ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৭ জুন ২০২৫ ||  আষাঢ় ৩ ১৪৩২

‘বৃক্ষরোপণের এখনই সময়’

শাহরিয়ার বেলাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৩, ১৫ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘বৃক্ষরোপণের এখনই সময়’

প্রকৃতিতে চলছে বর্ষাকাল। এই সময়ে যখন তখন অঝোর ধারায় ঝরতে থাকে বৃষ্টির ফোটা, যাকে বলে ইলশেগুঁড়ি। মেঘ হয়ে যায় নীল আকাশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এই সময়টা হলো বৃক্ষরোপণের একদম উপযুক্ত সময়। কারণ এ সময় গাছ তার প্রয়োজনীয় পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পেয়ে থাকে।

বৃক্ষ কেবল নিসর্গ প্রকৃতির শোভা নয়, মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনে বৃক্ষের ভূমিকা এত অপরিহার্য যে, বৃক্ষহীন পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। শুধু অর্থনীতিতে নয়, আবহাওয়া ও জলবায়ুসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনজ সম্পদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রাকৃতিক মহামারি থেকে দেশকে রক্ষা করতে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করতে হবে।

আমরা সবাই অবগত আছি, আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অধিক জরুরি হলো অক্সিজেন। আমরা প্রশ্বাসে দেহের ভেতর প্রবেশ করাই অক্সিজেন আর নিঃশ্বাসে ছেড়ে দেই কার্বন-ডাই-অক্সাইড নামক গ্যাস। ভীষণ জরুরি এই অক্সিজেন গ্যাস আমরা পাই বৃক্ষ বা গাছ থেকে। বৃক্ষ প্রতিনিয়ত আমাদের জন্য অক্সিজেন গ্যাস সরবরাহ করে। তাই আমরা যত বেশি বৃক্ষরোপণ করবো তত বেশি অক্সিজেন সরবরাহ হবে। এতে মানুষ সুস্থ-সবলভাবে বাঁচবে। আর পরিবেশ দূষণের হারও কিছুটা কমবে।

বিশেষজ্ঞ গবেষকদের মতে, বর্তমানে বিশ্বের বনভূমি উজাড় হতে হতে অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে বিশ্ব পরিবেশ এখন হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ মানুষের বসবাসের উপযোগী পৃথিবীর জন্য দরকার গাছপালা। কেবল বেঁচে থাকার অক্সিজেনই নয়, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায়ও পালন করে অপরিহার্য ভূমিকা। প্রস্বেদন ও বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বৃক্ষ আবহাওয়াকে বিশুদ্ধ রাখে, জলীয়বাষ্পের সাহায্যে বাতাসের আদ্রতা বাড়িয়ে বায়ুমণ্ডল শীতল রাখে। শুধু তাই নয়, বৃক্ষ মাটির উর্বরতা বাড়ায় এবং মাটির ক্ষয়রোধ করে।

ভারসাম্যমূলক প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য একটি দেশের অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা দরকার। সেখানে সরকারি হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ ১৭ শতাংশ। আমাদের দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে ঐ বনভূমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। গ্রাম বা শহরাঞ্চলে প্রতিনিয়তই নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ঘটনা হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে আবহাওয়ার উপর। ফলস্বরূপ অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খড়াসহ নানারকম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এছাড়াও দেশে নগরায়নের ফলে বহু এলাকা বৃক্ষ নিধন হয়ে পড়ছে। দেশের প্রধান প্রধান শহর পরিণত হয়েছে বৃক্ষহীন ইট-পাথরের দালানের স্তুপে। তাই সব সমস্যা, নগরের সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষাকল্পে একমাত্র উপযোগী বৃক্ষরোপণ। বাড়ির আঙিনায়, আনাচে কানাচে, সড়ক ও মহাসড়কের দু’পাশে, অনাবাদি ভূমিতে, খাল পুকুর ও নদীর পাড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে গাছ লাগিয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন।

আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমভাবে আমরা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালাতে পারি। নিজ নিজ উদ্যোগে আমরা বৃক্ষরোপণ করতে পারি। এছাড়াও বিভিন্ন এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, গ্রাম্য সংস্থাগুলো জনসাধারণকে পরিবারভিত্তিক বনায়নের কাজে সম্পৃক্ত করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে। সাধারণ জনগণকে যদি বিপন্ন পরিবেশের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করে বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করা যায়, তাহলে অনেকেই এ কাজে এগিয়ে আসবেন।

বৃক্ষরোপণ ও সামাজিক বনায়ন শুধু প্রাকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার একমাত্র উপায় তা নয়, এটি গরীব ও সাধারণ মানুষের অনেক চাহিদাই পূরণ করে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও দৃঢ় ও মজবুত করে।

প্রকৃতিকে সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলা যায় বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে। এক’দুজন মানুষ নয়, লক্ষ লক্ষ মানুষকে এ কাজে হাত মেলাতে হবে। আমরা যদি বেশি বেশি বৃক্ষরোপন করতে পারি, তাহলে আমাদের দেশ একদিন জীববৈচিত্র্যের আধারে পরিণত হবে। প্রকৃতিকে ধ্বংস নয়, আসুন প্রকৃতিকে সাজাই নতুন করে। আমাদের সবার উদ্যোগেই প্রকৃতি হয়ে উঠুক সবুজময়। আর সেই সবুজে আমাদের জীবন হবে নির্মল ও সুন্দর।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়