ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মঙ্গলবারে মঙ্গলচণ্ডী

গাজী মুনছুর আজিজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ২০ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মঙ্গলবারে মঙ্গলচণ্ডী

গাজী মুনছুর আজিজ : সনাতনধর্মীরা বৈশাখের প্রথম মঙ্গলবার মিরপুর-গাবতলীর গৈদারটেকে একটি বটগাছের গোড়ায় মিলিত হন। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় মঙ্গলচণ্ডী পূজা। এ পূজাকে কেন্দ্র করে বসে মেলা। এক সকালে এই মেলায় হাজির হই আমি।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পঞ্জিকা মেনে সাধারণত পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেন সরকারিভাবে দেশে যেদিন পহেলা বৈশাখ পালিত হয় তার পরদিন। সেই হিসেবে তারা বৈশাখের প্রথম মঙ্গলবার এই পূজার আয়োজন করেন। সকাল থেকে শুরু হয় মেলা ও পূজার কার্যক্রম। যে বটগাছ ঘিরে আয়োজন সেই গাছটির বয়স কতো হবে তার সঠিক তথ্য পাওয়া কষ্টকর। তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল শত বছর ছাড়িয়ে গেছে বয়স। কেউ কেউ বলেন, কয়েকশ বছরও হতে পারে। পূজার আনুষ্ঠানিকতার হিসেবে বটগাছের গোড়ায় কেউ দুধ ঢালছেন, কেউ রাখছেন নানা পদের ফল। কেউ আবার বটগাছের কাণ্ড মালা দিয়ে মুড়িয়ে দিচ্ছেন। কেউবা ফুলের মালার বদলে নতুন কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দিচ্ছেন। অন্যদিকে গাছের গোড়ার এক কোণে বসে পুরোহিত মন্ত্র পাঠ করছেন। তার সামনে বসে আছেন পূণ্যার্থীরা। এভাবেই সম্পন্ন হয় মঙ্গলচণ্ডীর আনুষ্ঠানিকতা। পূজা শেষে পূণ্যার্থীরা মেলা ঘুরে বাড়ি ফেরেন।

 



স্থানীয়রা বলেন, একসময় হিন্দু ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এলাকা ছিল গৈদারটেক। তখন এলাকার বেশিরভাগ জায়গা ছিল খাল ও জলাশয়। বর্ষায় থইথই পানিতে দ্বীপের মতো জেগে থাকতো এখানকার একেকটি বাড়ি। পূজা-পার্বণ লেগেই থাকতো প্রতি বাড়িতে। পাকিস্তান আমল থেকে এখানে মুসলমান বসতি বাড়তে থাকে। আস্তে আস্তে ভরাট হতে থাকে জলাভূমি। আর সনাতনধর্মীরা চলে যেতে থাকেন অন্যত্র। এখন এই এলাকায় আদি সনাতনধর্মী পরিবার নেই বললেই চলে। তবে বছরের একটা দিন অনেকেই এখনও চলে আসেন গৈদারটেকের প্রাচীন বটতলায়। আনুষ্ঠানিক কোনো প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই এখানে মঙ্গলচণ্ডীর পূজার আয়োজন হয়। আশপাশের রাস্তায় বসে লোকজ পণ্যের মেলা। সবমিলিয়ে এ মেলা পরিণত হয় সার্বজনীন লোকজ উৎসবে।

বটগাছটির মতো মঙ্গলচণ্ডী পূজা ও মেলার বয়স ঠিক কতো তার সঠিক কোনো ইতিহাস এখানকার অনেক মানুষের জানা নেই। তবে কেউ কেউ ধারণা করেন, ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে পূজা ও মেলা বসছে। উত্তরাধিকারসূত্রে মঙ্গলচণ্ডী পূজার পৌরহিত্য করছেন মিরপুর কোর্টবাড়ীর তপন চক্রবর্তী। বয়স তার চল্লিশের কাছাকাছি। তিনি বলেন, গাবতলীর কোর্টবাড়ির ঠাকুরবাড়ির লোকেদের হাতেই এখানকার পূজার যাত্রা। ১৯৪০ সালের দিকে ঠাকুরবাড়ির জুরান ঠাকুর স্বপ্নাদিষ্ট হন, মা মঙ্গলচণ্ডী তাকে স্বপ্নযোগে গৈদারটেক বটতলায় পূজার আয়োজন করতে বলেন, তখন থেকেই শুরু হয় এই পূজা, সঙ্গে বসে মেলাও।

 



পুরান ঢাকা থেকে এই পূজা ও মেলায় এসেছেন মণিকা সরকার। তিনি বলেন, প্রতি বছরই বাবা-মা, ভাইবোনসহ এখানে আসি এবং মনের বাসনা পূরণের জন্য পূজা ও মানত করি। মিরপুর থেকে আসা সুমন কুমার বলেন, আগের বছর যে মানত করেছিলেন তা পূর্ণ হয়েছে। এ বিশ্বাস থেকেই প্রতি বছর এখানে আসি পরিবারের সবাই মিলে। গাবতলীর বাসস্ট্যান্ড থেকে গৈদারটেক বটতলার দূরত্ব হবে প্রায় দেড় কিলোমিটার। পথের দু’পাশেই বসেছে মেলা। মেলায় আসা পণ্যের মধ্যে শিশুদের খেলনা সামগ্রী বেশি। এছাড়া মিষ্টিসহ দেশীয় খাবারের দোকানও আছে। আরও আছে কাঠের আসবাব, বাঁশ-বেত, লোহা-পিতল, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, পুতুলসহ নানা লোকজপণ্য। আছে নাগরদোলাও।

মিষ্টি ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, ১০/১২ বছর ধরে নিয়মিত এ মেলায় আসি। স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলচণ্ডী মেলা এখন এলাকার সার্বজনীন একটি উৎসব। মেলায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব লোকেরই সমাগম ঘটে।

 



ছবি : লেখক



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ এপ্রিল ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়