ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কাঞ্চনজঙ্ঘার সোনালী আলোয়

ইকরামুল হাসান শাকিল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৩, ২৮ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাঞ্চনজঙ্ঘার সোনালী আলোয়

ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, নেপাল

ইকরামুল হাসান শাকিল: সোয়া এগারোটার মধ্যে আমরা বিমান বন্দরে পৌঁছালাম। ভেতরে ঢুকে ইমিগ্রেশন সেরে অপেক্ষা করছি। ওয়েটিং রুমে বসে স্বচ্ছ কাঁচের ভেতর দিয়ে ছোট-বড় বিমান দেখছি। দেখেতে দেখতে বোর্ডিং-এর সময় হয়ে গেল। প্রথমে একটি বাংলাদেশ বিমানের বাসে করে বিমানের কাছে আমাদের নিয়ে এলো। খুব কাছ থেকে জীবনের প্রথম বিমান দেখছি। আনন্দে গা শিউরে উঠছে! বিমানের সিড়ির একটি দুটি তিনটি করে ধাপ পেরিয়ে উঠে এলাম বিমানের ভিতর। বিপ্লব ভাই, শামীম ভাই ও আমি একত্রে বসেছি। মুহিত ভাই, রিনি আপু ও ছায়াবিথী আপু একত্রে আমাদের সামনে বসেছেন। নূর ভাই আমাদের পেছনে।  আমার সিটটি জানালার পাশে হওয়ায় বাইরের সব কিছু দেখতে পাচ্ছি।

বিমান তার পর্যাপ্ত শক্তি সঞ্চিত করে রানওয়ে ধরে দৌড়াতে শুরু করল। এক সময় ছোট্ট একটা লাফ দিয়ে শূন্যে উড়াল দিলো। আমি জানালা দিয়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও করতে লাগলাম। এই প্রথম যান্ত্রিক শহর ঢাকাকে উপর থেকে দেখছি। একসময় অনেক উঁচুতে মেঘের উপরে চলে এলাম। ভাসছি। মেঘের উপরে ভাসছি। শরৎ শেষের মেঘ থোকায় থোকায় তুলার মতো ভাসছে। কী অপরূপ তার সৌন্দর্য! এমন আবেগি মুহূর্ত এই প্রথম। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। শুধু দু’চোখ ভরে দেখে যেতে হয়। মেঘগুলোও যেন তাদের রূপের অস্তিত্ব জাহির করছে। থোকায় থোকায় মেঘ তুলার মতো ভাসছে। উপর থেকে সেই মেঘগুলো দেখছি।

ঐ দেখা যাচ্ছে মেঘের উপর দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখর! কী সুন্দর! যেন মেঘের সাথে ভাসছে। এই প্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখছি। যদিও বিমানের ভেতর থেকে। আস্তে আস্তে হিমালয়ের সারিবদ্ধ পর্বতমালা চোখের সীমানায়। ওই তো দেখা যাচ্ছে এভারেস্ট। নেপালিরা এভারেস্টকে ‘সাগর মাতা’ বলে। সেই সাগর মাতাকে দেখছি। মেঘের সাগরে ভাসছে। চোখ আজ তৃপ্তিতে ভরে গেলো। 
 

রাতের খাবার, আনাতলিয়া, থামেল


আমাদের বহন করা বাংলাদেশ বিমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে এক ঘণ্টা দশ মিনিটের আকাশ পথ পাড়ি দিয়ে দুপুর ১.৪৮ মিনিটে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করল। নেপালের শীতল হাওয়া আমাদের গায়ে এসে স্বাগত জানালো। বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশন সেরে আমাদের ট্রাভেল ব্যাগ সংগ্রহ করে বাইরে এলাম। আমাদের এজেন্সী ‘ড্রিমার্স ডেসটিনেশন’-এর পক্ষ থেকে শেরপা গাইড দাকিপা শেরপা, ম্যানেজার সুমন শ্রেষ্ঠা ও পুরবা শেরপা গলায় কাথা (উত্তরীয়) পরিয়ে রিসিভ করল।

তারপর গাড়ি করে হোটেলে চলে এলাম। হোটেল ব্লু হরাইজন বেশ পরিপাটি গুছানো। নানান রঙের ফুল ফুটে আছে। দেখতে অনেকটা বাংলোবাড়ির মতো। হোটেল ম্যানেজার আমাদের রুম বুঝিয়ে দিলেন। কে কোন রুমে থাকবো তা মুহিত ভাই ঠিক করে দিলেন। দ্বিতীয় তলায় মুহিত ভাই ও বিপ্লব ভাই এক রুমে এবং পাশের অন্য রুমে রিনি আপু ও শয়লা আপু। নূর ভাই, শামীম ভাই ও আমার জায়গা হলো নিচ তলার একটি রুমে।
 


থামেলের একটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খাচ্ছি। নেপালের জনপ্রিয় খাবার মম এই প্রথম খাচ্ছি। মম দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের পুলি পিঠার মতো। ভেতরে মাংস থাকে। খেতে সুস্বাদু। খাবার শেষ করে আমাদের পর্বতারোহণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র  কেনাকাটা করতে একটি দোকানে এলাম। এই এক দোকান থেকেই আমাদের প্রায় অর্ধেক জিনিস কিনে ফেললাম। কেনাকাটা করতে করতে প্রায় নয়টা বেজে গেলো। আনাতলিয়া রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে গেলাম। এখানে নান রুটি, তন্দুরী চিকেন ও খাসির মাংস দিয়ে রাতের খাবার সেরে নিলাম।

হোটেলে ফিরে সবাই ফ্রেশ হয়ে হোটেলের ছাদে চলে এলাম। আকাশে পূর্ণচাঁদ। চাঁদের আলোয় থামেল এক স্বর্গীয় রূপ পেয়েছে। সারা রাত কেটে যাবে তবু যেন রাতের সৌন্দর্য দেখা শেষ হবে না। গান গেয়ে, গান শুনে, অনেক হাসাহাসি করে, চন্দ্রবিলাস করে, গল্প করে সময় কাটিয়ে দিলাম। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে সবাই সবার রুমে চলে এলাম। প্রত্যেক রুমেই ফ্রিজ, টিভি, সোফা, টেলিফোন ও আলমারি আছে। এসিও আছে। তবে শীতের কারণে তা আর চালু করতে হলো না। (চলবে)





রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুলাই ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়