগ-সুবিধা। গোসলখানায় প্রবেশ করলে চোখে পড়বে সব প্রাকৃতিক জিনিসপত্র।

পিনপতন নীরবতা এখানকার সার্বক্ষণিক অনুষঙ্গ। নেই কোনো অযাচিত কোলাহল। নেই শব্দ দূষণ। একেবারেই শান্ত, স্নিগ্ধ আবহ। বিকেল বেলা রিসোর্টের সম্মুখে বাঁশের বেঞ্চে শরীর এলিয়ে বসা এক দারুণ অনুভূতি! এই সময় নৌ-ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। কটেজ বা বাংলোর সারি আর নারকেল গাছ ছাড়িয়ে অল্প হেঁটে গেলেই রেজু খাল। থেকে থেকে তাতে ভেসে যায় সাম্পান। দূরে অজানা চর। শত সন্তর্পণে পা রাখলেও মানুষের অস্তিত্ব টের পেয়ে মূহুর্তেই পালিয়ে যায় লাল কাঁকড়ার দল।



নির্জন সৈকতে প্রাণ ভরে বায়ু সেবন আর সূর্যাস্ত উপভোগ করার অনুভূতি অতিপ্রাকৃত বলেও মনে হতে পারে। ফেরার পর বোট ক্লাবের পাটাতনে বসলে সঙ্গ দেয় সামনের সমুদ্র, আকাশের চাঁদ অথবা লক্ষ কোটি তারা। গভীর রাত অবধি কাটিয়ে দেয়া যেতে পারে এখানকার আশ্চর্য মৌনতায়। এছাড়াও রিসোর্টের আশপাশে ঘুরে দেখতে চাইলে মানা নেই। নিকটেই রয়েছে স্থানীয় মন্দির, মাছের ছোট্ট বাজার। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ রয়েছে প্রশিক্ষিত একদল কর্মী বাহিনী।

কটেজ ভাড়া : রয়েছে একাধিক ক্যাটাগরির কটেজ ব্যবস্থা। ওয়ান বেডরুম ওয়াটার বাংলো ১৫০০-৩৫০০; ওয়ান বেডরুম সাথে লিভিংরুম ভিলা ৩০০০-৬০০০; ওয়ান বেডরুম স্টুডিও ভিলা ৪০০০-৬৫০০; দুই বেডরুম ভিলা ৪২৫০-৮০০০; আশ্রম ভিলা (প্রাইভেট বিচসহ) ৫০০০-১০০০০ এবং মিস মারমেইড বাংলো, মারমেইড অ্যান্ড হার সিস্টার ও মাড হাউজ প্রতিটি ১০০০০ টাকা এক দিন এক রাতের জন্য। এগুলো সবই হিল অ্যান্ড সি ভিউ। এছাড়াও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার মধ্যে রয়েছে, ফিশিং ৫০০-২০০০ প্রতি ঘণ্টা; সার্ফিং ৫০০-১৫০০ প্রতি ঘণ্টা (প্রশিক্ষকসহ); বিচ ভলিবল, মর্নিং বিচ ওয়াক, বারবিকিউ এবং গার্ডেন বারবিকিউ। ভাড়া মৌসুম ভেদে ওঠানামা করে।



যাওয়ার উপায় : বিমান, বাস অথবা ট্রেনে চট্টগ্রাম। সেখান থেকে বাসে তিনভাবেই কক্সবাজার যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে কক্সবাজার বাসে যেতে সময় লাগে দশ থেকে বারো ঘণ্টা। বিমানে পঞ্চাশ মিনিটের মতো। এসি, ননএসি দুই ধরণের বাস আছে। বাস ভেদে ভাড়া ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা। ঢাকা থেকে প্রতিদিনই বাস পাওয়া যায়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: সেন্টমার্টিন পরিবহন- ০১৭১১৩২১১৪৩, ০১৭১১৬৬৬১০৯

গ্রীণ লাইন পরিবহন- ০১৭৩০০৬০০৪, ০১৭৩০০৬০০১

সোহাগ পরিবহন- ০২৯৩১১১৭৭, ০১৭১৬৯৪২১৫৪

ঢাকা কমলাপুর থেকে চিটাগাং মেইল, তুর্ণানিশিথা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলীসহ একাধিক ট্রেন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বিমান সংস্থার মধ্যে রয়েছে:



বাংলাদেশ বিমান- ০২৮৯০১৬০০, ০২৮৯০১৭৩০-৪৪

নভো এয়ার- ০২৮৯৭১৮৯১-২, ০১৭৫৫৬৫৬৬৬০

ইউএস বাংলা- ০১৭৭৭৭৭৭৭৮৮, ০১৭৭৭৭৭৭৮৯৯

রিজেন্ট এয়ার- ০২৮৯৫৩০০৩

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ- ০২৮৯৩২৩৩৮, ০২৮৯৩১৭১২

যোগাযোগ

মারমেইড ইকো রিসোর্ট
রিজার্ভেশন অ্যান্ড ইনফো ৮৮০১৮৪১৪১৬৪৬৪-৯
ঢাকা অফিস: হাউজ-৩৩ (দ্বিতীয় তলা)
রোড-১১, বারিধারা, ঢাকা।
www.mermaidecoresort.com

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুন ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়